#নীলমনি
#তোয়ামনি
#পর্বঃ৩৪
[কপি করা নিষেধ ]
নীলমনি ~৩৪
গোডাউনে বসে সিগারেট খাচ্ছে নিলয়। ওর মাথায় কাজ করছে না এত বড় ভুল কি ভাবে হলো। সত্যি কি ওই মেয়েটা মৌনোতার বোন। যদি তাই হয় তাহলে মেয়েটার কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে ও মৌনোতাকে কি উত্তর দিবে। ও চেয়ারে হেলান দিয়ে সিগারেটের টান দীর্ঘ করে৷ অসহ্য লাগছে। এত প্রেসার আর নেওয়া যাচ্ছে না। পকেট থেকে ফোন বের করে মৌনোতার একটা ছবিতে দৃষ্টি স্থির করে। যেখানে মৌনোতা আয়নার সামনে বসে চুলে বেনি করছিলো। মৌনোতার দৃষ্টি চুলের দিকে ছিলো বলে ও লুকিয়ে ছবিটা তুলেছে। যে মানুষ গুলা ভাগ্যে থাকে না তাদের সাথে কেনো দেখা হয়? যাদের জন্য গোছালো জীবনটা এলোমেলো হয়ে যায়? আজ যদি মৌনোতার সাথে দেখা না হতো তাহলে ওর জীবনটা স্বাভাবিক ভাবেই চলতো। ও ফোন বুকে নিয়ে চোখ বুঝে ডাকে ‘আসিফ’। আসিফ বাইরেই ছিলো। নিলয় কাউকে ভেতরে আসতে বারণ করেছে। ভেতরে এসে বলে ‘হুম’।
‘ওই মেয়েটাকে যেভাবে পারিস তে নিয়ে আয়’।
আসিফ ভ্রুতে ভাজ ফেলে বলে ‘কোন মেয়েটা’?
‘নুহাশের সাথে যে মেয়েটার বিয়ে হয়েছে’।
‘তর মাথা ঠিক আছে? কি বলসিস ভেবে বলছছ’?
‘আমার ভাবা হয়ে গেছে। তুই আর কথা না বারিয়ে চুপ চাপ তুলে নিয়ে আয়’।
‘কিন্তু আমাদের প্লান তো অন্য ভাবে ছিলো’?
নিলয় চোখ মেলে বলে
‘ওই মেয়েটার গায়ে যদি এক ফোটা আচ ও লাগে আমি মৌনোতাকে কোনো জবাব দিতে পারবো না। আর তুই জানিস আমি মৌনোতাকে কতটা ভালোবাসি। আমি ওকে খুশি দেখতে চাই। ওর ওই হাসি মুখটাই আমার সব ক্লান্তি, হতাশা দূর কররার এক মাত্র পন্থা’।
বেল্কনিতে উদাস চিত্রে বসে রয়েছে মৌনোতা। বিকেল থেকেই ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে বিদুৎ ও চমকাচ্ছে।
কাল বোনটার এত কাছে গিয়ে ও একটা বার কথা হলো না। সত্যি কি ও অনিমা ছিলো। তাহলে নিলয় কেনো কথা বলতে দিলো না। অনিমার সাথে কাটানো সময় মনে পরতেই ওর দুই চোখ থেকে গাল বেয়ে পানি নামে। রুমের লাইট জ্বলে উঠতেই ও অস্থির নয়নে রুমের দিকে তাকায়। নিলয় এসেছে। ও ছুটে রুমে যায়। কাক ভেজা হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতের ঘড়ি খুলাছে নিলয়। মৌনোতা শান্ত কন্ঠে বলে
‘ভিজলেন কি ভাবে গাড়ি নিয়ে জাননি’?
নিলয় ওর কথার উত্তর না দিয়ে টাওয়েল নিয়ে ওয়াশ্রুমে চলে যায়। মৌনোতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিচে চলে যায়।
ভিলেনটার কি যেনো হয়েছে। কাল ওই বাড়ি থেকে আসার পর মৌনোতা অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছে কেনো অনিমার সাথে ওকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। নিলয় কোনো উত্তর দেইনি। এমন কি সকালে ও ওর সাথে কথা বলিনি।
মৌনোতা অনেক্ষন যাবৎ খাবার নিয়ে টেবিলে অপেক্ষা করার পর ও নিলয় উপর থেকে নামে না। আরো কিছুক্ষন বসে থাকার পর বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায়। লোকটা এত অসভ্য বলার বাইরে। ও খাবার নিয়ে উপরে চলে যায়।
রুমে ঢুকে ওর কপালে ভাজ পরে। লাইট অফ। ভিলেনটা কি ঘুমিয়ে পড়েছে। অন্ধকার রুমে কিঞ্চিৎ আলোয় ফোন বেজে উঠে। ও দেওয়াল হাতরে সুচ বোর্ডে খুজে লাইট অন করে। নিলয় রুমের কোথাও নেই। ফোন আবারো বেজে উঠে।
ও খাবার টেবিলে রেখে বেলকনিতে যায়। নাহ বেল্কনিতে নিলয় নেই। ও ওয়াশ্রুমে খোজে না ওই খানেই ও তো নেই। মৌনোতা আরো বিরক্ত বোধ করে। ভিলেনটা গেলো কয়। বিছানার উপরে ফোনটি আবারো বেজে উঠে। মৌনোতা ধীর পায়ে সেই দিকে গিয়ে ফোনের দিকে উকি মেরে দেখে কে কল করেছে। আসিফ। এত বার কল দিচ্ছি! ও নিলয়ের ফোন কখনই ধরে না। এইবার ও তার ব্যাতিক্রম হলো না। ও চোখ সরিয়ে নেয়। তখনি একটা এসেমেস আসে ফোনে। মৌনোতা আবারো তাকায় ফোনের দিকে। নোটিফিকেশনে চোখ পড়তেই ও দেখে তাতে লেখা
‘বা**ল তুই ফোন ধরছ না কেন? মেয়েটাকে….’
