#নীলমনি
#তোয়ামনি
নীলমনি ~২৫
বিছানায় শুয়ে বই পরছিলো আরিয়া। তখন ফোনে রিং হয়। ও বইয়ের পাতায় এক আঙুল রেখে বই বন্ধ করে পাশে থাকা ফোনটা তুলে। অপরিচিত নাম্বার দেখে ভ্রু বাকায়। ও সন্দিহান মনে ফোন তুলে সালাম দেয়।
‘আসালামু আলিকুম’।
ও পাশ থেকে চেনা কন্ঠ থেকে সালামের উত্তর আসিতেই বুক ধক করে উঠে আরিয়ার। ও বই বিছানার উপর রেখে দুই পা ভাজ করে বসে পরে।
‘চিনিতে পারছেন ম্যাডাম’?
মৌনোতা মৃদু স্বরে বলে
‘হুম। আপনি নাম্বার কই পেলেন’?
‘আমার শালা দিছে। কেমন আছো’?
‘জি ভালো। আপনি’?
‘ আলহামদুলিল্লাহ। কি করতেছিলা’?
‘এই তো বই পরতে ছিলাম। আপনি ‘?
‘ওহ ডিস্টার্ব করলাম? আচ্ছা পরা শেষ হলে একটা মিসডকল দিও’।
‘না না এমনি বই পরতেছিলাম। পাঠ্য বই না’।
‘কাল যাওয়ার সময় নিলয়ের কাছ থেকে তোমার নাম্বার টা রেখে দিছি’।
আরিয়া চুপ চাপ শোনে। ওর মাঝে জড়াতা কাজ করছে। কথাই আসছে না।
‘কি হলো চুপ রইলে কেনো”?
‘বলুন শুনছি’।
‘তুমি কি সারাদিন ব্যাস্ত’?
‘না না ব্যাস্ত না।
‘আচ্ছা তাহলে বিকেলে দেখা করি’?
আরিয়ার হৃদ স্পন্দন বেরে যায়। ও আমতা আমতা করে বলে
‘ভাইয়া যদি বকা দেয়’।
রিমন স্ব শব্দে হেসে উঠে।
‘দুর পাগলি ও বকা দেবে দেখেই তো এংগেসমেনট টা আগে শেষ করে রাখলাম। তুমি ব্যাস্ত না থাকলে ভাবি কি নিয়ে বের হইয়ো আমি তোমাদের বাসার নিচ থেকে নিয়ে আসবো ওকে’?
আরিয়া মুচকি হেসে বলে
‘ওকে’।
‘ওকে আমাকে একটু বের হতে হবে। এখন রাখি৷ বিকেলে দেখা হচ্ছে৷ আল্লহা হাফেজ’।
‘আল্লাহ হাফেজ’।
আরিয়া ফোন রেখে ঠোঁটে আকা হাসি নিয়ে রিমোনের কথা ভাবে।
মৌনোতা চোখ মুখ কুচকে বিছানার দিকে তাকিয়ে আছে। ও সকালে বিছানাটা গুছিয়ে ছিলো। দুপুর হতে না হতেই এই হাল। এই অসভ্য লোকটা যতক্ষন রুমে থাকে রুমের হাল এই রকম বে হালি হয়। ও নিজেকে বুঝিয়ে আবারো বিছানা গোছাতে যায়। নিলয় শাওয়ার নিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে জেল মাখতে থাকে। একবার আর চোখে মৌনোতাকে দেখে। মৌনোতা চোখ মুকখ কুচকে বিছানা গোছাছে। নিলয় বাইরে থেকে এসে পরনের শার্ট ওয়ালেট সব বিছানার উপর ফেলে ধপাস করে শুয়ে পরেছিলো। মৌনোতা ওয়াসরুমে ছিলো বলে ও শাওয়ার নিতে যেতে পারি নি। ও শুয়ে পরায় বিছানাযে একটু অগোছালো হয়েছে সেটা ওর বুঝতে বাকি থাকে না। সব কিছু বুঝে শয়তানি হাসি দেয় মনে মনে। মৌনোতা নিলয়ের দিকে আর চোখে এক বার দেখে দাত চেপে নিজেকে ধাতস্থ করে। নিলয় জেল মেখে টাওয়াল বারান্দায় মেলে দিয়ে আসে।
কেমন অসভ্য লোক একটা মেয়ের সামনে কি ভাবে খালি গায়ে রয়েছে। নিলয় ফোন চার্জ থেকে খুলে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরে৷ মৌনোতা ড্রেসিং টেবিলর সামনে বসে ভেজা চুল আচরা ছিলো। আর চোখে নিলয় কে দেখে ফোসে উঠে। মাত্র বিছানাটা গুছিয়ে ছিলো। মৌনোতা শান্ত কন্ঠেই বলে
‘দয়া করে বিছানাটা অগোছালো কইরেন না। মাত্র গুছিয়েছি’।
নিলয় ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আর চোখে মৌনোতাকে দেখে। কথাটা শুনে ও না শোনার ভান করে বলে
‘কিছু বলে’?
