নীলমনি পর্ব ২৩

0
47

#নীলমনি
#তোয়ামনি
#পর্ব২৩
নীলমনি ~২৩
আরিয়া রিমনের বিয়ে নিয়ে বড়রা সবাই কথা বলছে। রিমন আরিয়া মৌনোতা এক পাশে বসে রয়েছে। রাকা বুলবুলির দেখা নেই। রিমন আরিয়া মৌনোতা কেউ কোনো কথা বলছে না। মৌনোতা ভাবে হয়তো ও বসে রয়েছে বলে ওরা লজ্জা পাচ্ছে। ওদের নিজেদের মধ্যে কথা বলা দরকার। মৌনোতা আরিয়ার কানে কানে বলল
‘তোমরা নিজেদের মধে কথা বলো আমি আসছি’।
‘কোথায় যাবে’?
‘এত এখানেই। তোমরা কথা বলো’।
মৌনোতা উঠে চলে যায়। দূরে রোহান হিয়া ছুটাছুটি করছে। মৌনোতা সেই দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। একটু দূরে চোখে পরতেই দেখে একটা পুকুর। পুকুরটির আশে পাশে অনেক রকমের গাছ। উপর থেকে পুকুরের পানি পর্যন্ত লম্বা সিড়ি। মৌনোতা ধীর পায়ে হেটে সেই দিকে যায়।
রিমন এক দৃষ্টিতে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়া শাড়ির কুচির উপর দুই হাত রেখে এক হাত দিনে অন্য হাতের নখ খুটছে। নীরবতা ভেঙে রিমন আরিয়া কে জিজ্ঞাসা করে
‘তুমি কি নিলয় কে কিছু বলেছিলে’?
আরিয়া ডানে বামে মাথা নাড়ায় না সূচক উত্তর জানায়।
‘সত্যি’?
আরিয়া মাথা তুলে বলে
‘হুম। কেনো ভাইয়া কি কিছু বলেছে’?
রিমন কপাল চাপরে চেয়ারে হেলান দেয়।
‘দেখছছ শালার ভাই কত পাজি’।
আরিয়া চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞাসা করে
‘কেনো কি হয়েছে’?
রিমন কপাল থেকে হাত সরিয়ে মাথা বলে
‘জানো আমাকে কি বলছে’
‘কি’?
‘কাল রাতে সারে দশটা নাগাত নিলয় আমাকে কল করে বলে বল্টু চাচার দোকানে আসতে। কি একটা পারসোনাল বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। তো আমি আর কিছু না ভেবে চলে যাই। ওর আসার কথা ছিলো সারে এগারোটার দিকে। কিন্তু ওর আর দেখা নেই। আমি এক কাপ করতে করতে চার কাপ চা খেয়ে উঠি। ওকে কল করলে ও কেটে দিয়ে ছোট একটা টেক্সট করে জানায় ও আসছে। মনে মনে খুব বিরক্ত বোধ করি। আরো কিছুক্ষন সময় অতিবাহিত হওরায় পর প্রায় বারোটা পয়তাল্লিশের দিকে ও আসে। সাথে আসিফ ও ছিল। ওর চেহারাটা রক্তিম বর্নের ছিল। বাইক কনো রকম স্টান্ড করে আমার দিকে এগোতে থাকে। আমি ব্রেঞ্চ থেকে উঠতে উঠতে বিরক্তমিশ্রিত কন্ঠে বলি
