নীলমনি পর্ব ১২+১৩

0
65

#নীলমনি
#তোয়ামনি
[কপি করা নিষেধ ]
নীলমনি ~১২ +১৩
লাল টকটকে বেনারসি পরানো হয়েছে মৌনোতাকে। গায়ে সোনার গয়না জ্বল জ্বল করছে। সবাই সাজ গোজে ব্যাস্ত। মৌনোতা আয়নার সামনে বসে রয়েছে। এক দৃষ্টি তে সে নিজেকে দেখছে। সে কি সত্যি বিয়েটা করছে। এই বিয়েটা আটকাতেই হবে। সে যাকে তাকে বিয়ে করতে পারে না। ওর হাসপাস লাগছে। ও উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। বাড়িতে মানুষ গিজ গিজ করছে।
সকাল থেকে কাকুলি কালাম চৌধুরী কে কল করে যাচ্ছে কিন্তু কল তুলছে না। ছেলে তার পছন্দ মত মেয়েকে বিয়ে করছে না শুনে সেই দিন ই তার সাথে ঝগড়া করেছে। তবে এই কথা কাকুলি কাউ কে জানায় নি। সে চুপ চাপ ঘরে বসে রয়েছে। সে সরাসরি নাই দেখতে পেলো ছেলের বউ কে ছবি তে তো দেখতেই পারে।
‘ম্যাডাম এই শরবত টা বড় ম্যাডাম আপনারে খাইতে কইছে’।
মৌনোতা পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে একজন অল্প বয়সি মেয়ে। মেয়েটাকে ও চিনে না। মেয়েটা বলে
‘আমি বুলবুলি। আমি এই বাড়িতে কাজ করি। গ্রিরামের বারিতে গেছিলাম দেইখা দুই দিন আমার মায় আইছিলো কাজে। তাই আমারে দেহেন নাই। হাই হাই কত কতা কইয়া হালাইলাম। আপনে রাগ কইরেন না নতুন ভাবি। শরবত টা ধরেন ভাবি আমার আরো মেলা কাজ আছে। আমি গেলাম’।
মৌনোতা মুচকি হাসে। মেয়েটা এত কথা বলতে পারে। ও হেসে শরবত টা নেয়। তার পর বলে
‘সমস্যা নেই। তুমি মাঝে মাঝে আমার সাথে এই রকম করে কথা বলবে ঠিক আছে’?
‘আইচ্চছা ভাবি’।
সকালে এক বার কাকুলি এসে ওকে হালকা খাবার খাইয়েছিলো এখন প্রায় দুইটা বাজে আর কিছু খাওয়া হয় নি। শরবত টা খেলে হয়তো ভাল লাগবে।
মৌনোতা বেল্কনিতে বসে শরবত টা খেতে থাকে।
দরজায় কারো করাঘাত শুনে নিলয় রিমন কে বলে খুলে দিতে। ও রেডি হছছিলো। দরজা খুলতেই সারা
ক্ষেপে ঘরে ঢুকে।
‘তুমি ওই মেয়েকে সত্যি বিয়ে করছো’?
‘হুম’।
নিলয় পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে বলে। নিলয়ের নির্বিকার উচ্চারণে আর ও খেপে সারা। ও অর কাছে এসে পাঞ্জাবির কলার ধরে বলে
‘তুমি আমার সাথে চিট করতে পারো না। আমার থেকে ও কোন অংশে সুন্দরি? কি নেই আমার মধ্যে যা ওর মধে আছে’?
আসিফ রিমন বিরক্তি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে সারার দিকে। নিলয় ডানে বামে মাথা কাত করে তার পর সারার হাত থেকে ওর কলার ছাড়ায়।
‘ও পবিত্র। তোমার মত অপবিত্র না তাই’।
সারা বাকা হেসে বলে
‘আর ইউ কনছিক্রেট’?
নিলয় শয়তানি হাসি দিয়ে বলে
‘অফ কর্স’।
‘সেট আপ। তুমি আমাকে হাজার বার ছুয়েছো। ভুলে গেছো”?
