নীলমনি পর্ব ২৪

0
61

#নীলমনি
#তোয়ামনি
#পর্ব২৪
নীলমনি ~২৪
আরিয়া বেল্কনিতে বসে রয়েছে। সামনে শুক্রবার ওদের বিয়ে। শুধু বিয়ে পরিয়ে নিয়ে যাবে। কালাম চৌধুরী দেশে আসার পর বড় করে অনুষ্ঠান হবে। নিজের পছন্দের মানুষকে সারাজীবনের মত নিজের করে পাবে। কতটা ভাগ্যবতী ও। সেই কথাই ভাবছে। মৌনোতা এসে আরিয়া কে ডাকে।
‘কি করছো’।
আরিয়া ভাবনার সূত গুটিয়ে রেখে মৌনোতার দিকে তাকায়।
‘কিছু না ভাবি। আসো’।
মৌনোতা আরিয়ার পাশে এসে বসে।
‘কি ভাবছো’?
‘তেমন কিছু না। ভাবি একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো’?
‘হুম করো’।
‘এত দিন হয়ে গেলো তোমাদের বাসা থেকে কেউ এখনো আসলো না কেনো’?
আরিয়া জিগাস্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে মৌনোতার দিকে। মৌনোতা একটু বিচলিত হলেও নিজেকে সামলে নেই। দীর্ঘ এক শ্বাস নিয়ে বলে
‘আসবে না।
‘কেনো’?
মৌনোতা জোরপূর্বক মুচকি হেসে বলে
‘এমনি’।
মৌনোতা আর কিছু বলার সাহস পায় না। নিলয় বারন করেছে কিছু বলতে। সময় হলে ও নিজেই ওকে দিয়ে আসবে। আরিয়া মৌনোতার খারাপ লাগা টের পেয়ে বলে
‘বাদ দেও। তুমি ভাইয়ার সাথে হ্যাপি থাকলে আর কি চাই। তোমাকে তো একটা কথা বলাই হয়নি। জানো ভাইয়া আমাদের কি ভাবে মিল করিয়েছে’?
মৌনোতা ডানে বামে মাথা নাড়ায়।
‘আমি নিজে ও তোমার মত সারপ্রাইজ হয়ে গেছি। তোমার ভাইয়া আমাকে আগে থেকে কিছুই বলিনি’।
আরিয়া রিমনের সব কথা খুলে বলে। মৌনোতা আরিয়া এক সাথে হাসে।
‘তোমার ভাইয়া আর কিছু পারুক বা না পারুক নাটক খুব ভালো করতে পারে’।
ভিলেনটার কথা মনে পরতেই গা জ্বলে উঠে মৌনোতার। অসভ্য একটা লোক।
‘আচ্ছা তোমাদের পরিচয়টা কি ভাবে হয়েছিলো’?
রিমনের কথা উঠতেই বুকের মাঝে শিহরন বয়ে যায় আরিয়ার।
‘আমাদের সামনা সামনি বা ফোনে কখনো কোনো ভাবে পরিচয় হয়নি। তবে ভাইয়ার সাথে যখন আসতো অনাকে লুকিয়ে দেখতাম। কনো একটা ভালো লাগা কাজ করতো। যে দিন তুমি বললে আমার বিয়ে সেই দিন বুকের মাঝে কেমন যেনো করছিলো। অনার কথা মনে হচ্ছিলো। তখন বুঝলাম আমি অনাকে ভালোবাসি। কিন্তু ভাইয়া কে বলার বা অনাকে বলার সাহস আমার ছিলো না। জানিনা কি ভাবে ভাইয়া বুঝতে পেরেছিলো’।
আরিয়া মৌনোতার কোলে মাথা রেখে বলে
‘জানো ভাবি আমি অনেক লাকি এই রকম একটা ভাই পেয়ে। আমার ধারনার ও বাইরে ছিল ভাইয়া আমাকে এত বড় একটা গিফট দিবে’।
মৌনোতা আরিয়ার মাথায় বিলি কাটে দেয়। মনে মনে ভাবে
অসভ্য লোকটা ওর সাথে যেমন ব্যাবহারই করুক বোনকে খুব ভালোবাসে। বোনকে খুশি রাখার জন্য তার পছন্দের মানুষর হাতে তুলে দিলো। সত্যি এমন ভাই পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
আরিয়া মৌনোতার কোল থেকে উঠে বলে
‘ভাবি চলো কিছু একটা বানাই’।
‘কি বানাবে’?