‘মেয়েটাকে’ ওর চোখ পড়তে ওর বুক ধক করে উঠে। কি দেখলো ও। মৌনোতা ফোন হাতে নিয়ে ফোন খোলে স্কিনে ভেসে উঠে লেখাটি। ও ফোন আনলক করার চেষ্টা করে তবে তা পারে না। মেয়ে মানে! মৌনোতার শরীর অস্বাভাবিক ভাবে কাপুনি দিয়ে উঠে। ও অনুভব করে ওর গলা ধরে এসেছে। ঘামছে শরীর। গাল বেয়ে পানি পরছে। ও বিশ্বাস করতে পারছে না ভিলেনটা ওকে ঠোকাবে। ও ফোন বিছানার উপরে রেখে বেল্কনিতে যায়। অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে আর্তচিৎকার করে উঠে।
‘আল্লাহ…আল্লাহ… তুমি এটা করো না। প্লিজ। আমি উনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। প্লিজ আল্লাহ আমি ব্যাতিত আর কোন নারী ওনার জীবনে এনো না। আ..আল্লাহ কেউ না জানুক তুমি তো জানো আমার মনের কথা। তুমি তো জানো আমি উনাকে কতটা ভালোবাসি। আমি মরে যাবো আল্লাহ প্লিজ তুমি এটা করো না……’।
মৌনোতা কাদতে কাদতে ফ্লোরে বসে পরে। অস্বাভাবিক ভাবে ফোপাতে থাকে। ও প্রথমবারের মত অনুভব করে ও নিলয়কে কতটা ভালোবাসে। ওর দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। ও বিশ্বাস করতে পারছে না ও ব্যাতিত অন্য কোন নারী নিলয়ের জীবনে আছে। না ভিলেনটা ওকে ঠোকাতে পারে না। ওর নিজেকে উন্মাদ মনে হয়।
নিলয় রুমে ঢুকে বেল্কনি থেকে কারো ফোপানো আওয়াজ পায়। ও ভ্রু কুচকিয়ে ছুটে বেল্কনিতে যায়। মেঝেতে বিধস্ত অবস্থায় মৌনোতাকে দেখে অস্থিত কেপে উঠে ওর। ও মৌনোতার সামনে বসে ওর দুই বাহু চেপে ধরে বলে
‘মনিমালা!?
মৌনোতা নিলয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে হিংস্র বাঘিনীর মত ওর বুকের উপর ঝাপিয়ে পরে। নিলয়ের পিঠের গেঞ্জি দুই হাত দিয়ে খামছে ধরে। নিলয় ওকে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। অস্থির কন্ঠে বলে
‘কি হয়েছে মনিমালা!? এমন করছো কেনো’?
মৌনোতা চিৎকার করে উঠে উন্মাদের ন্যায় কন্ঠে বলে
‘আমি আপনাকে ভালোবাসি…। প্লিজ আমাকে ছেড়ে কোথাও হারিয়ে যাইয়েন না। (মৌনোতা মুখ তুলে বলে) আপনার কাছে হাত জোর করি আমাকে ছাইরেন না। আমি আর কখনো ঝগড়া করবো না। কখনো কোনো বায়না করবো না। প্লিজ আপনার দুটি পায়ে পরি আমার সাথে সারাটা জীবন থেকে যান…..। প্লিজ’।
বলতে বলতে মৌনোতা আবারো নিলয়ের বুকে শুয়ে পরে। মৌনোতার বলা প্রতিটি কথা নিলয়ের বুকে তীরের মত বিধে। মেয়েটা কেমনো এমন উন্মাদের মত করছে।
‘মনিমালা শান্ত হও তুমি। কি হয়েছে তোমার’।
মৌনোতা নিলয় কে ছেড়ে ওর হাত নিয়ে ওর মাথায় নিয়ে বলে
‘আমাকে ছুয়ে বলেন আমি আর আপনার মা ব্যাতিত আর কোনো নারীকে ভালোবাসবেন না। যত কষ্ট হক আমার সাথে সারাটা জীবন থেকে যাবেন’।
‘হুম যাবো। তুমি আগে শান্ত হও’।
মৌনোতা আবারো উন্মাদের মত নিলয় কে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে।
‘আমাকে ছেড়ে যাইয়েন না প্লিজ’।
মৌনোতা ফোপাতে থাকে। বার বার এই কথার পুর্নাবৃতি করতে থাকে। নিলয় ওর মাথায় হাত বুলাতে থাকে। হঠাৎ মেয়েটা কেনো এমন উন্মাদেরর মত আচরণ করছে ও বুঝতে পারে না। ও আর কিছু জিজ্ঞাসা করে না মৌনোতাকে। মেয়েটা অন্য কোনো ঘোরের মধ্যে আছে। আগে শান্ত হক।
চলবে…
®তোয়ামনি