নিলয় হাসি দীর্ঘ করে বলে
‘তুমি নেশার ঘরে থাকতে। আমি ছুয়েছি না অন্যা কেউ ছুয়েছে সেটা কি ভাবে বুঝলে। আর আমি যাকে ছবো তাকে অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। ওর থেকে পবিত্র আর কেউ নেই। তুমি এখন আসতে পারো। আমার লেট হয়ে যাচ্ছে’।
‘নীল আমার একটা কথা শুনো। তুমি যা ভাবছো তা সত্যি নয়। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি’।
নিলয় আর কনো কথা বাড়ালো না আসিফ রিমন কে ইশারা করে বাইরে বের হতে। ও সারা কে টেনে বের করে ঘর থেকে তার পর চলে যায়।
কাজি এসেছে বিকেল পাচটায়। সে খুব বিরক্ত হচ্ছে। বিয়ে পরানো শুরু হবে। প্রায় দশটা বাজে। কিন্তু অবাক করার বিষায় এখনো পাত্র পাত্রি দুই জনই পৌছানি। দুই জন তো এই বারিতেই তাহলে এত ক্ষন কেনো লাগছে। কাজি কখন থেকে তারাতাড়া দিচ্ছে।
বাচ্চু চৌধুরী আর ওনার পার্টনার বাইরে গেস্ট দের ফেলেসিটি (felicitate) করছেন। এই দিকে আসতে পারছে না। কাকুলি চৌধুরী রিংকি অনন্যা কে বলে কি হলো মৌনোতা কই নিলয় কই। ওদের ডেকে নিয়ে আয়।
আরিয়া হন্তদন্ত হয়ে উপর থেকে নামে। কাকুলিকে বলে
‘আম্মু এই দিকে আসো। কথা আছে’।
‘কি হয়েছে? তোরা মৌনোতা কে কেনো আনছিছ না। আর নীল কই’?
‘আম্মু আমি তো ভাবীর কাছে গিয়ে ছিলাম। ভাবি গভির ঘুমে। কতবার ডাকলাম শুনলো না। আর ভাইয়া উপরে রেডি হচ্ছে বোধায়’।
‘উঠলো না মানে। আর মেয়েটা ঘুমাচ্ছে’!
কাকুলি কিঞ্চিৎ অবাক হলো। আচ্ছা আমি দেখছি।
উপরে উঠতেই নিলয় কে দেখতে পেলো। অসম্ভব সুন্দর লাগছে। যদিও শুধু অব হোয়াইট পাঞ্জাবি পরেছে তবু ও সুন্দর লাগছে। সাথে আসিফ রিমন।
‘ওই তো ভাইয়া’।
ওরা নিচে নেমে আসে। মায়ের সামনে দারিয়ে লম্বা করে হাসে। কাকুলি দুই হাতে ছেলের গাল ধরে। তার দুই চোখে পানি জ্বল জ্বল করে। তার এক মাত্র ছেলের আজ বিয়ে। কপালে চুমু একে দেয়। কাজি তারা দেয়।
‘জা আর দেরি করিস না’।
‘আম্মু আমি ভাবি কে নিয়ে আসি’।
আরিয়ার অনেক ডাকা ডাকিতে ঘুম ঘুম চোখে তাকায় মৌনোতা। মাথা টা তার জ্বীম জ্বীম করছেম দুই আঙুল মাথায় চেপে ধরে। কি হয়েছে ওর বুঝতে পারছে না। যতটুক মনে পরে শরবত টা খাওয়ার পর ওর কেমন যেনো লাগেছিলো শরীর। তার পর বিছানার শুয়ে ছিলো আর কিছু মনে পরছে না। ও ওঠার চেষ্টা করে। আরিয়া ওকে উঠতে সাহায্য করে। দেওয়াল ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে পনেরো মিনিট কম দশটা বাজে।
‘ভাবি তুমি উঠেছো। হাইরে কখন থেকে তোমাকে ডাকছিলাম সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারাতাড়ি চলো’।
মৌনোতা কিছু বলে না। ওর শরীর দূর্বল লাছে। মোটেও নরতে ইচ্ছা করছে না।
‘চল চলো’।