‘ভাই এত দেরি করলি কেন। কই ছিলি। আমি…’
আমি কথা শেষ করার আগেই ও আমার কলার ধরে। ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে উঠে
‘শা*লা*র পু তোর জন্য আমার বোনটা আজ হস্পিটালে’। আমার বোনের কিছু হলে তোকে ছাড়বো না।।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। আমার কথা বলার শক্তি হারয়ে যায়। মূহুর্তের মধ্যেই দম বন্ধ হয়ে যায়। ও আমাকে ঝাকাতে ঝাকাতে বলে
‘আমার বোনকে ভালোবাসোস আমাকে বললি কেন? আজ তোর জন্য ও হস্পিটালে ভর্তি। তোর জন্য ও হারপিক খাইছে। ওর বিয়ে ঠিক করছিলাম সেই জন্য ও বলছে তোকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না। আমি বলছি ও অন্য কাউকে ভালোবাসে তোকে বিয়ে করবে না। আমি যার সাথে বিয়ে তুই চুপ চাপ বিয়ে করবি। ও বলছে ভাইয়া আমি অনেক আগে থেকে রিমন ভাইয়া কে ভালো লাগে। আমি বলছি ও অন্য কাউকে পছন্দ করে আর ভালোবাসে। তুই চুও চাপ বিয়ের জন্য তৈরি হো। তার পর বাথ্রুমে গিয়ে হারপিক খাইছে। জানি না বাচবো কিনা’।
আসিফ ওকে বলে ভাই ছার। ও নিলয় কে টেনে সরিয়ে যায়। ও হিংস্র বাঘের মত গর্জন করে উঠে বলে
‘তুই সর। ওকে আজ আমি মেরেই ফেলবো। আমার বোনের যদি কিছু হয় ওকে শেষ করে ফেলবো’।
তুমি হস্পিটলে শুনে আমার আত্মা মনে হলো স্থির হয়ে গেলো। মূহুর্তেই হাত পা ঠান্ডা অনুভব হলো। তোমাকে ভালোবাসি কথাটি শুনে যদি নিলয় তোমার উপর কোনো অত্যাচার করত সেই ভয়ে কখনো প্রকাশ করি নি। তোমাকে দূর থেকেই ভালোবাসছি। কিন্তু আজ তোমার এমন কি হলো যে হস্পিটলে।
বল্টু চাচা আসিফ মিলে নিলয় কে দূরে টেনে নিয়ে যায়। কিন্তু ও বন্দি বাঘের ন্যায় ছটফট করছিলো। আমি উন্মাদের মত হয়ে ওর পায়ের কাছে বসে বলেছিলাম
‘আমি যাকে ভালোবাসি সে তোর বোনই। তাই কখনো তোর কাছে বলার সাহস পাইনি। যদি তুই আরিয়া কে কিছু বলছ তাই। আরিয়া কোথায় আছে প্লিজ একটাবার আমাকে ওর কাছে নিয়ে চল। ওর কিছু হলে আমি মারা যাবো। প্লিজ একটাবার ওকে আমার কাছে নিয়ে চল।
আমার চোখ দিয়ে অজান্তেই পানি পরছিলো।
‘সত্যি তুই আমার বোনকে ভালোবাসিস’?
