নীলমনি পর্ব ২৯

0
110

#নীলমনি
#তোয়ামনি
[কপি করা নিষেধ]
নীলমনি ~২৯
বিছায় শুয়ে সিলিংয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরিয়া। এখন তার শুয়ে বসে থাকাটায় কাজ। পা এখন মোটামুটি ভালো। মৌনোতা সব সময় ওর কাছে থাকে। আরিয়ার যেনো মন না খারাপ হয় সব সময় সেই খেয়াল রাখে। তবু ও ওর মন খারাপ হয়ে। সত্যি কি আর সে কখনো হাটতে পারবে না। রিমনের সাথে ও মুক্ত আকাশের নিচে খোলা মাঠে হাটতে চায়। সবই কি তার সপ্ন হয়ে রয়ে যাবে। ওর চোখের কোন বেয়ে পানি নামে।
দরজা লাগানোর শব্দ শুনে দৃষ্টি ঘুরিয়ে সেই দিকে তাকায়। কয়েকটি লাল গোলাপ আর একটা বেলি ফুলের মালা হাতে রিমনকে দেখতে পায়। রিমনকে দেখে ওর মনের রুক্ষ মরুভূমিতে একপশলা বৃষ্টি নামে। আরিয়া হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের পানি মুছে। রিমন কাছে এসে ফুল গুলো ড্রেসিংটেবিলের উপরে রেখে আরিয়াকে বসতে সাহায্য করে।
‘কেমন লাগছে এখন’?
‘হুম আগের থেকে বেটার’।
‘কখন আসছেন আপনি ‘?
‘এইতো একটু আগে’।
রিমন আরিয়ার দুই গাল দুই হাত দিয়ে ধরে বলে
‘আবার কেনো কান্না করছো? আমি মানা করছি না কান্না করতে। কেনো কান্না করছো’?
আরিয়া মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলে। রিমন ওকে বুকের সাথে চেপে ধরে।
‘এইভাবে কেদো না। আমার সহ্য হয় না। আমি আছি তো’।
আরিয়া ফুপিয়ে উঠে বলে
‘আমি..আমি সত্যি কি আর হাটতে পারবো না’?
‘কে বলেছে পারবে না। আল্লাহ একদিন সব ঠিক করে দেবে। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো’।
রিমন ওর চোখ মুছে দেয়।
‘এইভাবে ম্যা ম্যা করে কাদলে কিন্তু আর ভালোবাসবো না। হাসো বলছি। হাসো। তোমার ওই বাকা দাতটি না দেখলে আমার ক্লান্তি দূর হয়না’।
রিমনের কথা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে আরিয়া।
‘এইতো আমার লক্ষি বউ। এই ভাবে সবসময় মুখটা হাসি হাসি রাখবে। মুচকি হাসবে। দাত বের করে হাসবে। পারলে হাহ হাহ করে হাসবে। তবু ও হাসবে। তোমার হাসি মুখ দেখলে আমার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তাই দয়া করে আমি যখন তোমার কাছে থাকবো তখন হাসি থামাবেনা। বুজতে পারছেন ম্যাডাম’।
রিমনের কথা শুনে না হেসে থাকতে পারে না আরিয়া। রিমন ড্রেসিং টেবিল থেকে বেলি ফুলের মালাটা নিয়ে আরিয়া পেছনে বসে। খোল চুল গুলো হাতের মুঠোয় পেচিয়ে খোপা করে।
‘আরে কি করছেন’।
‘চুপ। কথা না’।
খোপা করা শেষ হলে বেলি ফুলের মালাটা আরিয়া খোপায় পেচিয়ে দেয়। আরিয়া চুপ চাও স্বামীর কান্ড অনুভব করে। একটা গোলাপ ও গুজে দেয় খোপায়। ছোট আয়নাটি আরিয়ার সামনে ধরে বলে
‘দেখেনতো ম্যাডাম কেমন লাগছে’।
আরিয়া ঘার ঘুরিয়ে রিমনকে দেখে বলে
‘আপনি সাজিয়েছেন আর সুন্দর লাগবে না এইটা কোনো কথা’।
‘বাহা তাহলে তো আমি তোমাকে এখন থেকে প্রতিদিন সাজাবো। আচ্ছা এখন চলো’। (রিমন উঠতে উঠতে বলে)
আরিয়া অবাক হয়।
‘কোথায় যাবো’?