আরিয়া মৌনোতা কে টেনে নিয়ে নিচে চলে যায়। নিচে সবাই অর জন্য অপেক্ষা করছে। নিলয় বাকা চোখে মৌনোতা কে দেকছে। মেয়েটার শরীর ঢুলছে মনে হচ্ছে।
মৌনোতাকে নিলয়ের সামনা সামনি বসানো হয়েছে। মাঝখানে পাতলা একটা পর্দা। মৃদু বাতাসে টা উড়ছে। সারা দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছে। সবায়ার মুখে খুশি উপচে পরছে। নিলয় ধীর চোখে পাতলা পর্দা ভেদ করে মৌনোতা কে দেখছে।
মৌনোতার শরীর কাপছে। ওর শ্বাস ভারী হয়ে গেছে। সত্যি বিয়ে টা হচ্ছে। কাজি বিয়ে শুরু করেছে। কাজির প্রতি টা কথা মৌনোতার অস্থিরতা আর ও শত গুন বারিয়ে দিচ্ছে। ও মাথা নত করে মুখ দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে। কাজির কথা শেষ হলে নিলয় পর পর তিনবার কবুল বলে। নিলয়ের প্রতিটি শব্দ মৌনোতার বুকে ঝড় তুলে। তবে কি সত্যি বিয়ে টা হয়ে গেলো। কাজি মৌনোতার দিকে ঘুরে আবার ও সেই ব্যাক উচ্চারণ করে। কথা শেষ হলে মৌনোতাকে কবুল বলতে বলে। মৌনোতার গলা দিয়ে স্বর বেরচ্ছে না। ওর শ্বাস ক্রমশ বেরেই যাচ্ছে। এই দিকে কাজি তারা দিয়ে যাচ্ছে। আরিয়া মৌনোতাকে কবুল বলতে বলে। পাশ থেকে রিংকি বলে কিন্তু ওর কথা আসছে না। এই রকম অনেক্ষন চলার পর নিলয় ওর ধৈর্য হারালো। ও উঠে মৌনোতার কাছে আসে। পাশে এসে বসে। ওর আত্মা টা যেনো এখন বার হয়ে যাবে। নিলয় শান্ত কন্ঠে বলে কবুল বলো। ওর শ্বাস আরো দ্বীগুন বেরে যায়। নিলয় আবারো বললো কবুল বলো। বাড়িতে উপস্থিত সবাই অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছে। নিলয় আরিয়া কে ইশারা করে এখান থেকে যেতে।
ও উপরের দিকে তাকাতেই একটা পর্দা নেমে ওদের ঢেকে দেয়। সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। এ কেমন নাটক। যতসব। সারা আগুন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
নিলয় পাঞ্জাবির পকেট থেকে গান বের করে। মৌনোতার আত্মা কেপে উঠে। নিলয় ডানে বামে মাথা কাত করে শান্ত কন্ঠে বলে
‘কবুল বলো’।
মৌনোতা বুক ফেটে কান্না আসে। দুই চোখ দিয়ে পানি অনবরত পরতে থাকে। ও চোখ সরিয়ে ফেলে। নিলয় গান টা ওর মাথায় ধরে বলে
‘কবুল বলো’।
বন্দুকের ছোয়ায় মৌনোতার সারা দেহ ঝাকি দিয়ে উঠে। ও চোখ বন্ধ করে ফেলে। নিলয় আবার ও ফিসফিস করে বলে
‘ট্রিগার টা টানলেই কিন্তু তুমি শেষ। শেষ বারের মত বলছি কবুল বলো’।
মৌনোতার চোখ বেরে অননরত পানি পরেই যাচ্ছে।নিলয় এমন ভাবে বন্দুকটা ধরেছে যেনো এখনো গুলি করে ফেলবে। ও ঢোক গিলে কাপা কন্ঠে উচ্চারণ করে
‘ক…….ক……..কবুল’।
ওর ভেতরের সব কান্না ঠেলে টুলে বাইরে চলে আসে। নিলয় বাইরে এক হাত বের করতেই পর্দা টা ওদের উপর থেকে সরে যায়।
