#নীলমনি
#তোয়ামনি
কপি করা নিষেধ]
নীলমনি ~২৮
রিমনের কথায় কাজি নিয়ে আসে নিলয়। বিয়ে নাকি আজই হবে কথাটি শুনে আরিয়া কিঞ্চিৎ অবাক হয়। এত তারাতাড়ি বিয়ে!! ওরা দুইজন রেজিস্ট্রি পেপারে সাইনকরে। তারপর বাকি টুকু ধর্মীয় নিয়মে শেষ করে। কাজি চলে যায়। কাকুলি চৌধুরী মেয়েকে জরিয়ে ধরে কান্না করে। তার সেই ছোট মেয়েটি আজ কত বড় হয়ে গেছে। সম্ভবত কাল পর্শুর মধ্যে আরিয়া কে রিলিজ করে দেবে।
রাত প্রায় একটার কাছাকাছি। খুব ব্যাস্ততার সাথে কোনো কিছুর হিসাব মিলাছে নুহাশ। আজ বিদেশ থেকে ড্রাগস আসার কথা। তার এই ব্যাবসা অনেক আগে থেকেই। তবে দুই তিন বছর অফ ছিলো। ইন্সপেক্টর রাজ্জাক তার ড্রাগসের গাড়ি ধরে ফেলেছিলো। মোড়ে মোড়ে সে সেই যাত্রায় বেচে ফিরে ছিলো। একটুর জন্য তার নামটা ফাসে নি। এইবার সে আর কোনো রিস্ক নেবে না। ইন্সপেক্টরের মেয়ে কে বিদেশিদের হাত্ব তুলে দিবে। নিলামে উঠাবে। তার এক এসিস্টেন্ট দ্রুত পায়ে ভেতরে ঢুকে।
‘স্যার স্যার বিশাল প্রব্লেম হয়ে গেছে’।
নুহাশ ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলে ‘কি’?
‘ স্যার ড্রাগসের গাড়ি কম্পনের টিম ধরে ফেলেছে। গাড়িতে থাকা লোক আর ড্রাইবারকে খুজছে। রকি আমাকে কল করেছিলো। ওরা কালিবাড়ির ওই ফিকে গা ঢাকা দিয়েছে’।
কম্পনের নাম শুনে শরীরে আগুন ধরে যায় নুহাশের। আক্রমণকারীকে চিনলে সে যতই আড়াল থেকে আঘাত করুক তাকে ধরা যায়। কিন্তু এই শত্রুর নামই সে শুনে আসছে কখনো দেখেনি। নুহাশ শান্ত কন্ঠে বলে
‘কালিবাড়িতে লোক পাঠা। ওরা যেখানেই আছে ওদের মেরে নদীতে ভাসিয়ে দে। আমি আর কোনো রিস্ক নিতে চাই না। আর শোন….’
‘ স্যার দুইজন লোক এসেছে’।
নুহাশের আরেক এসিস্ট্যান্ট এসে বলে। নুহাশ কপালে ভাজ ফেলে বলে
‘ভেতরে পাঠিয়ে দে’।
নিলয় আর আসিফ এক সাথে ভেতরে আসে। নিলয় কে দেখে নুহাশ বাকা হেসে হ্যান্ডশেক করে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোক গুলোকে চেয়ার দিতে বলে বাইরে যেতে বলে। নুহাশ বসে চেয়ারের দিকে ইয়াশা করে বসেতে বলে।
‘কি খবর তাহলে? সব ঠিকঠাক তো’? (নিলয় প্রশ্ন করে)
‘এতক্ষন তো সব ঠিকই ছিলো। কম্পন নাকি আজ আসা দুই গাড়ি ধরে ফেলেছে’। (নুহাশ উত্তর দেয়)।
‘তোমার নাম বলেছে’?
নুহাশ ডানে বামে মাথা নাড়ায়।
‘অহ তাহলে তো পবলেম নেই’। (নিলয় ভ্রু বাকিয়ে বলে)
‘তবে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে’।
‘হুম অবশ্যই’।
নিলয় পকেট থেকে একটা সেক বার করে দিয়ে বলে
‘ আজ আসি। আর মেয়েকি একটাই নিলামে উঠাবে? নাকি আরো আছে’?