‘চলো দেখি ফ্রিজে কি কি আছে। তার পর দেখি কি বানানো যায়’।
‘আচ্ছা’।
নিলয়ের আজ একটা প্রোগ্রাম ছিলো। প্রোগ্রাম শেষ করে গাড়িতে উঠে নিজেকে হেলিয়ে দিয়েছে সিটের সাথে। অনেক টায়ার্ড লাগছে। ডাইভার কে খুব স্পিডে গাড়ি ড্রাইব করতে বলে ও চোখ বুঝে। চোখ বুজতে না বুঝতেই ফোনের রিং বেজে উঠে। বিরক্তিতে কপালে ভাজ ফেলে ফোন উঠায়। নুহাশের নাম্বার দেখে ভ্রু বাকায়।
‘হুম বলো’।
‘নিলয়। একটা প্রব্লেম হয়ে গেছে।
‘কি’?
‘ভাই কম্পনের টিম আমার গাড়ি ধরে ফেলছে। যে গাড়িতে বিভিন্ন বেদেশি ড্রাগস ছিলো। যদি ভুল করে কেউ আমার নামটা বলে দেয়’?
নিলয় শয়তানি হাসি দিয়ে বলে
‘কিছু হবে না। আমি আছি তো। তুমি এত প্রেসার নিচ্ছো কেনো।
‘তুমি ভেবে বলছো তো। ভাই দেখো আমার নামটা একবার বলে দিলে শেষ আমি।’?
‘হুম। আমার উপর ট্রাস্ট রাখো। ওকে বায়। আমি একটু বিজি আছি’।
নিলয় আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ফোন রেখে দেয়।
রাত সারে এগারোটা। সবাই জার জার মত খেয়ে রুমে গেছে। মৌনোতা রুমে এসে দেখে নিলয় শুয়ে ফোন স্কান করছে। ও আর চোখে একবার দেখে। মনে মনে বিরবির করে অসভ্য লোক একটা। মৌনোতা চুল খুলে আয়নার সামনে বসে। নিলয় গুন গুন করে উঠে
‘বেদের ছেলে ইসরাক আমার কথা দিয়েছে
আসি আসি বলে ইসরাক ফাকি দিয়েছে’।
মৌনোতা দাতে দাত চেপে পেছন ফিরে তাকায়। তবে কিছু বলে না। নিলয় আর চোখে মৌনোতাকে দেখে আবারো গুন গুন করে উঠে। মৌনোতা চিরুনি ফেলে বাঘিনির মত তেরে আসে। নিলয় সামনে এসে দুই কোমোরে হাত দিয়ে বলে
‘সমস্যা কি আপনার ‘?
নিলয় অবুজ শিশুর মত তাকিয়ে বলে
‘আমি আবার কি করলাম’?
‘কি কিরলেন মানে। কি বলছেন এইসব। কখন থেকে আজে বাজে কথা শুরু করছেন’?
‘কোনটা আজে বাজে কথা? সত্যি কথাই তো বলাম’।
‘আপনাকে এত সত্য কথা বলতে কে বলছে? আরেকটা বার এই সব বলে দেখেন। অসভ্য লোক ‘।
মৌনোতা চোখ গরম করে ফোসতে ফোসতে বারান্দায় চলে যায়। এই ভাবে বলার কি আছে। অসভ্য ভিলেন। মনে মনে হাজার বার গালি দেয়। বারান্দায় মৃদু বাতাস বইছে। ওর কপালের উপর থেকে চুল গুলা উড়তে থাকে। নিলয় মৌনোতার রাগের মাত্রা দেখে শয়তানি হাসি দেয়। ও ফোন বিছনায় রেখে ধীর পায়ে হেটে মৌনোতার পেছনে দাঁড়ায়। দুই হাত দিয়ে মৌনোতার মাথার চুল লেপটে নিয়ে। গুন গুন করতে করতে বেনি গাথতে থাকে। মৌনোতা প্রথমে কেপে উঠে পর পরি অবাক হয়। ঘার সামান্য ঘুরিয়ে রাগমিশ্রিত কন্ঠে বলে
‘কি করছেন আপনি’।
“ভালোবাসবো, বাসবোরে, বন্ধু,
তোমায় যতনে।
আমার মনের ঘরে চান্দের আলো
চুইয়া চুইয়া পড়ে….