কাজি বলে আরো দুই বার বলতে হবে।
নিলয় ওর দিকে তাকাতেই মৌনোতা কাপা কন্ঠে আরো দুইবার বলে। মৌনোতার দৃষ্টি ঘোলা হয়ে উঠে। মাথা টা কেমন করে উঠে। ও সারা শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে পরে যেতেই নিলয় দুই হাতে ওকে বুকে চেপে ধরে। সবাই হায় হায় করে উঠে। কাকুলি তারাহুরো করে ওদের কাছে আসে।
‘আল্লাহ কি হলো’।
‘আমি দেখছি আম্মু। তুমি চিন্তা কর না প্লিজ’।
নিলয় ওকে পাজা করলে নিয়ে উপরে চলে যায়। সবাই যেনো সিনেমা হলে ছিলো। কি হলো কি হচ্চে কিছুই বুঝলো না। সারার সারা শরীরে আগুন জ্বলছে। ওর প্লান টা কেনো কাজ করলো না। ওর মাথা কাজ করছে না। ও হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
রাত প্রায় একটার কাছা কাছি। রুমে ডিম লাইট জ্বলছে। তাজা ফুলের ঘ্রানে মন প্রান মাতিয়ে দিচ্ছে। বাসর ঘর ফুল দিয়ে সাজানোর এইটাই মূলত মূল কারন। ভালোবাসা ফুলের সুভাসে জেনো আরো গভীর হয়।
কিন্তু হায় বউ নাকি তার ঘুমাচ্ছে। আর সে তার পাশে বসে এক ধ্যানে বউ কে দেখে যাচ্ছে। এইটা মানা যায়। কত স্বপ্ন ছিলো তার। সব ভেঙে চুরমার করে দিলো বউ তার। বউ টা আইন বিরুধি কাজ করেছে। তার শশুর নাকি আইনের লোক অথচ মেয়েটাকে কিছুই শিখাই নি। এত সুন্দর জামাই রেখে এত সুন্দর রাত রেখে নাকি পরে পরে ঘুমাচ্ছে। কি সাংঘাতিক। যে দিন দেখা হবে সেই দিন শুশুরের সাথে বুঝে নিবে। এখন কি করার সারা রাত বউ কে দেখে দেখি পার করুক।
মৌনীতার শরীরে কোনো গয়না নেই। কাকুলি এসে সব খুলিয়ে দিয়েছে৷ মৌনোতা এত টাই দুর্বল যে গয়নার খোলার সময় ও বুঝতে পারে নি। খোলা করা চুল গুলা বালিশে ছড়িয়ে রয়েছে। পরনের বেনারিসি টা রয়ে গেছে। নিলয় আধো শুয়ে আধো বসে বউ কে দেখছে। ফ্রেশ হিয়ে এক ভাবেই বসে রয়েছে। ঘুটিয়ে ঘুটিয়ে দেখছে।
কি অপরুপ এই মেয়ে! শ্যামলা মেয়ে গুলি সত্যি এমন অপরুপ হয়। নাকি সে ওর প্রেমে পরেছে বলে এত সুন্দর লাগছে। এর ঘুমের মধ্যে ও সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। কিন্তু নিলয় ওর থেকে শত গুন বেশি সুন্দর। তবু ও ওর অকেই লাগবে। নিলয় মলিন হেসে ঘুমন্ত মৌনোতাকে সুধায়
‘ভালোবাসি মনিমালা। অনেক ভালোবাসি তোমাকে। তোমার রুপ নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। তুমি পূর্নিমার চাঁদ হও কিংবা আমাবস্যার চাঁদ আমি তোমাকেই চাই’।
কিন্তু একটা বিষয় ওর মাথায় ধরছে না মৌনোতার হয়েছে কি এত ঘুম কেনো আসছে। সকালে খোজ নিয়ে দেখতে হবে কি খেয়েছিলো। ওর ফোন বেজে উঠে। পাশ ফিরে তাকিয়ে টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে কথা শুরু করে।
‘লোকটা মুখ খুলেছে’?