‘হো ভাই হো। আমি ওকে সত্যি ভালোবাস। তোর ভয়ে কিছু বলার সাহস পাইনি। প্লিজ তুই আরিয়া কে কিছু বলিস না। ওর কাছে একটাবার আমাকে নিয়ে চল’।
তখন নিলয় স্ব শব্দে হেসে উঠে। ওর হাসির শব্দ শুনে ইষৎ কেপে উঠি আমি। ও হাসতে হাসতে আমার দুই বাহু ধরে আমাকে দাড় করায়। তার পর বুকে জরিয়ে বলে
‘কংগ্রাচলেশন বোনের জামাই’।
আমি হতবম্ভ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। ও আমার কাধ চেপে বলে
‘আমার বোনের কিছু হয়নি। ও ঠিক আছে। তোর মুখ থেকে কথা বার করার জন্য এই নাটক টা কিরলাম। আসিফ আমাকে সব বলেছে। আর তর জন্য একটা গুড নিউজ হলো আমার বোন ও তোকে ভালোবাসে। আমি ওকে তোর হাতে তুলে দিতে চাই। তুই কি রাজি’।
আমি জোরে শ্বাস নিয়ে বলি
‘থংক গড।
নিলয় কে জরিয়ে ধরে বলি
‘আমি তোর বোন কে ভালো রাখবো। হইতো তোদের মত এত টাকা পয়সা নেই আমাদের। তবে আমি ওকে সর্বোচ্চ আনন্দে রাখার চেষ্টা করবো। প্লিজ ওকে কিছু বলিস না’।
নিলয় মুখ গম্ভীর করে বলে
‘আমাকে না জানিয়ে আমার বোনের দিকে চোখ দিয়েসিস। তোকে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে। কাল তোর শাস্তি হবে’।
আমি ভয় পেয়ে গেয়েছিলাম। আর কিছু না বলে ও বাইক নিয়ে চলে গিয়েছিল। আর আজ এই সারপ্রাইজ। সত্যি কপাল গুনে ভাই পাইছো একজন। লাক্ষে একটা। ও ঠিক আমার মনের কথা বুঝে ফেলেছে।
রিমনের মুখে বার বার ভালোবাসার কথা শুনে আরিয়া মাথা নিচু করে ফেলে।
রিমন ওর দিকে ঝুকে বলে
‘তুমি আমাকে ভালোবাস তো’?
আরিয়া থতমত খেয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে
‘কি..কি মনে হয় আপনার’?
‘তাহলে বলো নি কেনো’?
‘সেম কন্ডিশন। ভাইয়ার ভয়ে’।
রিমন আরিয়ার কুচির উপর থেকে ওর হাত নিয়ে বলে
‘হইতো আমার রাজার মত ধন নেই। তবে তোমাতে ডুবে থাকার জন্য মন আছে। যে মন তুমি বিনা আর কাউকে চাই না। আমার শেষ নিশ্বাস অব্দি আমি তোমাতেই ডুবে থাকবো। কথা দিলাম’।
আরিয়া মলিন হেসে বলে
‘টাকা কখনো মানুষ কে সুখ দিতে পারে না। সঠিক মানুষই জীবনে সুখ এনে দিতে পারে। বুঝলেন মশাই। এইবার হাত ছারুন মানুষ কেউ দেখে ফেলবে’।
‘দেখুক সমস্যা কি। তোমার ভাইতো অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। আর সমস্যা কি’।
‘তবু ও আমার লজ্জা লাগে। ছাড়ুন আপনি ‘।
মৌনোতা পুকুরের তিন নাম্বার সিড়িতে বসে রয়েছে। শান্ত পানিতে ওর মন ডুবে গেছে। পুকুরের চারি পাশে থাকা গাছ গুলো থেকে থেমে থেমে বাতাস বইছে। প্রকৃতি সত্যি খুব সুন্দর। এর মাঝে এক অন্য রকম যাদু আছে। দেখলেই মন উৎফুল্ল হয়ে উঠে।
‘বেদের ছেলে ইসরাক আমায় কথা দিয়েছে
আসি আসি বলে ইসরাক ফাকি দিয়েছে’।
নিলয়ের মুখে অসভ্য মারকা গান টি শুনে অপরুপ দৃশ্য থেকে চোখ সরায় মৌনোতা। বিরক্তত নিয়ে পেছনে তাকায়। নিলয়ের ঠোঁটে শয়তানি হাসির রেখা খেয়াল করে আবারো পুকুরের দিকে দৃষ্টি স্থির করে। নিলয় গুন গুন করতে করতে মৌনোতার পাশে এসে বসে।
‘এখানে একা কি করছো মনি মালা’?
‘তাতে আপনার কি। আপনি এখানে কিসের জন্য এসেছেন’।
অগ্নি দৃষ্টিতে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে মৌনোতা।
নিলয় ডানে বামে মাথা কাত করে বলে
‘তোমাকে শুট করার জন্য এসেছি মনিমালা’।
নিলয় পকেট থেকে বন্দুক বের করে এপাশ ওপাশ করে দেখতে দেখতে বলে। মৌনোতা মুখ বাকিয়ে বলে
‘সব সনয় ট্রেড না দিয়ে শুট করতে পারেন না’?