‘তোমাকে নিয়ে হাটতে বের হবো। বিকেলের ওই স্নিগ্ধ আলোটাকে দুই জনে গায়ে মাখবো। মুক্ত বাতাসে দুইজন প্রান খুলে শ্বাস নিবো। চলো তারাতাড়ি’।
আরিয়া কিছু বলার আগেই রিমন আরিয়াকে পাজা কোলে তোলে নেয়।
‘আরে আরে কি করছেন’।
রিমন আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা ওকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দেয়। বাকি গোলাপ গুলো এনে ওর গাতে দেয়। সিড়ি দিয়ে নামার সময় রিমন মৌনোতাকে হুইল চেয়ারটা নামিয়ে দিতে বলে। আর ও আরিয়াকে পাজা কোলে করে নামায়। রিমন মৌনোতাকে ওদের সঙ্গে যেতে বলে। তবে মৌনোতা যেতে অস্বীকার করে। ওরা দুইজন যাক। নিজেদের মধ্যে সময় কাটাক।
মৌনোতা ঘরে এসে বেল্কনিতে যায়। এই জায়গাটা ওর সব চেয়ে প্রিয়। যে দিন থেকে এই বাড়িতে এসেছে এই জায়াগায় ও এক অনেরকম শান্তি খুজে পায়। খুব ভাল লাগে। আসরের আজান কানে যেতেই নামাজের জন্য রুমে চলে আসে।
রিমন আরিয়া হাটতে হাটতে স্টিডিয়ামের মাঠে চলে আসে। বিশাল বড় মাঠ। সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়ানো। মাঠের মাঝে মাঝে গোল হয়ে আড্ডা দিচ্ছে মানুষ। মাঠের পাশ দিয়ে বসার ব্রেঞ্চ। রিমন একটা খালি ব্রেঞ্চ দেখে আরিয়া কে নিয়ে সেই দিকে যায়।
হুইল চেয়ার পাশে রেখে রিমন আরিয়া কে ব্রেঞ্চে বসিয়ে দেয়।
‘এইভাবে বসেতে কষ্ট হবে না তো’?
আরিয়া ডানে বামে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ বসেতে কষ্ট হবে না।
আরিয়া রিমনের ডান হাত ধরে কাধে মাথা রাখে। তেজহীন সূর্যের আলো গাছের পাতার ফাকে ফাকে এসে ওদের ছুয়ে দিচ্ছে। পাতা গুলো মৃদু বাতাসে দুলছে। পাতার ছায়া গুলো হেলে দুলে ওদের গায়ে পড়ছে।
‘কিছু খাবে’?
‘না’।
একটা নাম না জানা ফুলের মিষ্টি ঘ্রান ভেসে আসছে। আরিয়া মাথা উঁচিয়ে বলে
‘এইটা কি ফুলের ঘ্রান? আর কই থেকে আসছে’।
রিমন আশে পাশে তাকিয়ে তেমন কোনো ফুলের গাছ দেখতে পায় না।
‘কই কোথাও তো কোনো ফুলের গাছ দেখতে পাচ্ছি না।
‘তাহলে এই মিষ্টি ঘ্রান কত্তথেকে আসছে’?
রিমন মাথার উপর তাকিয়ে দেখে ছোট ছোট সবুজ পাতার মাঝে সাদা সাদা ফুল। রিমন অঙুলিইশারা করে আরিয়া কে উপরে তাকাতে বলে।
‘আল্লাহ কত বড় গাছ। কত ফুল ফুটেছে দেখছেন’?