‘নাহ। অনেক মেরেছি তবু ও কিছু বলে নি। আর বাকি তিনিজন কে এখনো খুজে পাইনি।
নিলয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।
‘ওকে আজ আর কিছু বলিস না। আমি কাল এসে দেখছি’।
ও ফোন রেখে আবারো বউ দেখায় মনোযোগ দেয়।
ঘরির কাটা আট টায় গিয়ে পরেছে। মৌনোতা ঘুম ভেঙে। যদি ও মাথা তা হালকা জ্বীম জ্বীম করছে। সে দুপরে শুয়ে ছিলো এখনো হালকা হালকা ঘুম রয়েছে। নাকে এসে লাগে ফুলের ঘ্রান। ও চোখ মেলে তাকায়। কয়েকবার চোখ কচলে তার পর তাকায়। নিজেকে ফুলসজ্জিত এক বিছানায় আবিষ্কার করে। ও আশে পাশে তাকাতেই দেখে ওর ডান পাশে নিলয় বসে চোখ বুজে রয়েছে। বোধায় ঘুমাচ্ছে। নিলয় কে দেখে ওর হ্রদপন্ড ধক করে উঠে। এই অসভ্য ভিলেনের সাথে বিয়েটা অর সত্যি হয়েছে। আর ও এই অসভ্য ভিলেনের রুমেই রয়েছে। ভাবতেই ওর গা শিউর উঠে। রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করে। কয়েকবার মাথায় আঙুল দলে ওই ভয়ংকর দৃশ্য ছাড়া আর কিছুই মনে করতে পারে না। যে মূহুর্তে নিলয় ওর মাথায় বন্দুক ধরে বলে ছিলো কবুল বলতে। ও আর ভাবতে পারছে না। এই সাংঘাতিক লোকের সাথে ও কি ভাবে থাকবে। ও হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসে৷ পালানোর আর কনো উপায় নেয়। ও বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিলয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ও সাহস পাচ্ছে না কিছু করার বা বলার যদি কিছু বলে।
নিলয়ের বরাবর একটা আয়না লাগানো ছিলো দেওয়ালে। তাতে ও নিজেকে দেখে। গায়ে কনো গয়না নেই মাথার চুক গুলা ও খোলা। এক অন্য রকম রুপ। ওর আত্মা কেপে উঠে। তাহলে ওর ঘুমের সুযোগ কি নিয়েছে নিলয়। ঘুমের ঘরে ওর কাছে এসেছিলো। ওকে ছুয়ে ছিলো।
সে তার স্বামী তার অধিকার আছে কিন্তু এই ভাবে। ও ফুপিয়ে কেদে উঠে।
ওর কান্না শুনে ঘুম ভাঙে নিলয়ের। কখন ঘুমিয়ে পরেছিলো তা ওর জানা নেই। মৌনোতার কান্না দেখে কিছুটা বিচলিত হয়। এমনি তে কাল সারা টা রাত শুধু বউ কে দেখে দেখি পার করেছে এখন আবার কান্না করছে। ও শান্ত কন্ঠে বলে
‘কি হয়েছে কান্না করছো কেনো’?
মৌনোতা আগুন দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। এই আগুনে যেনো পুড়িয়ে দিবে নিলয় কে।
‘তোমার রুপের আগুন কাল সারা রাত আমাকে এমনিতেই পুরিয়েছে। এখন আবার দৃষ্টি দিয়ে পুরি ও না। কবে যেনো ছাই হয়ে উড়ে যায়৷ তখন তোমাকে রাত জেগে কে পাহাড়া দেবে’।
নিলয় রসিকতার ব্যাক আরো ক্ষেপে মৌনোতা।
‘লজ্জা করে না আপনার। এখনো কথা বলছেন। কোন সাহসে আপনি আমাকে ছুয়েছেন’?
নিলয় অবাক হয়। ঘুমের মধ্যে কি মেয়েটা ওকে নিয়ে ওই সব সপ্ন দেখছিলো। ও নির্বিকারে প্রশ্ন করে
‘কখন ছুলাম’?