মৌনোতা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ এক শ্বাস নিলো। চোখ খুলে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল
‘বলেছি বিছানাটা মাত্র গুছিয়েছি। এলো মেলো কইরেন না’।
নিলয় পাশ থেকে দূরে থাকা কোলবালিশ টা টেনে হেচরীয়ে নিয়ে এসে বলে ওকে।
কোলবালিশ টা ওই ভাবে আনায় বিছানার চাদর কিছুটা গুছিয়ে যায়।
মৌনোতা চিরুনি থেকে ঝড়ে যাওয়া চুলের প্যাচ খুলে বেল্কনিতে গিয়ে ফেলে আসে। বিছানার দিকে তাকাতেই শরীর রাগে জ্বলে উঠে। দাতে দত চেপে বলে
‘আপনাকে বলাম বিছানা এলো মেলো না করতে এইটা কি করলেন’?
নিলয় ঘার ঘুরিয়ে মৌনোতার দিকে তাকায়। ভেজা চুল গুলা কোমোর অব্দি থেমেছে। মায়াবর্ন মুখ খানা রক্তিম বর্ন ধারন করেছে। নিলয় ওর দিকে মুদ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে। নিলয় কে ওই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় মৌনোতা।
‘কি.. এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? আপনাকে বলাম বিছানাটা এলোমেলো না করতে আপনি তার পর ও এলো মেলো করলেন কেনো?
মৌনোতা বকবক করতে করতে ওই পাশ দিয়ে বিছানার উপর পাশে দারায়। বিছানার চাদর টান টাম করতে করতে বলে
‘আপনি এখন থেকে সোফায় বসেবেন। ওই খানে গরা গরি খাবেন। যা ইচ্ছা তাই করবেন। এক মাত্র রাতে ঘুমানোর সময় বিছানায় আসবেন। বুঝতে পেরেছেন’?
নিলয় মৌনোতাকে সুরু চোখে দেখে ফোনের স্কিনে চোখ নেয়। গম্ভীর কণ্ঠে বলে
‘তোমার ভাগ্য ভালো আমি তোমাকে ভালোবাসি। সেই জন্য তোমাকে এখনো শুট করছি না। তা না হলে কবেই উড়িয়ে দিতাম’।
নিলয়ের কথা শুনে মৌনোতা কিছুটা থমকালো। পরপরি মুখ বাকায়।
‘ভিলেনরা কখনো কাউকে ভালোবাসে? যখন যে মেয়ে দেখে তখন তাকাই ভালোলাগে। তাকেই ভালোবাসে’।
মৌনোতা তিরষ্কার করে কথাটি বলে আবারো ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে বসে। নিলয় ফোন বিছানার উপর রেখে উঠে দাঁড়ায়। ডানে বামে মাথা কাত করে মৌনোতার পেছনে এসে দাঁড়ায়। দুইজনের দৃষ্টি মিলয় হয় আয়নায়। নিলয় মাথা নিচু করে মৌনোতার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে
‘ভিলেনরা সহজে কাউকে ভালোবাসে না। আর যাকে এক বার ভালোবাসে তাকে দুনিয়া ওলট পালট করে হলে ও নিজের করে ছাড়ে’।
তার পর শয়তানি এক হাসি দেয়। মৌনোতা ঘার হালকে বাকিয়ে নিলয়ের মুখের দিকে তাকায়। ঢোক গিলে বলে
‘আ…আপনি কিন্তু আমাকে প্রমিস করেছেন আমাকে ইসরাকের কাছে নিয়ে যাবেন’।
নিলয় দ্রুত উঠে চুল ঠিক করতে করতে বলে
‘ অবশ্যই মনি মালা। অবশ্যই নিয়ে যাবো। মানা করলাম কখন’?
