#নীলমনি
#তোয়ামনি
#পর্বঃ৩০
[কপি করা নিষেধ ]
নীলমনি ~৩০
তোপাজ্জলের ঘরে সবাই হাজির হয়েছে। হঠাৎ করেই তার বুকে প্রচন্ড ব্যাথা উঠেছে। ব্যাথা একবার বুক থেকে পিঠে যাচ্ছে একবার বুকে আসছে। প্রচন্ড ঘামছে সে। বাচ্চু চৌধুরী হস্পিটলে নিয়ে যেতে চেয়েছেন কিন্তু সে যাবেন না। শুয়ে রয়েছে। সে বাচ্চু চৌধুরীকে বলেছে একবার গ্রামে যাবে। তার ভালো লাগছে না। তার নাতনি নাকি ফাস নিয়ে মারা গেছে। বাচ্চু চৌধুরী তৌফিকে গাড়ি বের করতে বলেছে। গাড়ি বের করে তৌফিক ছুটে এসেছে। তোপাজ্জল আর দেরি না করে বেরিয়ে যায় গ্রামের উদ্দেশ্যে।
মৌনোতা আরিয়ার ঘরে থেকে রুমে এসে দেখে নিলয় রুমে নেই। নিলয় তো ওর আগে রুমে এসেছে তাহলে ভিলেনটা কই গেলো। বেল্কনিতে ও খুজে নাহ ভিলেনটা কোথাও নেই। রুমে এসে ঘরির দিকে তাকায়। সারে এগারোটা বাজে। ভিলেনটার হাপ ভাব ও কিছুই ধরতে পারে না। কে জানে কোথায় গেছে।
‘এখনো সময় আছে আংকেল আপনি সব খুলে বলুন’।
রিমনের কথায় সামনে বসে থাকা বয়স্কলোকটি ফুপিয়ে উঠে। পাশে বসে নিলয় চেয়ারে হেলান দিয়ে বাকা চোখে তাকিয়ে আছে। রিমন নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে
‘তর কি মনে হয় উনি তোদের সাথে বেইমানি করবে? এত বছর ধরে তোদের বাসায় রয়েছে কি ভাবে বেইমানি করবে’?
‘নিলয় বাবা আমি আপনেগো সাথে বেইমানি করি নাই। বেইমানি করা লাগবো দেইখাই আমি চইলা যাইতাছি। আপনে আমারে যাইতে দেন’।
তোপাজ্জল কথাটি বলে চোখের পানি মুছে।
‘আপনি জানেন সত্যি বলা না পর্যন্ত আমি আপনাকে কোথাও যেতে দেবো না। তাই দয়া করে সত্যিটা বলুন। কেনো মিথ্যে বলে বাসা থেকে বের হয়েছেন’?
অনেক রাতে বাড়িতে ফিরলো নিলয়। মৌনোতা ঘুমাচ্ছে। ও ফ্রেস হয়ে আয়নায় মুখ মুছতে মুছতে আয়নাতেই মৌনোতাকে দেখছে। ওর পাশে টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে। ল্যাম্পের হলুদ আলোয় মৌনোতার স্নিগ্ধ মুখ জ্বলজ্বল করছে। ও টাওয়েল চেয়ারে মেলে দিয়ে পকেটে দুই হাত গুজে দাঁড়ায়। ঘুমন্ত মৌনোতাকে সুধায়
“তোমাকে ভালোবেসে আমার ভেতর যে রোগের সৃষ্টি হয়েছে, সেই রোগের ঔষুধ কোথায় গেলে পাবো”?
ও দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ও জানে ওদের পথ কখনো এক হবে না। পথ যখন আলাদাই তাহলে কি লাভ এত ভালোবাসে? কি লাভ এত মায়া করে? কি লাভ এত যত্ন করে আগলিয়ে রাখে? যেখানে শেষে পুরোটাই শূন্যতা নিয়ে বাচতে হয়।
মনে মনে খুব বিরক্ত বোধ করলো নিলয়। মগের মুল্লুক নাকি শূন্যতা নিয়ে বাচিবে। যেখানে শতশত সুন্দরী রমনীরা ওর প্রেমে হাবুডুবু খায়। সেখানে এই পাঁচ ইঞ্চির শুকনা ক্যারকেরা মেয়েনাকি ওকে ভালোবাসার রোগে ভুগিয়ে মারবে। অসম্ভব। নাহ বন্দুকটায় আর কয়েকটা গুলি ভরতে হবে। কবে আবার মরা কান্না উঠায় ‘আমার বয়ফ্রেন্ডর কাছে দিয়ে আসুন’ তার আগেই এই মেয়ের মুখ দিয়ে বার করতে হবে ও ওর জামাই ছাড়া আর কিছু বুঝে না। জামাই ছাড়া আমি কথা বলতে পারি না। জামাই ছাড়া আমি বাথরুমে পর্যন্ত যেতে পারি না। মোট কথা এই মেয়ের মুখে সব সময় জামাই ছাড়া আর কোনো কথা থাকতে পারবে না। ভাবা যায় এত সুন্দর একজন সুদর্শন জামাই থাকতে বউ কিনা অন্য বেডার নাম মুখে নেয়।
বিয়ের পর প্রতিটি মেয়েদর উচিত, কোনো ফুসকাওয়ালা, ফুলের দোকানদারের দিকে ও চোখ তুলে না তাকানো। আর অন্য কারো নাম মুখে আনাতো দূর।
সেখানে তার বউ অন্য বেডার নাম মুখে নিয়ে ঘোরে। কত বড় কলিজা তার বউর।
নিলয় সেন্টার টেবিলের উপর থেকে গিটার নিয়ে বেল্কনির দিকে যেতে যেতে ভাবে
