নীলমনি পর্ব ৩৩

0
129

#নীলমনি
#তোয়ামনি
#পর্বঃ৩৩
[কপি করা নিষেধ]
নীলমনি ~৩৩
আরিয়া বিয়ে বাড়ি জাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। রিমন সকালের দিকে এসেছে। ও পাঞ্জাবি পড়ে বিছানায় বসে ফোন স্কোল করছে। আরিয়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে ভেজা চুলের প্যাচ ছাড়াছে। লাল শাড়িতে অপরুপ লাগছে আরিয়া কে। ওর পা আগের থেকে অনেক সুস্থ। তবে বাম পায়ে চাপ বেশি পড়েছিলো। তাই এইটা সারতে সময় লাগবে। তবে খুশির সংবাদ হচ্ছে ডাক্তার বলেছে ডান পায়ে ভর দিয়ে আবার হটতে পারবে। রিমন ফোন রেখে বউয়ের পাশে বসে৷ চিরুনি নিয়ে বলে দেউ আমি করে দেয়। রিমন আয়নায় আরিয়াকে দেখতে দেখতে বলে
‘উফফ বউ কানে একটা ফুল লাগালে আরো বেশি সুন্দর লাগতো। তুমি আমাকে আগে কেনো বলো নি’।
আরিয়া লজ্জায় মাথা নিচু ঠোঁট প্রস্ত করে হাসে।
‘যাওয়ার সময় মনে করো কোনো ফুলের দোকান পেলে একটা ফুল কিনে তোমার কানে গুজে দিবো”।
গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ি পরেছে মৌনোতা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক গয়না দেখেই যাচ্ছে কোনটা পড়লে বেশি মানাবে। নিলয় ওর পেছনে পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে ওকে দেখছে। ও খেয়াল করিনি নিলয় ওর পেছনে। নিলয় ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে একটা ঝুমকা হাতে নিয়ে বলে
‘সেই ফজরের আজান থেকে শুরু করেছো সাজ। এখনো শেষ হলো না’।
মৌনোতা মুখ বাকিয়ে বলে
‘আপনি দেখছেন আমাকে ফজরের সময় থেকে সাজতে’?
‘তা নয়তো কি? এক বছর পড় একটা অনুষ্ঠান হবে সেটা শোনার পড় সেই দিন থেকে সাজ গোজ শুরু করে মেয়েরা। তবু ও অনুষ্ঠানের দিন কি পড়বে কিভাবে সাজবে সেটা খুঁজে পায় না। আর আমাদের দেখো দুই মিনিট পড় একটা অনুষ্ঠান শুরু হবে সেটা শোনার পড় এক মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে সবার আগে পৌঁছিয়ে যাই’।
‘হয়ছে আর গুনো গান গাইতে হবে না। যতসব’।
‘এইটা গুনোগান না। এইটা আমাদের জন্মগত টেলেন্ট। যেটা তোমরা মেয়েরা বুঝবে না। আর বলে লাভ নেই। এমনিতেই মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা একটু বেশি টেলেন্টেড হয় সব বিষয়ে’।
মৌনোতা রাগে ফোসতে ফোসতে বলে
‘একদম বাজে কথা বলবেন না। কোন বিষয়ে আপনারা আমাদের থেকে বেশি টেলেন্টেড’।
নিলয় শয়তানি হাসি দিয়ে বলে
‘তেলাপোকা দেখার পর তোমরা মেয়েরা বলো আ আ আ ওরে বাবারে ওরে মারে আমারে খেয়ে ফেললো রে। কখনো দেখছো কোনো ছেলেকে তেলেপোকা দেখার পর ছাগলের বাচ্চার মত ম্যা ম্যা করতে’।
মৌনোতা দাতে দাত চেপে বলে
‘তেলেপোকা উড়তে দেখলে ভয় লাগে। যদি শরীরে এসে পড়ে তাই। তাছাড়া ওই সব দেখে কেউ ভয় পায়না’।
‘আর আমাদের শরীরে উড়ে এসে বসলে আমরা একটা পাঞ্চ করে সেলফি তুলে ফেলি’।
মৌনোতা নিলয়ের কাধে হাত রেখে ঝারতে ঝারতে বলে
‘হুম আমরা পাত্তা দেইনা দেখেইতো তো তেলাপোকার সাথে সেল্ফি তুলেন’।
নিলয় পাঞ্জাবির কলার টান টান করে বলে
‘শোনো তোমরা মেয়েরা যে একা কিছু করতে পারো না তার হাজার টা প্রমান আছে। তোমার কোন প্রমান চাই সেটা বলো’।
মৌনোতা দুই ভ্রুর মাঝে ভাজ ফেলে বলে
‘মানে’?
