নীলমনি পর্ব ২২

0
86

#নীলমনি
#তোয়ামনি
নীলমনি ~২২
মৌনোতা নিলয়ের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে
‘কি হচ্ছে আমাকে একটু বলবেন’?
নিলয় বাকা চোখে তাকিয়ে বলে
‘দেখতে থাকো’।
আরিয়া চোখ বাধা অবস্থায় ফুলের পাপড়ির উপর দাঁড়িয়ে আছে। ও মৌনোতাকে বলে
‘ভাবি চোখ খুলবো’?
নিলয় বলে
‘দাড়া’।
নিলয় কাউকে কল করে। কিন্তু কথা বলে না। কল কেটে দেয়। তার পর মৌনোতা কে বলে দারাও আসছি। মৌনোতা অধির আগ্রহে সব দেখছে। বললো বার্থডে সেলিব্রেট করবে কিন্তু এখানে কি করছে। আর এখানে এত লোক কেনো। আর ওই মেয়েটাই বা কে।
নিলয় সাথে চেনা পুরুষ কে দেখে অবাক হয় মৌনোতা। তার হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ। পরনে সাদা পাঞ্জাবি। ছেলেটা যে একটু নার্ভাস সেটা মৌনোতা বুঝতে পারলো। সব কিছু মৌনোতার মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো। নিলয় ছেলেটাকে আরিয়ার সামনে দার করিয়ে দিয়। তার পর ও মৌনোতা কে ইশারায় ডাকে। মৌনোতা কে বলে ওর চোখ খুলে দিতে। মৌনোতা ওর চোখ খুলে দেয়। তার পর নিলয়ের পাশে দাড়ায়।
আরিয়া ধীরে ধীরে চোখ খুলে। সামিনে থাকা লোকটা এক হাটু ভাজ করে বসে গোলাপের গুচ্ছ আরিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে ওর উদ্দেশ্যে বলে
‘আই লাভ ইউ আরিয়া। উইল ইউ ম্যারি মি’?
দুই পাশ থেকে বুলবুলি আর মেয়েটা ফুল ছেটাতে থাকে।
রিমনকে এইভাবে প্রোপোস করতে দেখে মৌনোতা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যায়। ও নিলয়ের দিকে তাকায়। নিলয় মুচকি হাসি দিয়ে সব দেখে যেতে বলে।
আরিয়া বিষ্ময়ের চরম পর্যায়। এটা কি সপ্ন না সত্যি। সত্যি ওর ভালোবাসার মানুষ ওকে এইভাবে ভালোবাসার প্রস্তাব জানাছে। কি ভাবে সম্ভব! না এটা সত্যি হতে পারে না। এটা সপ্ন। ও বাক্রুধ হয়ে পরে।
পাশে থাকা মেয়েটি বলে
‘ভাবি ফুল গুলা নেও’।
মেয়েটির কথা কানে যেতেই আরিয়া ধন্যা ভঙ হয় ও চোখ ঘুরিয়ে নিলয় কে খুজতে থাকে। দেখে নিলয় ওর সাইডেই। নিলয় ইশারা করে প্রোপোটা একসেপ্ট করতে। সত্যি কি ভাইয়া এইটা বলছে। আরিয়া কে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিলয় ওর কাছে আসে। মাথায় হাত দিতেই আরিয়া ওকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়। নিলয় লম্বা করে হেসে দিয়ে বলে
‘কাদছিস কেনো’?
