নীলমনি পর্ব ২৬

0
101

#নীলমনি
#তোয়ামনি
নীলমনি ~২৬
আরিয়া গাড়ি পার্ক করার জায়গায় গিয়ে গাড়ি থেকে ওর ব্যাগ নিয়ে আসে। মৌনোতা রাস্তার ওইপাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আরিয়া ডানে বামে তাকিয়ে রাস্তা পার হতে থাকে। হঠাৎ ওর ব্যাগ সাইড থেকে টেনে ধরে। আরিয়া ঘুরে তাকাতেই লোকটা ব্যাগ জোরে টান দেয় ধরে দৌড় দেয়। ব্যাগ নিতে না পারলে ও আরিয়া কে খুব জোরে ধাক্কা দেয়। আরিয়া টাল সামলাতে না পেরে উবু হয়ে রাস্তার মাঝে পরে যায়। পরার সাথে সাথে আরিয়ার কপাল ফেটে রক্ত পরতে থাকে। রাস্তায় গাড়ি চলছিলো অনবরত। আশে পাশের মানুষ আরিয়েকে ধরার আগেই একটা বাইক আরিয়ার দুই পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। আরিয়া জোরে আর্তনাদ করে উঠে। সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তীব্র গতিতে থাকা বাইকটি একটু দূরে গিয়ে বাইক সহ বাইকের মালিক পরে যায়।
আশে পাশের মানুষ আরিয়া কে ধরতে যায়। চোখের সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ংকর দৃশ্যটি দেখে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যায় মৌনোতা। জোরে আর্তচিৎকার দিয়ে উঠে। “আরি…….য়া…………….”!
ও এক ছুটে আরিয়ার কাছে যায়। মূহুর্তে জায়গাটা মানুষে মানুষে গিজ গিজ করে উঠে।মৌনোতা আরিয়ার রক্তাত মাথাটা নিজের কোলে উঠিয়ে কান্নামিশিত কন্ঠে ওকে ডাকিতে থাকে।
‘আরিয়া আরিয়া ওঠো। তোমার কিছু হয় নি। আরিয়া। এই ভাবে শুয়ে থেকো না। আরিয়া আরিয়া’।
মৌনোতা আরিয়াকে বুকে জরিয়ে কান্না করতে থাকে। আশে পাশের মানুষ বলে উনাকে তারাতাড়ি হাসপাতালে নিতে। মৌনোতা বলে গাড়ি পার্কের জায়গায় আমাদের গাড়ি পার্ক করা আছে কেউ একটু ওনাকে নিয়ে আসেন।
‘আরিয়া ওঠো প্লিজ। আরিয়া আরিয়া আরিয়া…..’।
গাড়ি আসতেই ডাইভার, মৌনোতা আর আসে পাশের মানুষ গুলো আরিয়াকে গাড়িতে তুলতে সাহায্য করে। কেউ একজন আবার আরিয়ার ফোন ব্যাগ তুলে দেয়।
‘আরিতা তোমার কিছু হবে না। আরিয়া কথা বলো আমার সাথে। আরিয়া আরিয়া’।
মৌনোতা শাড়ির আচল দিয়ে আরিয়ার কপাল প্যাচিয়ে দেয়। যাতে রক্ত পরা কমে। পা থেকে রক্ত পরছে। মৌনোতা দিশা না পেয়ে ওকে জরিয়ে ধরে কাদতে থাকে।
মৌনোতা আরিয়ার কেভিনের সামনে বসে কান্না করছে। কিছুক্ষন আগে আরিয়াকে নিয়ে ও পৌছিয়েছে। পাশে থাকা আরিয়ার ফোন বেজে উঠে। মৌনোতা চোখ বুঝে সেই দিকে তাকায়। ডিপ্রেশনের জন্য কাউকে কল দিতেও ভুলে গেছে। মৌনোতা চোখ মুছে ফোনটি ধরে। ও পাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠ শুনতে পায়।
‘ হ্যা আরিয়া কই তোমরা?
