নীলমনি পর্ব ৩৫

0
115

#নীলমনি
#তোয়ামনি
#পর্বঃ৩৫
[কপি করা নিষেধ ]
নীলমনি ~৩৫
নিলয় মৌনোতার মাথার কাছে বসে রয়েছে। মেয়েটা কাল রাত থেকে পাগলামি করছে। কি হয়েছে কেনো এমন করছে কিছুই বুঝতে পারছে না। ও মৌনোতাকে রুমে আনার পর ও মৌনোতা ওর হাত শক্ত করে ধরে অস্বাভাবিক ভাবে কাপছিলো ফোপাছিলো। অনেক বোঝানোর পর মেয়েটা চোখ বুঝেছে। ও কপালে হাত দিয়ে মৌনোতার শরীরে তাপমাত্রা অনুভব করার চেষ্টা করে। আল্লাহ! জ্বর এসে গেছে। ও তাৎক্ষণিক উঠে বাথরুম থেকে মগের মধ্যে পানি নিয়ে আসে। বারান্দা থেকে গামছা নিয়ে আসে। মগের পানিতে ভিজিয়ে নিংরিয়ে ওর কপালে দেয়। মৌনোতা ঘুমের ঘরে অস্পষ্ট ভাবে কিছু বিরবির করছে। যা বোধগম্য হয়না নিলয়ের। ও দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবারো গামছা ভিজিয়ে ওর কপালে ধরে। নিলয় মৌনোতার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে মৌনোতার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়েটা সত্যি ওকে খুব ভালোবাসে। এতটাই ভালোবাসে ওকে হারানোর ভয়ে বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কেদছে। পাগলামি করছে। নিলয়ের ধ্যান ভাঙে টেবিলে রাখা ফোনের রিংটোনে। ও এক হাতে মৌনোতার হাত ধরে আরেক হাত দিয়ে ফোন আনে। নুহাশ কল করেছে।
‘তুমি কোথায় আছো? একটা প্রব্লেম হয়ে গেছে। তোমাকে বললাম কম্পনকে মেরে ফেলতে পারলে না। আমি যে মেয়েটাকে বিয়ে করেছি ওকে কম্পনের লোক ধরে নিয়ে গেছে। মেয়েটার মাধ্যমে যদি কম্পন আমাদের ধরে ফেলে’?
নিলয় ভ্রু বাকায়। কম্পনের লোক মানে। মেয়েটাকে তো ওর লোকদের ধরে আনার কথা। তাহলে কি কাজ টা পারে নাই। নিলয় শান্ত কন্ঠে নুহাশকে বলে
‘দেখছি আমি’।
নিলয় নুহাশের ফোন কাটে। মৌনোতার কপালের উপর থেকে গামছাটা নিয়ে আবার ভিজিয়ে ওর কপালে দেয়। তারপর আসিফের নাম্বারে কল দেয়।
‘মেয়েটাকে ধরতে আনতে পারছ নাই’?
‘বা*ল তুর এত ক্ষনে ফোন ব্যাক করার সময় হলো? আমি তোকে কাল থেকে কল করতেছি। কই ছিলি’?
‘যা বলছি তার উত্তর দে’।
‘হুম ধরে আনছি। তাই তো তোকে কল করছি কাল রাতে থেকে। কিন্তু তোর তো কোন পাত্তাই নাই। তারপর টেক্স করলাম তার ও রিপ্লাই দিলি না’।
নিলয় আর কোনো কথা না শুনে কল কেটে দেয়। ফোন ছুরে ফেলে মৌনোতার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। গামছা সরিয়ে মগে রাখে। মেয়েটাকে তো ও ভালোবাসতে চাইনি তাহলে কি ভাবে ভালোবাসে ফেললো! যে সম্পর্কর পূর্নতা ভাগ্যে থাকে না, সেই সম্পর্কের স্মৃতি মায়া সব চেয়ে দীর্ঘ হয়। ও উঠে মগ নিয়ে বাথরুমে চলে যায়। পানি ফালিয়ে গামছা ধুয়ে বারান্দায় মেলে দিয়ে আসে।
ঘরির কাটা আট্টা পার হয়ে গেছে অনেক আগে। ও রেডি হয়ে নিচে নামে। বুলবুলিকে বলে আম্মু যেনো খাবার নিয়ে মৌনোতা কে খাইয়ে দেয়। ওর শরীর ভালো না।
বারোটার দিকে ঘুম ভাঙে মৌনোতার। মাথাটা অসহ্য ব্যাথা করছে। ও দুই আঙুল দিয়ে কপালে ম্যাসাজ করে। পররক্ষনে নিলয়ের কথা মনে পড়তে ধরপরিয়ে উঠে বসে। আশে পাশে তাকিয়ে নিলয় কে খুজতে থাকে। তবে শরীর ভরহিন অনুভব করে।
‘কোথায় আপনি’?
