নীলমনি ~৩
“ওই তর সমস্যাটা কি। মেয়েটাকে ছা…… আ…….. কথাটা শেষ করার আগেই ঝুটিওলা লোকটি আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পরে। নিলয়ের হাতে থাকা বন্দুকটি থেকে একটা গুলি বেরিয়ে লোকটির বাম পা ভেদ করে যায়। নিলয় মেয়েটির হাত আরো শক্ত করে ধরে। ঘার ডানে বামে কাত করে হাতে থাকা বন্দুকটি তুলে মাথায় ফু দেয়।
“আগেই সাবধান করেছিলাম। আর এক পা না এগোতে। তাহলে আর বেচে ফিরতে পারবি না। ভাগ্য ভালো তর বুকে সুট করিনি”।
মেয়েটি ভয়ে কাপছে। নিলয়ের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছে না। এই বুঝি একটা গুলি অকেও করবে। এই অসভ্য লোকটা বন্দুক নিয়ে ঘোরে। ও এক ঝামেলার কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে আরো বড় ঝামেলার মুখে পরলো।
“আসিফ রিমন ওদের ধরে গোডাওনে নেয়ে যা। আমি আসছি”।
“ওই চল”।
আসিফ কাউকে কল করে। মূহুর্তের মধ্যে একটি টয়োটা হাইস গাড়ি এসে উপস্থিত হয়। গাড়ির ভেতরে কয়জন তা বোঝা গেলো না। আসিফ রিমন লোকগুলোর কলার ধরে ধরে গাড়িতে উঠায়।
নিলয় তখনো মেয়েটির হাত ধরে আছে। মেয়েটি ভয়ে কেপে উঠছে। সবাই কে গাড়িতে তুলে আসিফ রিমন চলে যায়।
নিলয় এইবার মেয়েটির দিকে ঘার ঘুরিয়ে তাকায়। মেয়েটিকে আগাগোড়া দেখে ডানে বামে মাথা কাত করে। মেয়েটি কাপছে সে বুঝতে পারছে। সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেড়ে দেয়। মেয়েটি একটু পিছিয়ে যায়। নিলয় শয়তানি হাসি দেয়। মেয়েটি দৃষ্টি রাস্তায় নিবদ্ধ করে রেকছে।
“তোমার নাম কি সুন্দরী”?
সুন্দরী কথাটি শুনে থমকায় মেয়েটি। সেতো সুন্দর না। তাহলে তাকে সুন্দরী বলে অপমান করলো কেনো। সুন্দর মানুষ বলে রুপের এতো দেবাগ। কালো মানুষ কি মানুষ না।
নিলয় ঘার ডানে কাত করে দুই হাত বুকে ভাজ করে মেয়েটির দিকে শয়তানি চোখে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটের কোনে শয়তানি হাসি ও বিদ্দমান।
“কি হলো সুন্দরী”?
মেয়েটি ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকায় নিলয়ের দিকে। মিনমিনে বলে
“মৌনোতা”।
নিলয় বুক থেকে ভাজ করা হাত খুলে ডান হাত নিয়ে বুকের বা পাশে চেপে ধরে বলে
” ইসসসসস কি চোখের চাওনি। আমি যেনো নিজের সর্বনাশ দেখতে পেলাম ওই চাওনিতে। এক চাওনিতেই আমার মন কেরেছো মনিমালা”।
মৌনোতা সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। ওর রগে রগে কাপুনি ধরে লোকটার কথায়। থতমত করতে করতে বলে
“সুন্দর মানুষ রা বুঝি এমন হয়। কালোদের কি কোনো সম্মান নেই। আমি কালো আর আপনি সুন্দর বলে আপনি এই ভাবে আমাকে অপমান করবেন”?
নিলয় অবাক হয়। সে কই অপমান করলো। ভার্সিটির সব মেয়েরা পাগল। একটু কথা বলার জন্য কত বাহানা খুজে কিন্তু কাউকে পাত্তা দেয় না। আর এই মেয়ের সাথে সেদে কথা বলছে তাও কি ভাব করছে।
” কি অপমান করলাম”!
“এই যে বলেন সুন্দরী। আ…আমার দৃষ্টি নাকি আপনার মন কেরেছে। এই গুলা কি অপমান না”।
“ক্ষমা করুন মনিমালা ক্ষমা করুন”।
বুক থেকে হাত নামিয়ে মাথা নিত করে বলে। মৌনোতা নিলয়কে আর চোখে দেখে ফুলে উঠে। মনে মনে বির বির করে অসভ্য লোক। নিলয় চায়ের দোকানের কাছে গিয়ে বিল পরিশোধ করে বাইক নিয়ে নেমে আসে। বাইক স্টার্ড করে করে বলে
“আসো”।
মৌনতা অবাক হয়।
“কই যাবো”?