‘নাটক করবেন না। আপনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন। আবার আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমাকে ছুয়েছেন? অসভ্যা লোক। ভিলেন। এক নাম্বারের ভিলেন’।
মৌনোতা চোখ সরিয়ে আবারো কান্না করতে থাকে।
নিলয় একবার ডানে এক বার বামে মাথা কাত করে বলে
‘এমন কিছু বলো না জার জন্য পরে সেটা নিয়ে আফসোস করতে হয়’।
মৌনোতা রাগে কিরমির করতে করতে নিলয়ের দিকে তাকায়।
‘চুপ এক দম চুপ। আমি আপনার আর কোন কথা শুনতে চাই না’।
মৌনোতা হাটুতে থুতনি ঠেকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ফোপাতে থাকে। নিলয় শান্ত চোখে মৌনোতার দিকে চেয়ে থাকে। ও শুধু কেদেই যাচ্ছে। একে তো সে কাল সারা রাত জেগে পাহারা দিছে এখন আবার কান্না করা হচ্ছে। ও উঠে ফ্রেশ হয়ে আসে। মৌনোতা তখন ও বিছানার উপর বসেই রয়েছে। নিলয় রেডি হতে হতে আর চোখে মৌনোতাকে দেখে যাচ্ছে।
নিলয় আর কোনো কথা না বলে বাইরে চলে যায়। মৌনোতা চুপ চাপ বসে থাকে। নিজেকে অনেক হেল্পলেস মনে হচ্ছে। কেনো বাবার কথা না শুনে পালিয়ে এসেছে। কেনো তার বাবা এখনো তাকে খোজতে এলো না। সত্যি বাবা কখনো আমাকে ভালোবাসি নি। তা না হলে এক জন ইনস্পেকটেরর মেয়ে হারিয়ে গেছে এত দিনে খুজে ফেলতো।
কিছুক্ষন এই ভাবেই কেটে যায়। কাকুলি এসে মৌনোতার কাছে। তার হাতে একটা শাড়ি।
‘এখন কেমন লাগছে মা’?
মৌনোতা ঘার ঘুরিয়ে তাকায়। শান্ত কন্ঠে জবাব দেয়
‘ভালো’।
কাকুলি ওর পাশে বসে। পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে
‘কাল কি হয়েছিলো তোমার’?
‘জানিনা। আপনার দেওয়া শরবত টা খাওয়ার পর থেকেই শরীর কেমন জেনো করছিলো। তার পর শুয়ে ছিলাম’।
কাকুলি ভ্রু বাকায়।
‘আমি শরবত দিয়েছিলাম মানে’?
মৌনোতা অবিশ্বাস্য চোখে তাকায়।
‘আপনি তো বুলবুলিকে কে দিয়ে আমার জন্য শরবত পাঠিয়ে ছিলেন’।
‘বুলবুলি মানে! ও তো আজ সকালে এসেছে। ও নাকি গ্রামের বাড়ি গেছে। তাই কই দিন ওর মা এসেছিলো কাজে। কাল কখন এলো’!
মৌনোতা অবাকের চরম পর্যায়।
কাকুলি কিছুতেই মনে করতে পারছে না। সে কখন শরবত পাঠালো। আর বুলবুলির সাথে দেখা হয়ে ছিলো কখন।
‘তুমি সত্যি বলছো? বুলবুলি তোমাকে সত্যি শরবত দিয়েছে আমার নাম বলে’?
মৌনোতা মাথা নাড়ায়। কাকুলি উচ্চস্বরে ডাকে।
‘বুলবুলির ও বুলবুলি কই তুই এদিকে আয়’।
কিছুক্ষন পর বুলবুলি বেনি হাত দিয়ে দুলাতে ফুলাতে আসে।
‘কি হইছে বড় ম্যাডাম’?
ওর মুখে তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ করলো না মৌনোতা।
‘তুই কখন আইছছ’?
‘কেন ম্যাডাম কাল সকালে’।
‘কিইই’!
বুলবুলি ডেপ ডেপ চোখ মেলে তাকায়। বেনি ছেড়ে কোমরে দুই হাত দিয়ে বলে
‘এত অবাক হইতাছেন কেন ম্যাডাম? আপনি তো কাল দুপুর বেলা আমারে দিয়া শরবত ও পাঠাইলেন ভাবি রে দিওনের লিগা ভুইলা গেলেন’?
কাকুলি বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যায়। সে কখন শরবত পাঠালো। আর বুলবুলির সাথে তার কখনি বা দেখা হলো
‘তুই সত্যি বলতেছছ। সত্যি আমার সাথে তোর কাল দেখা হয়ছিলো! আর আমি শরবত পাঠাইছিয়ালাম!
