নীলমনি পর্ব ৫

0
79

নীলমনি ~৫

সাহেরা খাতুন নাতি বউয়ের কাছে যায়। লালা শাড়ি পরা মেয়েটা কে দেখে বড় খুশি হয়। দুই হাত মুখ ধরে বলে
“মাশাল্লাহ। আল্লাহই তোমারে বাচিয়া রাখুক”।
নিলয় দাদিকে জরিয়ে ধরে কানের কাছে গিয়ে বলে
‘সরি বেবি তোমাকে না জানিয়ে বিয়েটা করে ফেললাম। তুমি কিছু মনে কর না’।
মৌনোতা নিলয়ের দিকে চোখ গরম করে তাকায়। তাদের তো বিয়ে হয় নাই। তাহলে এই ভিলেন্টা এই সব কেনো বলছে। নিলয় তা আর চোখে দেখে শয়তানি হাসি দেয়।
সাহেরা খাতুন নাতির গাল ধরে বলে
‘না আমি কিছু মনে করি নাই। কিন্তু মেলা বড় কইরা অনুষ্ঠান করতে হইবো। আমার নাতি বিয়া করছে বলে কথা’।
‘হুম অবশ্যই বেবি। তুমি যা বলবা তাই’।
নিলয় মৌনোতাকে ইশারা করে দাদির পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে। ওরা দুই জন এক সাথে সালাম করে। সাহেরা খাতুন দুই জনকে দুই হাত দিয়ে ধরে।
” আল্লাহরে সালাম কর। আমারে না’
দুই জন উঠতে গিয়ে নিলয় মৌনোতার মাথার সাথে নাকে জোরে ধাক্কা খায়। নাক মুখ কুচকে ফেলে। মৌনোতা ঘাবরে যায়। আর চোখে নিলয় কে দেখে। নিলয় ওর দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। তা দেখে মৌনোতা মনে মনে শয়াতানি হাসি দেয়। সাহেরা খাতুন তারা দেয় বরণ ডালা আনার জন্য। সাহেরা খাতুন সরতেই নিলয় মৌনোতার কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে
“তোমার ভাগ্য ভালো যে এখেয়ানে দাদু ছিলো। তা না হলে এক্ষুনি তোমার মাতথার খুলি উড়িয়ে দিতাম”।
মৌনোতা চোখ মুখ শক্ত করে বলে
‘দোষ কি আমার না আপনার? আপনি উঠতে গিয়ে চোখে দেখলেন না’।
নিলয় ভ্রু বাকা করে বলে
” তোমার একটু দেখে উঠলে সমস্যা কি হতো’?
মৌনোতা অন্য দিকে ফিরে বলে
“কে জানে আপনার নাক শিয়ালের মত সামনে দিকে বেশি থাকে। আমি জানলে একটু পর উঠতাম। আপনি থাকেন কি ভাবে এই নাক নিয়ে। ইসসস কতই না কষ্ট হয়’।
মৌনোতা দুঃখী হওয়ার ভান করে ভরলো। নিলয় দাতে দাত চেপে বললো
‘বাজে কথা বন্ধ কর। তা না হলে’
নিলয় কথা থামিয়ে পকেটে হাত দিয়ে শয়তানি হাসি দেয়। মৌনোতা আর চোখে ওর ভাব দেখে মুখ বাকায়। মনে মনে আওরায়
‘ভিলেন’।
বুলবুলির মা মিষ্টি দুধ নিয়ে আসে। বুলবুলি আজ গ্রামে গেছে। তাই ওর মা এসেছে। সাহেরা কাকুলি কে বলে ওদের ঘরে নিয়ে আসতে। কাকুলি ছেলে আর ছেলের বউ কে মিষ্টি দুধ খাইয়ে ঘরে প্রবেশ করায়। পাশ থেকে আরিয়া এসে মৌনোতার হাত ধরে। মৌনতা তাকে দেখে হাসার চেষ্টা করে। কাকুলি অন্য হাত ধরে। তার পর বাচ্চু চৌধুরী কে সালাম করে। বাচ্চু চৌধুরী নাতবোউ কে দোয়া করে। তার পর জোরে ডাকে