আমার উচিত ছিলো বাসর রাতেই বউকে দিয়ে শপথ করানো। কত বড় মিসটেক হয়ে গেলো। সমস্যাকি আজ থেকে সে এই অভিযানে শুরু হলো। মিশোন বউয়ের মুখে জামাই জামাই ডাক আনানো।
কাল একটা শো আছে। গলটা একটু ঝারানো যাক।
ঘুমের ঘোরে গিটারের মধুর সুর শুনতে পাচ্ছে মৌনোতা। আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে থাকা চোখের পাতা মেলে তাকায়। পাশ ফিরে বেল্কনির দিকে তাকায়। সুরটা তো ওদিক থেকেই আসছে। ভিলেনটাকি তাহলে গান গাচ্ছে।
ও ধরপরিয়ে উঠে বসে। মনের মাঝে শান্তির ফুয়ারা বয়ে যায়। ভিলেনটার কন্ঠে ও হারিয়ে যায় অজানা দেশে। অনেক দিন ধরে গান শোনা হয় না৷ ও ধীরে বিছানা থেকে নেমে বেল্কনিতে যায়।
হাসি মুখে নিলয়ের পাশে বসতে যায়। নিলয় ওকে খেয়াল করে সুর থামিয়ে বলে দাড়াও।
ও হকচকিয়ে যায়। নিলয় গিটার পাশে রেখে ওর সামনে দাঁড়ায়।
‘বলো আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি ব্যাতিত আমি কখনো আর কোনো ছেলের নাম মুখে নেবো না’।
নিলয়ের কথায় মৌনোতা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কি হলো ভিলেনটার কি উলটা পালটা বলছে। ঢোকা গিলে ঝাঝালো কন্ঠে বলার চেষ্টা করে
‘কি…কি বলছেন এই সব। পাগল হলেন’।
‘পাগল হলাম মানে? এত দিন হয়ে গেলো বউয়ের কাছে যেতে পারিনি। আমার আপন বউ, রক্তের বউ কিনা আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে!? এই সব মানুষ শুনলে কি বলবে বলো। আমি আর কিছু শুনতে চাই না তুমি আজ থেকে শপথ করো এত দিন জা করেছো কিন্তু আর নয়। এখন থেকে প্রতিদিন প্রতি সময় আমাকে ভালোবাসবে। আমার কাছে আসবে। আমাকে একটা ফুটবল খেলার টিম বানাতে সাহায্য করবে’।
মৌনোতার কান রে রে করে উঠে। ও জোরে ধমকে উঠে।
‘চুপ করুন অসভ্য লোক। কি বলছেন এই সব। আর রক্তের বউ মানে? বউ কখনো রক্তের হয়’?
নিলয় খুক খুক করে কেশে উঠে বলে
‘ আস্তাগফিরু আল্লাহ। তবা তবা। আল্লাহ মাফ কর। যাই হক তুমি আগে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো’।
‘কখনই না অসভ্য লোক। সব সময় বাজে কথা। আপনি ভিলেন এক নাম্বারের ভিলেন’।
মৌনোতা রুমে আসতে গেলে নিলয় ওর হাত টেনে ধরে ওর কাছে নিয়ে আসে। বুকের সাথে চেপে ধরে শয়তানি হাসি দেয়। মৌনোতা চোখ বন্ধ করে ফেলে। নিলয় কপালের চুল আঙুল দিয়ে সরিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে
‘মরতে না চাইলে আমার ভালোবাসা শিকার কর মনিমালা। তুমি কি ভেবেছো আমাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে চলে যাবে? আর আমি তোমার শূন্যতাই ভুগবো’।
নিলয় হাতের বাধন আরো শক্ত করে। মৌনোতা অস্বাভাবিক ভাবে কাপতে থাকে।
‘আমি যত হিংস্র কিংবা খারাপই হই, সবার ঊর্ধ্বে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কল্পনাতেও ভেবে ও না। বিশ্বাস কর তোমাকে শিকল পরিয়ে ঘরে বন্দি করে রাখবো তবু ও আমার করে রাখবো’।
হাতের বাধন ছেড়ে দিয়ে ডানে বামে মাথা কাত করে বলে
‘তাই ভালই ভালই বলছি আমার ভালোবাসা শিকার কর। অন্যকারোর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফালিয়ে দেও’।
মৌনোতা কিছুই তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর দিতে পারে না। ও শান্ত চোখে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিলয় আর কোনো কথা না বাড়িয়ে গিটার নিয়ে রুমে চলে যায়। মৌনোতা লম্বা করে শ্বাস নেয়। ও জানে নিলয়ের কাছ থেকে ওর নিস্তার নেই। ওর বলা কোনো কথায় মিথ্যে নয়। কিন্তু কোনো হিংস্র লোককি এত ভালো বাসতে পারে?
চলবে…
®তোয়ামনি