মৌনোতা দূর্বল কন্ঠে নিলয় ডাকে। কিন্তু কোনো উত্তর পায় না। ওর বুক চিন চিন করে ব্যাথা অনুভব হয়। কাল রাতে আসিফ যে মেয়ের কথা বলছিলো সেই মেয়ের কাছে জাইনি তো। ওর গলা চেপে আসে। বুক ফেটে কান্না গুলো বের হতে চাই। কিন্তু এক ফোটা পানি ও চোখ দিয়ে বের হয় না। ও এক দৃষ্টিতে বেল্কনির দিকে তাকিয়ে থাকে। পুরোনো স্মৃতি মনে হতেই ঢুকরে কেডে উঠে। ও আবার ফিরে পেতে চাই দিন গুলা। যখন নিলয় কথায় কথায় ওর মাথায় বন্দুক ধরতো। ভালবাসার জন্য জোরাজুরি করতো। ‘কেনো আমি সেই দিন আমি ওনাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম? কেনো আমি সেই দিন ওনাকে
ভালোবাসিনি? কেনো উনি আজ শুধু আমার স্মৃতি? ও আল্লাহ! প্লিজ ওনার মনে আমার জন্য আরেকবার ভালোবাসার জান্ম দিও। প্লিজ প্লিজ। আমি ওনাকে ভালোবাসি’! ( কাদিতে কাদতে মাথা নিচু করে ফেলে মৌনোতা)
কাধে হাত পড়তেই মাথা তুলে ঘার ঘুরিয়ে তাকায় মৌনোতা। কাকুলি চৌধুরীর মুখ দেখে ওর কান্না আরো বেরে যায়। ও ঘুরে কাকুলি চৌধুরীর বুকে হামলে পড়ে কাদিতে আরম্ভ করে।
‘মৌনোতা। মা কি হয়েছে তর’।
মৌনোতা কোনো উত্তর দেয় না। হাউ মাউ করে কাদতে থাকে।
কাকুলি চৌধুরী খাব্রে যায়৷ উনি মৌনোতার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে
‘শরীর খারাপ লাগছে? মা। কি হয়েছে? নিলয় বকেছে? আরে বলবি তো’?
‘আ…আম্মু ( ফোপায়ে ফোপাতে) তোমার ছেলে। তোমার ছেলে আমাকে আর ভালোবাসে না’।
কাকুলি চৌধুরী অবাক হয়। দুইজন আবারো ঝগড়া করেছে।
‘দেখি তাই বলে আমার মেয়েটা কাদবে। ও আসুক আজ বাড়ি। আজ ওর এক দিন কি আমার এক দিন। আমার মেয়ের চোখে পানি এনেছে ও। এত বড় সাহস। জ্বরে তো গা পুরে যাচ্ছে। আর কাদিস না মা। দেখ তোর জন্য কখন খাবার এনেছি। তুই উঠছিলা না বলে ডাকিনি। তারাতাড়ি খেয়ে ঔষধ খেয়ে নে’।
‘আ…’
‘আর কথা না। চুপ চাপ খেয়ে নে’।
কাকুলি চৌধুরী মৌনোতার আর কথা না শুনে জোর খাবার নিয়ে আসে ওকে খাইয়ে দেয়। তার পর ঔষধ খাইয়ে দেয়। বলে ঘুম আসতে এখন।
নিলয়ের সামনে হাত, চোখ, মুখ বাধা মেয়েটির চোখ খুলে দিতে বলে নিলয়। রিমন খুলিয়ে দিয়ে ওর পাশে বসে। মেয়েটি চিৎকার করতে থাকে। ছোটার জন্য ছটফট করতে থাকে। নিলয় শান্ত কন্ঠে বলে
‘নাম কি তোমার’?