“শশুর বাড়ি”।
মৌনোতা চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে
“মানে”?
“এতো সুন্দর করে বউ সেজেছো বরের কাছে যাবে না। শশুর বাড়ি যাবে না”?
” আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না। আপনি চলে যান”।
“আচ্ছা। আমি গিয়ে ওদের পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি এখানে ওয়েট করো। নরবেনা কিন্তু। আমি যাবো আর আসবো। ওকে মনিমালা। নরবে না কিন্তু”।
কথাটি বলে নিলয় বাইকে স্টার্ড করে ঘুরায়। মৌনোতা ভয় বেরে যায়। ও নিলয় কে ডাকে।
” শুনুন প্লিজ। এরকম করেবন না”।
“তাহলে কেমন করবো তুমি বলে দেও। এতো রাতে তুমি এখানে কি করবে”।
“জানি না কি করবো। তবে আমি আপনার সাথে যাবো না। আপনি চলে যান। আর প্লিজ ওই লোক গুলোকে ডাকবেন না”।
“আচ্ছা। আমার সাথে না গেলে৷ কোথায় যাবে সেটা বলো আমি নিয়ে যাচ্ছি”।
মৌনোতা কোন উত্তর দেয় না। চুপ করে অন্য দিকে তাকায়।
” কি হলো মনিমালা বলো কোথায় যাবে”।
“আমার নাম মনিমালা না। মৌনোতা। আপনি সংক্ষেপে মনি ডাকতে পারেন”।
” না আমি তোনাকেই মনিমালা বলেই ডাকবো। যার চোখের মনি আমার মন কেরেছে তাকে আমি মনিমালাই ডাকবো”।
মৌনোতা দুই হাত দিয়ে কোমড়ে ধরে বলে
“সমস্যা কি আপনার। কখন থেকে বাজে কথা বলেই যাচ্ছেন। আমি কালো বলে আপনার সমস্যা কি। জান চলে যান এখান থেকে। আমি কোথায় যাবো সেটা আপনার দেখার বিষয় না। আমাকে বাচিয়ে ছেন তার জন্য থ্যাংকস। এখন আপনি আসুন”।
নিলয় এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“উপকারিরে সব সময় বাঘে খায়। ওদের হাত থেকে তোমাকে বাচালাম আর এই ব্যাবহার। আচ্ছা যাদের জিনিস তাদের নিয়ে যেতে বলছি দাড়াও”।
মৌনোতা মনে মনে ফোসতে থাকে। কেনো যে এই লোকের পাল্লায় পরলো ও।
” আচ্ছা ছরি। আমি এই রকম বিহাবিহারের জন্য। আমার আর কনো হেল্প লাগবে না। আমি চলে যেতে পারবো”।
নিলয় ডান ঘার বাকিয়ে বলে
“এতো রাতে কোথায় যাবে। আর তুমি যার জন্য অপেক্ষা করছো সে আসবে না। ভালো ভাবে বলছি চলো আমার সাথে৷ না হলে বাইকের সাইলেন্সারের সাথে বেধে নিয়ে যাবো। সারা রাস্টা পেট্রোলের ঘ্রাণ নিতে নিতে যাবে”।
মৌনোতা মনে মনে গালি দেয়। অসভ্য লোক। মনে মনে লোকোটাকে লবন মরিচ মাখিয়ে তেলে ভাজতে ইচ্ছে করছে।
“আমি..আমি কারো জন্য অপেক্ষা করছি না”
নিলয় শয়তানি হাসি দিয়ে বলে
“করছো মনিমালা করছো। সে কিন্তু আসবে না। আর এক দল কে মেরেছি আরেক দল আসলে কিন্তু আর বাঁঁচবে না”।
মৌনোতা এইবার একটু ভয় পায়৷ সত্যি তো ও এখন কি করবে। লোকটার সাথে কি যাবে।
নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে
” আমি আপনার সাথে গেলে আপনার কোনো প্রব্লেম হবে না”?