‘চিন্তা ছিলো। কিন্তু কম্পন যে ভাবে বাগড়া দিচ্ছে একটু তো ভয়ে আসি। ওকে না শেষ কড়া পর্যন্ত মেয়ে পাচার সম্ভব হবে না’।
নিলয় বাকা হেসে বলে
‘আমি ওকে মারার প্লান করছি। তুমি মেয়ের তলাশি চালাও’।
নুহাশ ও বাকা হেসে সাই জানায়। নিলয় উঠতেই নুহাশ পেছন থেকে বলে
‘টাকার কাছে নারী কিছুই না। তুমি আবার ওকে ভালোবেসে ফেলো না। মানে বোঝাতে চাইছি…..’।
নিলয় হাত উচিয়ে বলে
‘বুঝতে পেরেছি। চিন্তা করো না। ওকে সময় মত তোমার কাছে পৌছিয়ে দিবো। আজ আসি’।
নুহাশ লম্বা করে হেসে বিদায় জানায়। নিলয় আসিফ নাইরে যেতেই নুহাশ শয়তানি হাসি দেয়। ‘বোকা’।
বেল্কনিতে বসে রয়েছে মৌনোতা। ঘড়ির কাটা আড়ায়টা পার হয়েছে। নিলয় এখনো বাসায় আসে নাই। ভিলনটার জন্য ও চিন্তা করতে চাই না। ও না চাইতেই ও ভিলনটার শূন্যটা ওকে পোড়ায়। ভিলেনটার কথা গুলো ওর কর্ণকুহরে সপ্নাবিষ্টের মত সব সময় বাজতে থাকে। ভিলনটাকি সত্যি ওকে ভালোবাসে?! ভিলনটা ওকে ভালোবাসে কিনা জানে না তবে ও ভিলনটার প্রতি কিছু একটা অনুভব করে। এই অনুভব ও আগে কখনো করে নি। মানুষের জীবনে প্রথম প্রেম সব সময় ভুল মানুষের সাথে হয়। তার প্রমান তো ও পেয়েছেই। ও দ্বিতীয় বারের মত প্রেমে পড়তে চাই। তবে সেটা ওর স্বামীর প্রেমে।
পর্শু ওরা বাসায় ফিরেছে। নিলয় রুমে এসে দেখে মৌনোতা বেল্কনিতে। ও ভ্রু বাকায়। মেয়েটা এখনো ঘুম আসে নি। ও ফ্রেস হয়ে বেল্কনিতে যায়। রাতের মৃদু বাতাস সারা অঙ্গ জুরিয়ে দেয়। নিলয় পেছন থেকে শান্ত কন্ঠে ডাকে।
‘মনিমালা…’!
কানে মধুর সেই শব্দ আসতেই মনে এক ঝাক প্রজাপতি উড়ে যায়। অজান্তেই মুচকি হাসে মৌনোতা। ঘার ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়। নিলয়ের সুন্দর শান্ত মুখশ্রী দেখে অশান্ত মন শান্ত হয়ে যায় মৌনোতার।
‘এখনো ঘুম আসো নি কেনো’?
‘আপনি এত দেড়ি করলেন কেনো কোথায় ছিলেন’?
নিলয়ের চোখ গোল গোল হয়ে যায়। ও বিশ্বাস করতে পারছে না মৌনোতা ওর প্রতিক্ষায় জেগে রয়েছে। নিলয়ের চাওনি দেখে মৌনোতা কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। ভিলেনটা কি ওর মনের কথা বুঝে ফেলেছে। না ও মরেই যাবে যদি কখনো নিলয় সেই কথা জানতে পারে। মৌনোতা ঠোক গিলে আমতা আমতা করে বলে
‘না মানে এত দিন হস্পিটলে ছিলেন। অনেক ধকল গেছে। এখন তো আপনার কিছুদিন রেস্ট করা উচিত। সেই জন্য….’।
‘সেটা তো তোমার ও প্রয়োজন। তা না করে আমার জন্য অপেক্ষা করছো?!!
‘কে বলেছে আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। আমি এমনি বসে ছিলাম। ঘুম আসছে না তাই’।
মৌনোতা দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। নিলয় ওর মনের অস্থিরতা টের পেয়ে মুচকি হাসে। মৌনোতা ঘুরে রুমে আসতে গেলে পেছন থেকে হাত টেনে ধরে নিলয়। মৌনোতা কেপে উঠে। নিশ্চয়ই এইবার বন্দুকটা ওর মাথায় ধরে বলবে আমার জন্য কেনো অপেক্ষা করছিলে? মৌনোতার শরীরের কাপুনি আরো বারে। আল্লাহ আজ ওকে সত্যি মেরে ফেলবে।
‘মৌনোতা’।
মৌনোতার কাপুনি বন্ধ হয়ে যায়। ও জানে নিলয় সিরিয়াস কিছু বলবে। ও ঘুরে তাকায়। নিলয় হাত ধরা অবস্থায় শান্ত কন্ঠে বলে
‘তোমার জীবনে প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় কি ছিলো সেটা আমি জানতে চাই না। কখনো জানতেও চাইবো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। যদি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো, তাহলে আমি বলবো তুমি আমার প্রেমে পড়। কথা দিচ্ছি ঠকবে না’।
মৌনোতা ঠোক গিলে। নিলয়ের কন্ঠ স্বাভাবিক। মৌনোতা এক পা এগোয়। কিছু বলতে চায়। তবে বলতে পারে। কোনো এক জড়তা ওকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জরিড়ে আছে। ও হাত ছাড়িয়ে বলে
‘কোনো দিন ও না। আমি আপনার মট ভিলেনের প্রেমে কখনো পরবো না। অসভ্য লোক’।
নিলয় ডানে বামে মাথা কাত করে বলে
‘পড়বে পড়বে ঠিকই পড়বে। মাথায় বন্দুকটা ধরলেই পড়বে’।
মৌনোতা মুখ বাকায়৷ এইতো ওকে কোনো এক অনুভুতির সাগরে ফালিয়ে দিচ্ছিলো। এখন আবার নাটক করছে। এই লোকটার কোনো কথায় সত্যি না।। ও আর কথা না বাড়িয়ে হনহন করে বিছানায় গিয়ে কম্ফোর্ট গাইয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে। নিলয় মুচকি হেসে বাইরের দিকে তাকায়। দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে। ও জানে না ওদের ভবিতব্য কি। তবে ওর প্রান গেলেও মৌনোতা কে ও ছাড়বে না।
চলবে
®তোয়ামনি