‘পার্টনার। পার্টনার কই তুমি। আমার লকার থেকে ওই বক্স টা নিয়ে আসো। আমার নাত বউয়ের মুখ দেখের আগে আমি তাকে সম্মান করতে চাই। তারাতাড়ি নিয়ে আসো’।
বাচ্চু চৌধুরীর কন্ঠে পেয়ে নিচ তালার একটা ঘর থেকে এক লোক কামান হাতে হাতে নিয়ে আসে।
‘কই ডাকাত এখনি এই কামান দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলবো’।
মৌনোতার দিকে কামান নিশানা করে বলে
‘এই সেই ডাকাত। আমি এক্ষুনি গুলে করে দিবো’।
মৌনোতা ভয় পেয়ে যায়। বাচ্চু চৌধুরী ধমকে উঠে। ‘তোপাজ্জল থামো। তোমাকে কামান নিয়ে বের হতে বলছে কে। এইটা আমার নাথ বউ। যাও তুমি আমার লকার থেকে বক্সটা নিয়ে আসো। তোপাজ্জল কামান নামিয়ে জ্বীব কামর দেয়
‘আল্লায় আমারে মাফ করো। এইডা কি করতে যাইতাছিলাম’।
সে কামান কাধে নিয়ে সিরির দিকে অগ্রসর হতেই আতকে উঠে।
‘কিকিকিকিকিকি নিলয় বাবার বউ’।
সে ঘুরে তাকায় মৌনোতার দিকে।
‘সত্যি এডা। নিলয় সত্যি বিয়ে করেছে’।
সে অবাক হয়ে যায়। বাচ্চু আবার ও ধমকে উঠে ‘কি হলো পার্টনার যাও। আগে বক্স টা নিয়ে আসো।আমার নাতবউয়ের মুখ তো দেখতে হবে’।কথা টা তোপাজ্জলের কানেই পৌছাইনি। সে এক দৃষ্টিতে মৌনোতাকে দেখছে। বাচ্চু চৌধুরী বিরক্ত হয়ে তোফাজ্জলের কাছে যায়। তার হাত থেকে আস্তে করে কামান্টা নিয়ে তোপাজ্জলের দিকে নিশানা করে বলে
‘এক্ষুনি যাও তা না হলে তোমাকে উড়িয়ে দিবো’।
তোপাজ্জল ভয় পেয়ে যায়। ঢোক দিলে বলে
‘যাচ্ছি চৌধুরী’।
সে এক ছুটে উপরে চলে যায়। বাচ্চু চৌধুরী এসে উঠে। মৌনোতা বাদে বাকি সবাই হাসে। মৌনোতার অসস্থি বোধ হয়। ও কোথায় এসে পরলো। কাকুলি মৌনোতার দিকে তাকিয়ে বলে
‘এই সব এই বাড়িতে প্রায় হয়। আসো বসো’।
কাকুলি মৌনোতাকে সোফায় বসিয়ে দেয়। রোহান আর হিয়া দৌরে আসে।
‘নতুন ভাবি তুমি অনেক সুন্দর। আমাদের সাথে একটু কথা বলো। সবার সাথেই তো বললা।
মৌনোতা মুচকি এসে অদের কাছে টনে নেয়।
‘তোমাদের নাম কি’।
‘আমার নাম হিয়া ওর নাম রোহান’।
‘তোর নাম তুই একা বল আমি আমার নাম বলতে পারি’।
‘আমি বলেছিতো কি হয়েছে’।
‘না তুই আমার নাম কেন বলবি’।
‘নতুন ভাবি তুমি একজন একজন করে নাম জিগাও’।
মৌনোতা অদের কান্ড দেখে হাসে।
‘আচ্ছা’।
একবার রোহানের দিকে তাকিয়ে বলে তোমার নাম কি?