আরিয়া কিছু বলে না। শুধু কাদেই থাকে।
‘আমার বোনের পছন্দ আমি বুঝবো না। আর আমাকে বলেই তো হতো। আমি আরো আগে বিয়ে দিতাম’।
আরিয়া কান্না মাখা কন্ঠে বলে
‘থ্যাংকস ভাইয়া’।
নিলয় ওর চোখের পানি মুছিয়ে দেয়। তার পর রিমনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে ফুল গুলা নিতে। আরিয়া রিমনের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নিচা করে ফেলে। নিলয় সব জানলো কি ভাবে। তাহলে এই লোকটা ও কি ওকে ভালোবাসে। কাপা হাতে ফুল গুলা নিয়ে তার পর উপরে নিচে মাথা নাড়িয়ে সমতি প্রকাশ করে যে ও বিয়ে করতে রাজি। আফিস কোত্থেকে এসে শিস বাজায়। জোরে হাত তালি দিয়ে উঠে।
মৌনোতা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবে
‘বাব্বা ভিলেনটা ওত খারাপ না। বোনের মনের কথা ঠিকই পরে ফেলেছে’।
নিলয় কাছে আসতেই মৌনোতা বলে
‘থ্যাংকস ভিলেন। এত ভালো একটা কাজ করার জন্য। ওদের ভালোবাসার পুর্নতা দেওয়ার জন্য’।
নিলয় দূঃখি হওয়ার ভান করে বলো
‘ভালো মানুষের সাথে সব সময় খারাপই হয়। দেখো না আমার কপালে পূর্নতা বলতে কিছু নেই। আর আমি সবার পূর্নতা করে দেয়’।
মৌনোতা ঠোঁট বাকায়।
‘কেনো আপনার সারা বেবি কোথায়’।
নিলয় পকেটে হাত দিয়ে বলে
‘গুলি খেতে ইচ্ছা হয়েছে? ইচ্ছা হলে বলতে পারো। ফালতু কথা বলে সময় নষ্ট করো না’।
গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেয়ে নিলয় মৌনোতা এক সাথে তাকায়। নিলয় মৌনোতা কে বলে
‘আম্মু দাদু আসছে’।
মৌনোতা আবারো অবাক হয়।
‘আজ ওদের বিয়ের ডেট ফাইনাল হবে। সব আগে থেকেই করে রেখেছিলাম শুধু তোমাকে আর আরিয়া কে জানাও হয়নি। সারপ্রাইজটা কেমন লাগলো’।
‘ এটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না’।
নিলয় ওর কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে
‘তোমাদের পূর্নতা এর থেকে সুন্দর হবে’।
মৌনোতা অবাক চোখে তাকায়।
“চলো যাওয়া যাক’। বলে নিলয় চলে যায়।
পাশে থাকা মেয়েটি আরিয়া কে জরিয়ে ধরে। আরিয়া মুচকি হেসে বলে
‘তোমার নাম কি’?
‘রাকা। তুমি খুন সুন্দর ভাবি। ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আমার কাছে তো সব সময় তোমার গল্প করে’।
আরিয়া চোখ সরিয়ে ফেলে। তাহলে এত দিন এই রকম ভাব করে থাকার কি মানে।
বুলবুলি রাকা কে বলে
‘আহো রাকা আমরা জাই। আপা আর ভাই আহুক’।
রাকা বুলবুলি চলে যায়।
রিমন আরিয়ার দিকে হাত বারিয়ে বলে
‘আসেন ম্যাডাম’।
আরিয়া লজ্জায় চুপ থাকে। রিমন তা বুঝতে পেরে নিজেই ওর হাত ধরে।
‘আমার ভালোবাসার শুরুটা তোমাকে বলা হয়নি। তবে শেষ টুকু তোমার সাথেই কাটাতে চাই’।
আরিয়া কিছুই বলে না। ওর বুক ধাক ধাক করেছে। মাথা নিচু করে হাটিতে থাকে।
কাকুলি চৌধুরী বাচ্চু চৌধুরী শিউলি চৌধুরীকে দেখে অবাক হয় আরিয়া। ও জিজ্ঞাস্য দৃষ্টিতে তাকায় রিমনের দিকে। রিমন ঠোঁট উল্টায়।
বাচ্চু চৌধুরীর সামনে গিয়ে রিমন আরিয়া এক সাথে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। বাচ্চু চৌধুরী রিমন কে বুকে জরিয়ে নেয়।
কাকুলি চৌধুরী এসে মেয়ের কপালে চুমু দেয়। রিমনের মা আসে। রিমন আরিয়া কে পরিচয় করিয়ে দেয়। আরিয়া রহিমা বেগমের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। রহিমা বেগম ওকে বুকে টেনে নেয়। তার পর ওরা এক সাথে কেক কাটে। কাকুলি চৌধুরী আংটি দিয়ে বলে রিমনের হাতে পরয়ে দিতে। আরিয়া মলিন হেসে রিমনকে আংটি পরিয়ে দেয়। রিমন ও আংটি পরে দেয়। বুলবুলি আর রাকা মিলে ফুল ছিটাতে থাকে। মৌনোতা মুগ্ধ হয়ে দেখে সব। কি সুন্দর দৃশ্য। নিলয় ওকে খোচা মারতে বলে
‘ইসারাক তো আবার বিয়ে করে ফেলেনি তোমাকে রেখে’।
মৌনোতা চোখ গরম করে তাকায়।
‘ বাজে কথা বন্ধ করুন। ও কাউকে বিয়ে করবে না’।
নিলয় শয়তানি হাসি দিয়ে বলে
‘বেদের ছেলে ইসরাক আমায় কথা দিয়েছে
আসি আসি বলে ইসরাক ফাকি দিয়েছে’।
মৌনোতা রাগে ফোসতে থাকে। ও চোখ সরিয়ে নেয়। কত দূর অসভ্য এই লোক। নিলয় মৌনোতার কানে সুর দিয়ে সিস বাজিয়ে চলে যায়। মৌনোতার ইচ্ছা হচ্ছে লোকটা কে জ্যান্ত চিবিয়ে খেতে। অসভ্য ভিলেন।
চলবে…
®তোয়ামনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here