পুষে রাখবো, রাখবো রে বন্ধু….
তোমায়….যতনে….”!
গান গাইতে গাইতে মৌনোতার লম্বা চুলে বেনে শেষ করে নিলয়। তবে বেনিটা বেশি শক্ত হয়নি। বেনি মৌনোতার ডান কাধ দিয়ে সামনে দেয়। তার পর ও বাম কাধে থুতনি ঠেকায়। মৌনোতা চোখ বন্ধ করে ফেলে। নিমেষেই ওর রাগ অভিমান সব দূর হয়ে যায়। তবে মিনমিনে বলে
‘আমি কি আপনাকে বলছি বেনি করে দিতে৷ আমি একাই পারতাম’।
‘তোমাকে রাগিয়ে আমি যে কত শান্তি পায় তা যদি বুঝতে তাহলে আর রাগ করতে না মনি…মালা’।
মৌনোতা ঠোক গিলে বলে
‘কি..কি বলতে চাইছেন’?
‘রাগলে তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে। তোমার ওই অগ্নিভোরা দৃষ্টি, রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ যেনো এক স্নিগ্ধ পরন্ত বিকেল’।
‘আপনি এত মিষ্টি কথা বলেন দেখেই এত মেয়ে পটাতে পারেন’। মুখ বাকিয়ে বলে মৌনোতা।
‘আমি তোমাকে বন্দি করে রেখেছি তাই না। তোমার অনেক খারাপ লাগে। চিন্তা করো না আমি তোমাকে খুব তারাতাড়ি মুক্তি দেবো। আই প্রোমিস’।
মৌনোতা চুপ করে থাকে। বুকে হালকা ব্যাথা অনুভব করে। ও তো চাই নিলয়কে ছেড়ে যেতে। তাহলে ওর এই কথায় ওর এমন লাগছে কেনো। মৌনোতা চুপ করে থাকে। নিলয় বলে ছাদে যাবে মনিমালা। চলো হেটে আসি।
‘এত রাতে’?
‘তাতে কি’।
নিলয় আর কোনো কথা বলার সুযোগ দেয় না। মৌনোতার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। মৌনোতা নিলয়ের দিকে তাকিয়েই থাকে।
মাঝ রাত। নিলয় মৌনোতা ছাদের গিয়ে পৌছায় মৌনোতার একটু ভয় হচ্ছে তবু ও ওর ভালো লাগছে। মাথার উপর অর্ধ ডোবা চাঁদ। লক্ষ লক্ষ নক্ষত্ররাজি। মৃদু বাতাস। কি সুন্দর যে দৃশ্য। মৌনোতার চোখ প্রান জরিয়ে এলো। কিন্তু বুক ধক ধক করছে এই অসভ্য লোকটা যদি শুট করে দেয়। নিলয় আকাশের থেকে চোখ সরিয়ে মৌনোতার দিকে তাকায়। কি সুন্দর স্নিগ্ধ মুখ। নিলয় শয়তানি হাসি দিয়ে ভাবে বউটা কে একটু জালানো যাক।
‘কখনো এই ভাবে ছাদে এসেছো’?