‘তোমরা মেয়েরা আজ পর্যন্ত একা শাড়ি পরতে পেরেছো? বা একা রান্না করতে পেরেছো? কেউ না কেউ তো শিখিয়ে দেয়। আর আমাদের দেখো আমরা জন্ম থেকেই সব শিখে আসি। কখনো কোনো কাজে কারো হেল্প লাগে না’।
‘চুপ করুন। আপনি যান এখান থেকে। আপনাকে এখানে কে আসিতে বলেছে’।
নিলয় ঝুমকাটা মৌনোতার কানের সাথে ধরে বলে
‘নেও এইটা পর। আর এত দেখার কি আছে তুমি যেটা পর ওইটাতেই তোমাকে সুন্দর লাগে’।
‘আপনাকে বলে দিতে বলিনি কোনটা পরবো’।
মৌনোতা ঘুরে আবার আয়নার দিকে দাঁড়ায়।
নিলয় ঝুমকা জোড়া ওর সামনে দিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে ফোন নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। চেতানো গেছে বউকে। আজ সারাদিন ভালো কাটবে।
মৌনোতা দাতে দাত চেপে নিলয় কে মনের স্বাদ মিটিয়ে বকে। কত বড় অসভ্য হলে এই রকম পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে আসে। অসভ্য ভিলেন।
ও আরো কয়টা ঝুমকা দেখে। নাহ কোনোটাই পছন্দ হচ্ছে না। ও নিলয়ের রাখা ঝুমকাটার দিকে তাকায়। ওইটা কানে নিয়ে দেখে। এইটা সুন্দর লাগছে। ভিলেনটা একটু অসভ্য ঠিক কিন্তু পছন্দ খারাপ না। ও আর কিছু না ভেবে সাজ শেষ করে নিচে নামে।
শিউলি চৌধুরী বাড়ি নেই দেখে কাকুলি চৌধুরী যাবে না। আরিয়া, মৌনোতা, নিলয় আর রিমন যাবে। নিলয় গাড়িতে বসে ছিলো। মৌনোতা আসতেই কানে কানে বলে
‘আমার পছন্দ কত সুন্দর দেখছো। দুলটা আমি পছন্দ করে দিয়েছি বলে এত সুন্দর লাগছে’।
মৌনোতা মুখ বাকায়। ওর ইচ্ছে নেই লোকটার সাথে ঝগড়া করার।
ওদের গাড়ি নুহাশ দের বাড়ির সামনে পৌঁছায়। বিশাল বড় বাড়ি। বাবুলাল শিকদারের বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা। খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আজ রিশেপশন। ওরা নামতেই কিছু লোক ওদের ভেতরে নিয়ে যায়। নুহাশ এসে রিমন আর নিলয়ের সাথে হ্যান্ডশেক করে। মৌনোতা কিঞ্চিৎ অবাক হয়। ফ্রেন্ড হয়ে হ্যান্ডশেক করছে। নুহাশ মৌনোতার সামনে এসে বলে
‘আসালামু আলাইকুম ভাবি। কেমন আছেন’?
‘অলাইকুম আসলাম। জ্বি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন’?
‘এইতো। নিলয় আগে লাঞ্চটা করে নে। পরে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া হবে’।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলে ওরা বউ দেখতে আসে। মৌনোতা নিলয়ের দাঁড়িয়ে আছে। একটু দূরে স্টেজে বউ বসে আছে। ভিড় দেখে মৌনোতা বলে একটু পরে যায়। মৌনোতা চোখ ঘুরিয়ে আশে পাশের ডেকোরেশন দেখতে থাকে। স্টেজে ভিড় একটু কোমতেই ওর দৃষ্টি স্থির হয়ে যায় বধুবেশে বসে থাকা কনেটির দিকে। বুক ধক করে উঠে। অতিপরিচিত মুখটি দেখে নিলয়ের হাত শক্ত করে ধরে। ওর শ্বাস ঘন হতে থাকে।
মৌনোতার অস্থিরতা দেখে নিলয় বলে
‘কি হয়েছে শরীর খারাপ লাগছে’?
মৌনোতা অঙুলি ইশারা করে কাপা কাপা কন্ঠে বলে
‘অ……অ………অনি….অনিমা…..’।
নিলয় অবিশ্বাস্য চোখে মৌনোতার দিকে তাকিয়ে বলে
‘মানে? তোমার ওই বোন’?
মৌনোতার চোখের পানি গড়িয়ে পরে। নিলয়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উপরে নিচে মাথা নাড়িয়ে বলে
‘হুম। আপনাকে বলেছিলাম না ওর কথা। মনে আছে ওই যে কথা বলতে চাইছিলাম। ও ওই আমার বোন’।
‘তুমি নিশ্চিত ‘?
‘হুম। কিন্তু… কিন্তু ও এখানে কেনো এলো। আমি..আমি ওর আকছে যেতে চাই’।
মৌনোতা যেতে চাইলে নিলয় বাধা দিয়ে বলে
‘তুমি বাইরে চলো। আমি দেখছি’।
‘দেখছি মানে। এত দিন পর আমার বোনের সাথে দেখা হলো আর আমি কথা বলবো না। সরুন আপনি ‘
‘মৌনোতা……. ‘
জোরে ধমকে উঠে নিলয়। মৌনোতার হাত শক্ত করে ধরে বাইরে নিয়ে যায়।
‘আপনি এই ভাবে কেনো নিয়ে আসলে আমাকে। আমি কথা বলতে চাই ওর সাথে’।
‘কোনো কথা না। বাসায় চলো’।
‘প্লিজ’।
নিলয় মৌনোতার হাত ধরে গাড়িতে উঠায়। রিমন কে কল করে গাড়ির কাছে আসিতে বলে। নিলয় গাড়িতে উঠে। রিমন আরিয়া কে নিয়ে এসে বলে
‘কি হয়েছে’?
‘বাসায় যাবো তারাতাড়ি গাড়িতে উঠ’।
‘কিন্তু’।
নিলয়ের চোখ গরম দেখে রিমন আর কিছু বলে না। গাড়ি স্টার্ড দেয়।
চলবে…
®তোয়ামনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here