‘ওয়েট’।
রিমন আরিয়ার হাত সরিয়ে গাছের কাছে চলে যায়। আরিয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। রিমন মূহুর্তের মধ্যেই বিশাল গাছের উপরে উঠে যায়। আরিয়া পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকে। লোকটা করে কি! ও তো ফুল গুলো চাই ও নি। এর মাঝেই গাছে উঠে পড়লো।
ছোট এক ডাল ফুল পেড়ে নিচে নেমে আসে। ফুলগুলো নিয়ে এসে আরিয়ার সামনে হাটু মুড়ে বসে ওর দিকে এগিয়ে দেয়।
‘লাভ ইউ মাই ফুলের রানী’।
আরিয়া একগাল হেসে ফুলগুলো নেই।
‘লাভ ইউ ঠু বানর রাজা’।
বানর রাজা নামটি শুনে হো হো হেসে উঠে রিমন।
‘আরে আমি গ্রামের ছেলে। এই রকম ছোট ছোট গাছে ওঠা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না। এর থেকে বিশাল বিশাল গাছে ওঠার রেকর্ড আছে আমার বুঝলে’।
আরিয়া গাছটি এক পলক দেখে বলে
‘এইটা আপনার কাছে ছোট গাছ’!
‘তা নয়তো কি। এইটুকু’। (হাতের ইশারায় দেখায়)
‘ম্যাডাম ওইযে দেখেন বাদামওলা। আপনি বসেন আমি বাদাম নিয়ে আসছে’।
কথা শেষ করেই রিমন চলে যায়। আরিয়া ঠোঁটে আকা হাসি নিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ সরাতেই ওর নজরে পড়ে ওর পা। হাসি হাসি মুখটা নিমেষেই বিষাদে ছেয়ে যায়।
রিমন বাদাম নিয়ে এসে দেখে আরিয়া মুখ গোমড়া করে বসে আছে। বাদাম গুলো ওর হাতে দিয়ে বলে
‘আবার কি হলো ম্যাডাম’।
আরিয়া হাসার চেষ্টা করে বলে
‘কিছু না। আমরা ওই বাড়িতে কবে যাবো’?
রিমন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
‘তুমি আরেকটু সুস্থ হও। তার পরই যাবো। ওকে’।
‘আম্মু মেনে নেবে’? মিনমিনে বলে আরিয়া।
রিমন লম্বা করে গেসে বলে
‘নেবে না কেনো। রাকা কে যে ভাবে ভালোবাসে আম্মু তোমাকে ওর থেকে বেশি ভালবাসবে। আর আমি যেখানে তোমার সাথে আছি সেখানে ভয় কসের’।
আরিয়া রিমনের কাধে শুয়ে সস্থির শ্বাস ফেলে। রিমন একটা বাদামের খোসা ছাড়িয়ে আরিয়ার মুখে দেয়।
‘জানেন ছোট বেলায় আব্বু খোসা ছাড়িয়ে দিতো। আব্বু বাইরে চলে যাওয়ার পর ভাইয়া দিতো। এমন কি ভাইয়া এখনো দেয়। ভাইয়া আমাকে খুব ভালবাসে।’।
‘হুম তুমি খুব লাকি’।
‘হুম। আল্লাহ আমাকে সব দিয়েছে। আল্লাহকে লাক্ষো কোটি শুকরিয়া। আপনার মত একটা স্বামী পেয়েছি’।
মৌনোতা চুলে বেনি করছিলো। ও নিজেকে আয়নায় দেখতে দেখতে ভাবে
বাবা সত্যি ওকে ভুলে গেলো। একটাবার ওকে খোজার জন্য কোনো স্টেপ নিলো না। ও চোখ বুজে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
‘মনিমালা…..’।
আতকে উঠে ও। নিলয় ওর কাধের কাছে মুখ নিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। মৌনোতা আয়নায় দৃষ্টি মিলিয়ে বলে
‘হুম’।
‘দেও বাকিটুকু আমি করি দেই’।
‘না লাগবে না’।
মৌনোতা দ্রুত বেনি শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। নিলয়ের মুখোমুখি দাড়াতেই বাইরে থেকে বুলবুলির কন্ঠ পাওয়া যায়।
‘ভাইজান বাইরে আহেন। দাদুর পার্টনার কেমন জানি করতাছে’।
চলবে…
®তোয়ামনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here