মৌনোতা দ্রুত উঠে নিলয়ের দিকে ঘুরে বলে
‘তাহলে বলেন যে আপনি আমাকে ভালবাসেরন’!
নিলয় ডানে বামে মাথা কাত করে শয়তানি হাসি দেয়। ওর দিকে হালকা ঝুকে বলে
‘ওর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে যাবো বলেছি আমার ভালোবাসার মানুষ কে নিয়ে যাবো তা কখন বলাম’?
মৌনোতা দুই ভ্রুর মাঝে ভাজ ফেলে বলে
‘কি উলটা পালটা বলছেন’?
‘তোমার বোঝার বয়স হয়মি মনিমালা। এখন নিচে চলো আমার খুদা লাগছে’।
নিলয় কাবাড থেকে টি শার্ট নিয়ে পরে নিচে চলে যায়। মৌনোতা অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। বিরবির করে বলে
‘নাহ এই লোক পাগল। পুরুপুরি পাগল। মাথায় কোনো সমস্যা না থাকলে কেউ এই রকম উলটা পালটা কথা বলেতে পারে না’।
বিকেল চারটা বাজে বের হয়েছে আরিয়া আর মৌনোতা। রিমন থাকবে দেখে নিলয় আর বাধা দেই নি। তবে ওর একটা কাজ আছে ও কাজ শেষ করে ওদের কাছে যাবে। শত্রুর তো আর অভাব নেই। বাড়ির গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে ওরা। আগে শপিং মলে যাবে। ওদের কিছু কেনাকাটা আছে। রিমন কে ও শপিংমলে আসিতে বলেছে আরিয়া। তার পর কোনো রেস্টুরেন্টে গল্প করবে। মৌনোতা মাস্ক পরেছে যেনো ওকে কেউ চিনতে না পারে। গাড়ি মলের সামনে এসে পৌছালে ওরা নামে। আরিয়া রিমন কে ফোন করে। মৌনোতা চারপাশ চোখ ঘুরে দেখতে থাকে। আরিয়া জানায় রিমিনের আসতে আরো কিছুক্ষন সময় লাগবে। মৌনোতা বলে
‘তাহলে এখানে ওর জন্য দাঁড়ায় কিছুক্ষন’?
আরিয়া মাথা নাড়ায়। আরিয়া এদিক ওদিক তাকাতেই নজরে পরে রাস্তার ওই পাশে বেলপুরির দোকানের দিকে।
‘ভাবি ভাবি চলো বেলপুরি খেয়ে আসি। অনেক দিন ধরে খাইনা। উনি আসতে আসতে আমরা খেয়ে আসি’।
মৌনোতা হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়। মৌনোতা আরিয়ার হাত শক্ত করে ধরে। ডানে বামে ঘার ঘুরিয়ে দেখতে থাকি গাড়ি আসছে কিনা। আরিয়া মৌনোতার হাত টান দিয়ে বলে
‘ভাবি তুমি যাও। আমার ব্যাগ গাড়িতে নিয়ে আসছি’।
চলবে…
®তোয়ামনি