মৌনোতা কান্না করে দেয়।
‘ভাইয়া আমি মৌনোতা। আরিয়াকে নিয়ে হস্পিটালে এসেছি। ও… ও একছিডেন্ট হয়েছে’।
কথাটি বলে ঝরঝর করে চোখের পানি ফেলে মৌনোতা। ওপাশে রিমন বলে
‘কি…কোন হাসপাতালে আসেন আপনারা? আর আরিয়া ও ঠিক আছে তো’?
‘ভাইয়া আমরা পপুলারে আছি। আপনি ওনাকে সাথে করে তারাতাড়ি নিয়ে আসেন’।
রিমন দ্রুত ফোন কেটে দেয়। মৌনোতা খুযে খুজে কাকুলি চৌধুরীর নাম্বার বের করে। তাকে কল দেয়।
কাকুলি চৌধুরী কল ধরলে মৌনোতা সব খুলে বলে।
মৌনোতা ফোন রেখে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। কিছুক্ষনের মধ্যে নিলয় এসে পৌছায়। আরিয়ার ফোনে কল দিলে মৌনোতা মুকলেস কে বলে নিলয়কে এখানে নিয়ে আসতে। মৌনোতা আরিয়ার কেভিনের দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আর চোখের পানি ফেলছিলো। নিলয় ওর পাশে দাঁড়িয়ে ডাকে
‘মৌনোতা’।
মৌনোতা পেছন ফিরে নিলয় কে দেখতে পেয়ে ও বুকে হামলে পড়ে। ওর বুকে শুয়ে পিঠের শার্টের খামছে ধরে জোরে কাদতে থাকে। নিলয় ওকে দুই হাত দিয়ে ঝাপটে ধরে এক হাত দিয়ে মাথা থেকে পিঠ পর্যন্ত বুলাতে থাকে।
‘কান্না করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।
মৌনোতার কান্না আরো বেরে যায়।
‘আমি আমি (ফোপাতে ফোপাতে) ওকে বাচাতে পারলাম না। সরি। ওর ওর (ফোপাতে ফোপাতে) মাথা দিয়ে ওনেক রক্ত পরছিলো। ওর ওর (ফোপাতে ফোপাতে) পা থেকে রক্ত পরছিলো’।
ও আরো শক্ত করে নিলয়ের পিঠের শার্ট মুষ্টি করে ধরে।
‘মনিমালা কান্না করো না আরিয়া ঠিক হয়ে যাবে’।
রিমন আসতেই মৌনোতা নিলয় দুই দিকে ছিটকে যায়। মৌনোতা চোখ মুছতে থাকে। ইসসস আবেগেয় আপ্লুত হয়ে পাব্লিক প্লেসে কি ছি ছি।
রিমন নিলয়ের দুই বাহু ধরে বলে
‘দোস্ত দোস্ত আরিয়া ঠিক আছে তো। ওর কিছু হবে না তো’।
রিমন নিলয় কে ধরে কেদে দেয়।
নিলয় ওকে সামলে নিয়ে বলে
‘আরে কিছু হবে না। তুই এত চিন্তা করিস না’।
‘দোস্ত ওর কিছু হলে আমি আমি শেষ হয়ে যাবো’।
‘আমি বলছি তো কিছু হবে না। তুই নিজেকে সামলা’।
কাকুলি শেফালি বাচ্চু চৌধুরী এসেছে। কাকুলি চৌধুরী কেদেই যাচ্ছে। শেফালি মৌনোতা কেউ থামাতে পারছে না। রিমন গুম মেরে বসে রয়েছে। মনে হচ্ছে মৃত কোনো ব্যাক্তি কে বসিয়ে রাখা হয়েছে। শ্বাস নিচ্ছে কিনা সেটা বোঝাও দায়। ডাক্তার বলেছে আরিয়া সুস্থ হয়ে যাবে। তবে নিযের পায়ে আর কখনো হাটতে পারবি কিনা সেটা নিয়ে দন্দে আছেন তারা। তবে তারা ৯০% নিশ্চিত হয়েছে যে আরিয়া আর কখনো হাটতে পারবে না। বাকি ১০% বিভিন্ন পরিক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হবে।
মৌনোতা রিমনের পাশে এসে বসে। ওর গলা দিয়া কথা বের হচ্ছে না। ও কি বলে শান্তনা দেবে রিমনকে তা ওর জানা নেই। তবু ও ডাকে।