আরেকবার হিয়ার দকে তাকিয়ে বলে ‘তোমার নাম কি?
‘হিয়া। রোহান’।
ওরা এক সাথে বলে। শিউলি অদের ঝগড়া দেখে বলে
‘তারাতারি ঘরে চল। এখন ঘুমাবি অনেক রাত হয়েছে’
‘আম্মু আজ নতুন ভাবির কাছে থাকি’।
‘নতুন ভাবি আমাদের বাড়িই থাকবে। প্রতিদিন শুতে পারবি এখন চল’।
হিয়া রোহান মৌনোতা কে জরিয়ে ধরে বলে
‘সত্যি আমাদের বাসায় থাকবে’।
মৌনোতা মাথা নাড়ায়। দুই জন মৌনোতার গালে চুপা দিয়। মৌনোতা এওনক খুশি হয়। ও ও অদের কপালে চুপু দেয়। তার পর বলে
‘গুড নাইট নতুন ভাবি’।
‘গুড নাইট’।
ওরা চলে যায়। কাকুলি মৌনোতাকে জিজ্ঞাস্যা করে
‘তোমার নাম কি মা’
মৌনোতা মিষ্টি করে এসে বলে
‘মৌনোতা’।
‘বাহ অনেক সুন্দর নাম। আমার ছেলেটাকে দেখে রেখো। আমার ছেলেটা অনেক ভালো। সব সময় আগলে রেখো’।
মৌনোতা মনে মনে তচ্ছিল্যের হাসি দেয়। এই ছেলে কিনা ভালো। এক নম্বারের ভিলেন। নিলয় ঘরর যেতে চাইলে সাহেরা বেগম তাকে আটকিয়ে দেয়। বলে মৌনোতার পাশে বসতে। ইচ্ছা থাকা না সত্বেও ও মৌনোতার পাশে বসে। মৌনোতা আর চোখে নিলয় দেখে মিনমিনিয়ে বলে
‘দূরে বসুন’।
নিলয় শয়তানি হাসি দিয়ে মৌনোতার আরো কাছে এসে বসে। মৌনোতার ঢোক গিলে। নিলয় ওর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে
‘চিন্তা কর না মনি মালা। হালাল সনদ ছাড়া আমি তোমার আসে পাশে ও ঘেসবো না’।
তার পর এক শয়তানি হাসি দেয়। মৌনোতা চোখ গরম করে তাকায়।
‘কিসের হালাল সনদ। আপনার এই আশা কনো দিন পূরণ হবে না। আমি এক্ষুনি সবাইকে বলে দিবো যে আমাদের কনো বিয়েটিয়ে হয় নেই’।
নিলয় মৌনোতার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে শয়তানি এক হাসি দেয় তারপর কাকুলির উদ্দেশ্যে বলে
‘আম্মু আমরা যে বিয়ে করেছি তার কোনো প্রমান নেই। শুধু রিমন আর আসিফ জানে। তো তোমার উচিত আমাদের বিয়েটা বড় করে দেওয়া। সবাইকে সাক্ষী রাখা’।
মৌনোতার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ওর শরীর লোম দাঁড়িয়ে যায়। লোকটা বলে কি। সত্যি সত্যি ওদের বিয়ে হবে নাকি। ও ঢোক গিলে। কাকুলি বলে
‘আমি কালই সব ব্যাবস্থা করছি। আমার ছেলে বিয়ে করেছে আর আমি কিনা অনুষ্ঠান করবো না। আমি এক্ষুনি তোর আব্বু কে বলছি’।
কাকুলি উঠে চলে যায়।
‘আপনি কি পাগল হলেন কি বলছেন এইসব’!