নিলয় মৌনোতার দিকে ফিরে এক ভ্রু উচিয়ে বলে
‘আর ইউ সিরিয়াস? সত্যি কিন্তু করবো’?
মৌনোতা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে
‘হুম হুম করুন। আমি ও দেখতে চাই আপনার এই বন্দুকে কি সত্যি গুলি আছে নাকি শুধু আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এইটা সাথে করে সব সময় ঘুরেন’।
নিলয় বন্দুক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে বলে
‘আরেকবার ভেবে দেখো। এখনো কিন্তু তোমার বয়ফ্রেন্ডর কাছে যাওয়া কিন্তু বাকি আছে’।
‘বাজে কথা বলবেন না। সত্যি যদি আপনার বন্দুকে গুলি থেকে থাকে তাহলে আমাকে এক্ষুনি দেখান’।
মৌনোতার কথা শেষ হতে না হতেই ওর সাইড দিয়ে একটা গুলি ছুটে যায়৷ আওয়াজ শুনে মৌনোতা ‘আ আ ‘ বলে চিৎকার করে নিলয় কে জরিয়ে ধরে। নিলয় বাকা হেসে মৌনোতা কে এক হাত দিয়ে ঝাপটে ধরে বলে
‘ভালোবাসি তোমাকে। আমার মৃত্যুর আগে তোমাকে ছাড়ছিনা। আর আমার আগে যদি তুমি মারা যাও তাহলে সেটা আলাদা’।
মৌনোতা নিলয় কে ধাক্কা মেরে ওর বুক থেকে উঠে যায়। দাতে দাত চেপে বলে
‘হুম তখন তো আরেকটা বিয়ে করতে পারবেন। অসভ্য লোক’।
নিলয় বন্দুক পকেটে ভরে বলে
‘চারটা বিয়ে করা সুন্নত। আর তুমি আমাকে ছোয়াব আদায় করা থেকে আটকাতে পারো না’।
মৌনোতা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। নিলয়ের দিকে তাকিয়ে ফোসতে ফোসতে বলে
‘খুব শখ না আরো বিয়ে করার। একটা তে পোশাতে না। আরো তিনটা লাগবে’।
নিলয় হতাশার কন্ঠে বলে
‘পোশাতে দিচ্ছো কোথায়। সব সময় তো দূরে দূরে থাকো। আমারো তো ইচ্ছে করে বউটা কে আদর সোহাগ করতে। একটা ফুটবল টিমের আব্বু হতে। একটা আমার মাথায়, একটা ঘারে, দুইটা কাধে, দুইটা কোলে। আর বাকি গুলা আমার আশে পাশে থাকবে। একটু পর পর ডাকবে আব্বু আব্বু চলো আম্মু কে বিরক্ত করে আসি। তখন আমি আর আমার সৈন্য বাহিনী মলে তোমাকে বিরক্ত করবো। উফফফ শান্তি। এর চেয়ে শান্তি পৃথিবীর আর কোথাও হয়। আ হা হা…. ‘।
(মৌনোতা আরো কয়েক দফা জ্বলে উঠে।)
‘আর একটা বাজে কথা বললে আমি আপনাকে এখানেই খুন করে ফেলবো। অসভ্য লোক। অসভ্য ভিলেন। সরম লজ্জা বলতে কিছু নেই’।
মৌনোতা নিলয় কে ধমকিয়ে হনহন করতে করতে উঠে চলে যায়। নিলয় ঠোঁট টিপে হাসতে থাকে। বউকে রাগানো পৃথিবীতে সব চেয়ে শান্তির কাজ। এর চেয়ে শান্তি আর কোথাও নেই।
‘চলবে…
®তোয়ামনি
(কপি করা নিষেধ)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here