‘আমাকে কেনো বেধেছেন? কি ক্ষতি করেছি আমি আপনাদের? ছাড়ুন আমাকে। কেউ বাচাউ আমাকে’?
নিলয় দুই পাশে মাথা নাড়িয়ে বলে
‘উহুম। চিৎকার করো না। এখানে তোমার চিৎকার কেউ শুনতে পাবে না। যা বলছি তার উত্তর দেও’।
‘আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নয়। ছেড়ে দিন আমাকে। প্লিজ। আমি কাউকে কিছু বলবো না। দয়া করে ছেড়েদিন আমাকে’।
‘নাম কি তোমার? বাসা কই? নুহাশের সাথে কি ভাবে পরিচয়’?
নুহাশের নাম শুনে মেয়েটি ভয়ে কুক্রে যায়। আমতা আমতা করে বলে
‘ওই..ওই জানুয়ারের নাম মেবেন না। ও মানুষ রুপি পশু’।
বলে মেয়েটি ঠোঁট ভেঙে কাদতে আরম্ভ করে। নিলয় ভ্রু বাকিয়ে বলে
‘কেনো কি করেছে তোমার সাথে? ও তো তোমার হাসবেন্ড’?
‘একদম বাজে কথা বলবেন না। ও আমার হাসবেন্ড না। ও.. ওই লোকটা একটা অমানুষ’।
নিলয় ফোন বের করে মৌনোতার একটা ছবি দেখিয়ে বলে
‘মেয়েটাকে চেনো’?
মেয়েটার বুক ধক করে উঠে। অবিশ্বাস্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে ছবিটার দিকে। কাপা কাপা কন্ঠে বলে
”বনু….বনু…আমার বনু। কোথায় আছে আমার বোন। আপনি ওর ছবি কই পেলেন’?
নিলয় ফোন টেবিলের উপরে রেখে বলে
‘চেনো’?
‘চেনো মানে ও আমার বোন। ও তো পালিয়ে গেছে। কিন্তু আপনি ওকে কই পেলেন’?
নিলয় ডানে বামে মাথা কাত করে বলে
‘স্বেচ্ছায় পালিয়ে আসি নি। পালিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। সুযোগ বুঝে শেষ করে দেওয়া হবে। যদি তোমার বোনকে বাচাতে চাও তাহলে সব খুলে বলো। তোমার সাথে যা যা হয়েছে সব বলো। তা না হলে তোমার শেষ’।
ইশার আজান পরেছে। কাকুলি চৌধুরী নামাজ আদায় করার জন্য রুমে চলে গেছে। সে সারাক্ষণ ওর কাছে ছিলো। মৌনোতা শোয়া অবস্থায় বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে। বিছানা থেকে আকাশ দেখা যায়। নিলয়ের সাথে ওর আজ দেখা হয়নি।
‘মনিমালা’।
নিলয়ের কন্ঠ স্বর পেয়ে ও চমকে তাকায়। ধরপরিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করে নিলয় বাধা দেয়।
‘শুয়ে থাকো। শরীর তো খারাপ’।
মৌনোতা নিলয়ের হাত ধরে বলে
‘কই ছিলেন আপনি সারা দিন? একবার ও তো দেখতে পেলাম না’।
নিলয় স্মিত হেসে বলে
‘ভয় পেও না। মৃত্যুর দুয়ার ব্যাতিত পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাই না কেনো, যত দূরেই যাই না কেনো, দিন শেষ আমি তোমার কাছেই ফিরবো’।
মৌনোতার চোখ থেকে আন্দঅশ্রু বেয়ে নামে। ও হাসি দীর্ঘ করে বলে
‘বেল্কনিতে যাবেন’?
‘তোমার শরীর তো ভালো না। কি ভাবে যাবে’?
‘বলছি না এক দিন আপনার গান শুনলে আমার সহ রোগ পালিয়ে যায়। আমি হান শুনতে চাই’।
‘খেয়েছো কিছু’?
‘হুম। আপনি আগে চলেন’।
চলবে…
®তোয়ামনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here