‘ভাইয়া’।
রিমন কোনো সাড়া দেয় না।
‘ভাইয়া চিন্তা কইরেন না আরিয়া..আরিয়া ঠিক হয়ে যাবে’।
রিমন মৃদু হেসে সিলিং এ চোখ রেখেই বলে
‘ভাবি। ওর পা নষ্ট হয়েছে তাতে কি। আমার পা তো আছে। বাকি পথ টুকু না হয় ও আমার পা দিয়েই হাটবে’।
রিমনের কথা শুনে ঝরঝর করে চোখের পানি ফেলে মৌনোতা। ফোপাতে ফোপাতে বলে
‘এক দম এই গুলা ভাবেন না। ও ও ঠিক হয়ে যাবে। আর নিজের পায়ে হেটে আপনার কাছে আসবে’।
কাকুলি চৌধুরী মৌনোতার কাছে ছুটে আসে। ওকে ধরে বলে
‘তুমি আমার মেয়েটাকে বাচাতে পারলে না। আমার মেয়েটা নাকি আর হাটতে পারবে না। তুমি কেন ওরে ধরলা না’।
মৌনোতা কাকুলিকে কে ধরে কান্না করে। শিউলি এসে কাকুলিকে ধরে।
‘এত কান্না করো না ভাবি। আরিয়া ঠিক হয়ে যাবে’।
কাকুলির অবস্থা খারাপ দেখে নিলয় মৌনোতা কে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। সাথে শিউলি ও চলে এসেছে। আরিয়ার কাছে নিলয় রিমন বাচ্চু চৌধুরী আর তোফাজ্জল থাকবে। মৌনোতা বাসায় এসে কাকুলি চৌধুরীকে জোর করে খাবার খাইয়ে ঘুম পারিয়েছে। তার পর নিজে ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে। ওর খেতে ইচ্ছে করছে না তাই শুয়ে পরে। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই মনে পরে নিলয় খেয়েছে কিনা। যদিও সবার মনের অবস্থা খারাপ তবু ও সবাইকে তো ঠিক থাকতে হবে। কিন্তু ওর কাছে তো ফোন নেই কল করবে কি ভাবে। কাকুলি চৌধুরীর তো ফোন আছে ওনার টা দিয়ে করা যাক। ও আর কিছু না ভেবে নিচে যায়। রান্না ঘর থেকে বুলবুলি ছুটে এসে বলে
‘ভাবি তোমার নিগা কতক্ষন ধইরা বইয়া রইছি খাইহা না তুমি’?
‘না আমি খাবো না। তুমি খেয়ে নেও ‘।
‘কই যাইতাছো তুমি’?
‘আম্মুর রুমে। একটা কল করবো’।
‘কারে কল করবা? আমার ফোন আছে তুমি চাইলে ফুন করবার পারো’।
মৌনোতা আনমনে কিছু ভেবে বলে
‘ তোমার ভাইয়ার কাছে কল করবো। নাম্বার আছে’?
বুলবুলি মাথা নাড়ায়। ও আরেক ছুটে ওর ফোন নিয়ে আসে।
মৌনোতা নিলয় কে ফোন করে।
‘হুম বল। বাসায় কোনো সমস্যা হইছে’?
মৌনোতা গলা ঝেরে বলে
‘আ….আমি..মৌনোতা’।
‘হুম বলো। বাসায় কিছু হয়েছে’?
‘না বাসায় কিছু হয় নাই’।
‘তাহলে’?
মৌনোতা নিজের মধ্যে তিব্র জড়তা টের পেলো। ওর হেজিটেজ লাগছে। কি দরকার এই ভিলেনটার খোজ নেওয়ার।
‘কি হলো’?
‘না মানে আপনি কি কিছু খেয়েছেন? সবাই মিলে কিছু খেয়ে নিয়েন সেটা বলার জন্য কল করেছি। আচ্ছা রাখি আপনি খেয়ে নিয়েন’।
মৌনোতা দ্রুত কল কেটে দেয়। এই বুঝি ওর প্রানটা বের হয়ে যাবে। ও বার কয়েক শ্বাস নিয়ে বুলবুলিকে ফোন দিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।
চলবে…
®তোয়ামনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here