মৌনোতা ঢোক গিলে বলে
‘না। আমি রাতে কার সাথে ছাদে ঘুরবো’।
‘কেন তোমার বয়ফ্রেন্ডর সাথে’।
মৌনোতা রাগে নিলয়ের উরুতে কিল দেয়।
‘কখন থেকে আপনি আজে বাজে কথা শুরু করছেন। আমি ওর সাথে রাতের বেলা ছাদে ঘুরবো কেনো। শয়তান লোক। অসভ্য লোক’।
‘এই ভাবে কেউ মারে। আর একটু হলে শ্বাস আটকে যেত আমার’।
নিলয় বুকে হাত দিয়ে বলে।
‘হুম ভালো হতো। অসভ্য ভিলেন’।
মৌনোতা দাতে দাত চেপে কথাটি বলে ঘুরে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য। নিলয় ওর হাত টেনে ধরে। মৌনোতা রাগে ফোসতে ফোসতে ওর দিকে ঘুরে তাকায়।
‘হাত ছাড়ুন। আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলবো। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে না তার সাথেই কথা বলবো। তার সাথে ছাদে ঘুরবো। সরে যান আপনি’।
নিলয় স্বশব্দে হেসে উঠে মৌনোতার রাগ দেখে। নিলয়ের হাসি মৌনোতাকে আরো কয়েক দফা রাগিয়ে দেয়।
‘একদম দাত বের করে হাসবেন না। ছাড়ুন ছাড়ুন বলছি’।
নিলয় মৌনোতা কে এক টানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। দুই হাত দিয়ে কোমড় চেপে ধরে। তারপর মৌনোতার কপাল ঠোঁট দিয়ে ছুয়ে দেয় নিলয়। পাথরের মত শান্ত হয়ে হয়ে যায় মৌনোতা। মূহুর্তের মধ্যেই হওয়া ঘটনায় হতবম্ভ হয়ে যায় ও। অবুজ শিশুর মত অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে নিলয়ে দিকে। নিলয় শান্ত কন্ঠে বলে
‘যদি জেতে পারো যাউ। আমি আটকাচ্ছি কোথায়’।
মৌনোতা বাক্রুদ্ধ। ও নিলয়র দিকে তাকিয়ে আছে তো তাকিয়েই আছে। নিলয় শয়তানি হাসি দিয়ে হাতের বাধন আরো শক্ত করে। তারপর মাথা হালকা কাত করে মৌনোতার ঠোঁটের দিকে ওর ঠোঁট আনতে থাকে। নিলয়ের মনের অভিলাষ টের পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে মৌনোতা। শ্বাস উতপ্ত হতে থাকে। নিস্তব্ধ পরিবেশ। বাতাসের দরুন মৌনোতা কেপে কেপে উঠছে। নিলয় ওর ঠোঁট মৌনোতার ঠোঁটের কাছে আনতেই নিলয়ের শ্বাস ওর মুখে ছড়িয়ে পরে। মৌনোতার শরীর আরো শিরশির করতে থাকে। পরক্ষণেই নিলয় বলে উঠে
‘তওবা তওবা অন্যের গার্লফ্রেন্ডর সাথে আমি’।
নিলয় দ্রুত ছেড়ে দেয়। মৌনোতা ওর ঘটনায় কিঞ্চিৎ অবাক হয়। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে নিলয়ের দিকে। নিলয় শয়তানি হাসি দিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। মৌনোতা ঘোর থেকে বের হয়। নিলয়ের শয়তানির বুঝে মৌনোতা দ্রুত পায়ে ওর কাছে যায়। ওর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে
,’অন্যের গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করলে দোষ হয় না আর চুমু খেলে দোষ’।
নিলয় ডানে বামে মাথা কাত করে। তার পর এক পা মৌনোতার দিকে এগিয়ে মাথা ওর দিকে ঝুকে বলে
‘খেতে চাও চুমু’?
মৌনোতা অপ্রস্তুত হয়ে পরে। নিজের অজান্তে কি বলে ফেলেছে। লজ্জায় লাল হয়ে যায় ও। ছুটে ছাদ থেকে নিজের ঘরের দিকে যায়। ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মলিন হাসে নিলয়। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
‘তোমাকে কোনো কিছুর বিনিময়ে আমি ছারতে পারবো না মনি মালা….’।
চলবে…
®তোয়ামনি
(কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here