বুলবুলি কোমড় ছেড়ে কপাল চাপরে বলে
‘আপনে কাল ডাবিটির ওসুধ খান নাই তাইনা। তাই আবল তাবল কইতাছেন’।
কাকুলি মনে করার চেষ্টা করে কাল সে ডায়বেটিকস এর ওষুধ খেয়েছিলেন নাকি। সকালে খেয়ে ছিলো আজ সকালে খেয়ে ছিনা কিনা মনে নেই। এই রকম ভুল তো তার হয় না।
‘আচ্ছা যা তুই’।
বুলবুলি বেনি দুলাতে দুলাতে চলে যায়।
‘আমি মনে করতে পারছি না যে কখন শরবত টা পাঠালাম। আচ্ছা তুমি উঠো ফ্রেশ হও’।
কাকুলি শাড়ি টা মৌনোতার কাছে দিয়ে চলে যায়।
মৌনোতা অবাক হয়ে বসে আসে। কাল শরবর টা খাওয়ার পরই ওর এই রকম ঘুম আসছিলো। তার মানে শরবতে কিছু মেশানো ছিলো। কিন্তু কাকুলি বলছে শরবত টা অনি পাঠায় নি। তাহলে পাঠালো কে। আর বুলবুলি বলছে শরবত টা উনি পাঠিয়েছেন। ও ভাবতে ভাবতে ওয়াশরুমে চলে যায়।
সন্ধার আজান পরেছে। মৌনোতা বেল্কনিতে বসে রয়েছে। মৃদু বাতাস বইছে। ও সকালের ঘটানা ভাবছে। নিলয় সারা দিন বাসায় আসি নি। ভিলেন টা কে সরি বলতে হবে। সকালে খাওয়ার সময় কাকুলি বলেছেন গয়না গুলি ওনি খুলে টেবিলে রেখেছেন। ও যেনো সাবধানে রাখে। গয়না গুলা তার মানে নিলয় খুলে নি। ও শুধু শুধু ওর উপর রাগ দেখিয়েছে। ভিলেন টা ওর সাথে যেমনই করুক ও খারাপ ব্যাবহার করবে না। কুকুর কামর দিলে তো আর তাকে কামরানো যাবে না।
বিকালে সব আত্মিয় চলে গেছে। অনন্যা আর ওর মা রয়েছে। ওরা কাল সকালে যাবে।
আরিয়া এসে মৌনোতাকে ডাকে।
‘ভাবি কি করো’?
মৌনোতা ঘার ঘুরিয়ে তাকায়। মুচকি হেসে বলে
‘কিছু না। আসো। তুমি সারা দিন কই ছিলে একবার ও আসলে না। খাওয়ার সময় ও দেখলাম না’?
‘রুমেই ছিলাম। অনেক টাইয়ার্ড ছিলাম। ভাবি কলির মোরে যাবা? ওই খানে একজন ফুচকাওয়ালা বসে। অনেক ভালো ফুচকা বনায়। চলো খেয়ে আসি’।
‘এখন’?
‘হুম। আমি তো মাঝে মাঝেই যাই। চলো না’।
‘তুমি আর আমি’?
‘না অনন্যা ও যাবে। ও রেডি হচ্ছে। আর দাদাভাইয়ের পার্টনার কে নিয়ে যাবো। তাহলে আম্মু আর কিছু বলবে না। তুমি রেডি হও ওকে’?
মৌনোতা মাথা নাড়ায়। ঘুরে আসলে হয়তো ভাল লাগবে। আরিয়া চলে যায়। মৌনোতা উঠে আয়নার সামনে যায়। শাড়ি ঠিক করে। চুল খুলতেই বিরক্ত হয়। কেমন যেনো ড্রাই হয়ে আছে। শ্যাম্পু না করে বাইরে বের হওয়া যাবে না। স্ক্রাফ পরেতে হবে। আরিয়ার কাছ থেকে আনা যাক। ও শাড়ি ঠিক আরিয়ার ঘরে চলে যায়।
চলবে…
®তোয়ামনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here