নিলয় মাথা ঠিক করে বাইক স্টার্ড করে করতে করতে বলে
“সেটা আমি বুঝবো। তুমি চলো আমার সাথে”।
মনে ভয় থাকলেও ও লোকটাকে অবিশ্বাস করতে পারলো না। যার জন্য এসেছিলো সে তো ওকে ঠকালো। এখন বাড়ি ও ফিরতে পারবে না।
” কি এতো ভাবছো। আসো”।
ডানে মাথা কাত করে বলে।
মৌনোতা ধীরে ধীরে হেটে এসে না নিলয়ের পেছনে উঠে পরে।
“ভালো করে ধরে বসো। না হলে পরে যাবে”।
“ধরতে হবে না। আমি পরবো না”।
” আচ্ছা তাহলে তোমাকে গোডাওনে নিয়ে যায় ওকে। তোমার জন্য হয়তো ওরা ওয়েট করছে”।
“না.. না.. ধরছি”।
মৌনোতা ওর ডান হাত নিলয়ের ডান কাধের উপর রাখে। নিলয় শয়তানি হাসি দিয়ে বাইক ফুল স্পিডে চালাতে থাকতে।
ও শুধু বিপদে পরেছিলো বলে এই লোকটার কথায় কথায় থ্রেড দেওয়াটা মেনে নিচ্ছে। না হলে এই অসভ্য লোকের কোনো কথা ও শুন্তো না। ও রাগে ফুস্তে থাকে।
“ফুসে লাভ নেই মনিমালা। এখন থেকে তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে”।
” মানে”?
“কি বুঝলাম না। বাইক কি ঘোরাতে বলছো। আমার গোডাওনে যেতে বলছো। একটু ভালো করে বলো বাতাসের জন্য শুনতে পাই নাই ভালো ভাবে”।
মৌনোতা হতাশার শ্বাস ফেলে বললো
” কিছু বলি নেয়। চলেন আপনি”।
_________________________________★
বিশাল ড্রইংরুমে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঝে রয়েছে কাকুলি চৌধুরী। রান্নাঘরে হলুদ আলো জ্বলছে। বিশাল জানালা দিয়ে বাইরে থেকে আলো আসছে। বাড়ির সবাই ঘুমে। চোখ খুলে দেওয়াল ঘরিটির দিকে তাকালো। ঘড়ির কাটা দুইটা পনেরোতে গিয়ে ঠেকেছে। ঘড়ির থেকে চোখ সরিয়ে উঠে দারায়। ডাইনিং টেবিল থেকে গ্লাসে পানি নিয়ে আবারো সোফায় বসে। ছেলেটা কই গেছে৷ এতো রাত করার তো কথা না। যতই বাবার সাথে ঝগড়া করুক। এতোক্ষন বাইরে কাটানোর ছেলে তার না। ফোনটাও ফেলে গেছে। হঠাৎ করে ড্রইংরুমের লাইট জ্বলে উঠে। কাকুলি ঘার ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়। উপর থেকে আরিয়া নেমে এসেছে। তার হাতে পানির বোতল।
“আম্মু তুমি এখনো ঘুম আসো নাই”?
কাকুলি দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
” না ঘুম আসছে না”।
আরিয়া পানি বোতল টেবিলে রেখে মায়ের পাশে বসে।
“ভাইয়া এখনো আসে নাই”?
কাকুলি মাথা নাড়িয়ে না করে। আরিয়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দুইটা একুশ বাজে।
” আম্মু ভাইয়া কে কেনো এতো প্রেসার দেও। ভাইয়া ওই মেয়েটাকে বিয়ে করবে না”।
কাকুলি বিরক্ত কন্ঠে বলে
“তাহলে ওর যাকে পছন্দ তাকে নিয়ে আসুক। ও কেনো বিয়ে করবে না আমাকে সেটা বুঝা। ওর কাউ কে পছন্দ থাকলে বলুক। আমার আর ভালো লাগে না অদের বাপ ব্যাটার যুদ্ধ”।
” আব্বু ওই মেয়েটার মাঝে কি এমন দেখেছে যে তাকেই বউ বানিয়ে আনবে? আর সারা আপু ও দেখতে ভালো ভাইয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক। তাদের ফ্যামিলি ব্রাকগ্রাওনড ও ভালো”।
“চুপ কর ভালো লাগে না আমার। ওদের বাপ ব্যাটার যুদ্ধে কষ্ট পাই আমি। সব জালা আমার। এখন পর্যন্ত ছেলেটা বাড়ি ফেরে নি আর জেগে বসে থাকতে হচ্ছে আমার। জালা তো”
কথা শেষ করার আগেই কলিংবেল বেজে উঠে।
“ওইতো ভাইয়া মন হয় এসেছে। তুমি বসো আমি যাচ্ছি”।
আরিয়া দরজা খুলতে চলে যায়।
চলবে…
★তোয়ামনি