‘এত সুন্দুরি বউ রেখে আমার রাতে ঘুম হবে না। তাই হালাল সনদ টা বানিয়ে নিচ্ছি’।
মৌনোতা রাগে ফোসতে থাকে। সাহেরা মৌনোতার পাশে বসে বলে
‘আমার নাতিরে দেইখা রাখিছ। অনেক ভালোবাসিস’।
ভালোবাসার কথা শুনে মুখ বাকায় মৌনোতা। নিলয় তা দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে
‘চিন্তা কর না বেবি তোমার নাতনি ভালো না বাসেল ও আমার ভালোবাসায় তোমার নাতনি পাগল হয়ে যাবে’।
‘ঠিক আমার নাতি বলে কথা বউ কে তো ভালোবাসতেই হবে’।
বলে বাচ্চু চৌধুরী। সে নাটির সামনে এসে বসে
দাদা নাতি এক সাথে হাসে। তোপাজ্জল বক্স নিয়ে এসে বাচ্চু চৌধুরীর হাতে দেয়। বক্সটার আকৃতি ছোট। তবে সেটা সোনার। তার মধ্যে এক লক্ষ টাকা। সে সেটা মৌনোতার হাতে দিয়ে বলে
‘এই সামান্য উপহার দিয়ে আমি আমার মাত বউ কে দোয়া করলাম’।
মৌনোতা ঘাব্রে যায়। এই জিনিস্টা তো তার পাওয়ার কথা না। সে তো নিলয়ের বউ না।
‘দাদা ভাই আমার….’
মৌনোতা কথা শেষ করতে পারে না। তার আগেই বাচ্চু সেটা তার হাতে তুলে দেয়। নিলয় হিংসার ভাব করে বলে
‘দাদাভাই এইটা ঠিক না। আমি যদি বিয়ে না করতাম তাহলে বউ টা পেতে কোথায়। তাহলে তোমার উচিত এটা আমাকে দেওয়ার’
বাচ্চু চৌধুরী জোরে হাসে।
‘আচ্ছা তোকেও দিবো’।
উপর থেকে কাকুলি এসে বলে
‘অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন জার জার ঘরে যাও। বাকি কাজ কাল হবে। আমার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান অনেক বড় করে হবে। কি বলেন বাবা’।
‘হুম অবশ্যই। পার্টনার চলো আমরা কাজে লেগে পরি। মিশন নাতির বিয়ে’।
কথাটি বলে সে তোপাজ্জল কে নিয়ে উঠে চলে যায়।
‘ও বউ উঠো। আরিয়া যা অকে নিলয়ের ঘরে দিয়ে আয়’।
মৌনোতা কেপে উঠে। তাদের তো বিয়ে হয় নাই। বিয়ের আগে পর পুরুষের সাথে সে থাকবে। তার সারা অঙ্গ কেপে উঠে। ও ঘামতে থেকে। নিলয় ওর অস্থিরতা টের পেয়ে শয়তানি হাসি দেয়। ফিসফিস করে বলে
‘মনিমালা……। কি বলো থাকবে আমার সাথে বিয়ের আগেই’
নিলয়ের কথায় কেপে উঠে মৌনোতা। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিলয়ের দিকে। নিলয় ডানে বামে মাথা কাত করে। তার পির কাকুলির উদ্দেশ্যে বলে
‘আম্মু তোমাকে কি বলাম। বলাম না আমাদের বিয়ের কোনো প্রমান নেই। ও আজ আরিয়ার সাথে থাকুক। কাল সবাইকে সাক্ষী রেখে বিয়ে হওয়ার পরি এক সাথে থাকবো’।
কথাটি বলে উঠে চলে যায় নিলয়। মৌনোতা চাপা শ্বাস ফেলে।
‘চল ভাবি আজ আমরা এক সাথে থাকবো’।
আরিয়ার সাথে উপরে চলে যায় মৌনোতা। সাহেরাও নিজের ঘরে চলে যায়।

চলবে…
★তোয়ামনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here