নীলমনি পর্ব ২

0
51

#নীলমনি
#তোয়ামনি

[কপি করা নিষেধ ]

নীলমনি ~২

মেয়েটার হাতে মোটা স্বর্ণের চুরি। অশান্ত চুল গুলা শান্ত হয়ে পিঠময় ছড়িয়ে যায়। নিলয়ের বুকে থাকা অবস্থায় চিৎকার করে উঠে
“আমাকে ছেড়েদিন। আমাকে কিছু করইরেন না। আল্লায় আমাকে বাচাও”।
রিমন আসিফ মেয়েটাকে ছেড়ে ভ্রু বাকিয়ে সামনের দিকে তাকায়। দেখে কিছু লোক এই দিকে দৌড়ে আসছে।
নিলয় মেয়েটার দুই বাহু চেপে ধরে জিজ্ঞাসা করে কি হয়ছে আপনার। মেয়েটি ভয় পেয়ে যায়। নিলয়ের বুক থেকে মেয়েটি ধীরে ধীরে তার মাথা তুলে ওর দিকে তাকায়। মুখের মধ্যে কিছু চুল এলোমেলো হয়ে আছে। মেয়েটা লম্বায় নিলয়র বুক পর্যন্ত। গায়ের রঙ শ্যামলা। মায়াবী মুখ। মায়াবী চোখ দুটি থেকে অনবরত পানি পরে যাচ্ছে। চোখ ভরা কাজল। কপালের টিকলি উল্ট হয়ে পাথার পেছন দিকে পরেছে। গলায় চিক। তার পর শিতা হার। মেয়েটি ভয়ে কাপছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। নিলয়তা ঠিক টের পেলো। নিলয় মেয়েটির বিপরীত। যেমন গায়ের রঙ তেমন শরীর গঠন। ভার্সিটির সব মেয়েরা তার জন্য পাগল। চুল গুলা যেনো জ্বিল জ্বিল করে। উচ্চতায় ছয় ফুটের কাছা কাছি। ফর্সা গলার থাইরয়েড তরুণাস্থিতে উপস্থিত অ্যাডামস অ্যাপলটি তুলনা মুলুক একটু বড়। হাতের আর্ম ভেইন্স (হাতের শিরা উপশিরা) গুলা স্পষ্ট বোঝা যায়। প্রায় মেয়েরা দূর্বল হয় ওর এই দিকে তাকিয়ে। তবে সে তাতে কনো পাত্তা দেয় না। লোক গুলা ওদের থেকে আট নয় হাত দূরত্ব রেখে দাঁড়ায়। চার জন লোক। দুই জনের হাতে ছুরি। এক জনের হাতে হকি স্ট্রিক। অন্য এক জনের হাতে কিছুই না। চার জন লোকই কালো। তিনজন মোটা। পিঠ পর্যন্ত চুল ঝুটি করে রেখেছে সে লোকটা বলে উঠলো
“ওই অরে ছাইড়া দে”।
লোকটার কথায় ভয়ে কেপে উঠে মেয়েটি। নিলয় ওর বাহু ছেড়ে এক হাত ধরে ডান পাশে আনে। তার পর লোকগুলোর য়পর দৃষ্টিপাত করে। আফির জিজ্ঞাসা করে
“ওই ভদ্র ভাষায় কথা বল। মেয়েটা কি হয় তর”?
লোকটা চেতে যায়।
” ভালই ভালই কইতাছি মেয়েটাকে ছেইড়াদে। না হইলে তগো সব কইটারে মাইরা ফালামু”।
মেয়েটি ভয়ে আরো শক্ত করে ধরে নিলয়ের হাত।
আসিফ রিমন পকেটে হাত দেয় কিছু বার করার জন্য। নিলয় ইশারা দিতে থামিয়ে দেয়। মেয়েটি জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে ভয়ার্ত কন্ঠে বলে
“আমাকে বাচান। ওরা আমকে মারে ফেলবো”।
“ওই চুপ। ওর হাত ছাইড়া আই কইতাছি”।
মেয়েটি নিলয়ের বাহু ধরে ওর পিছনে লুকায়।
” ওই তর কান দিয়া কথা যায় না। কইতাছিনা ওরে ছাইড়া দিতে”?
নিলয় কাশি দিয়ে গলা ঝাড়ে। এমন ভাব করে জেনো গান গাইবে। শান্ত কন্ঠে বলে
“আসালামু আইলাকুম জাম্বু মামা কেমন আছেন”?
ওর কথায় সবাই হতবুদ্ধি হয়ে যায়। লোক গুলা অবাক হয়ে চেয়ে থাকে ওর দিকে। মেয়েটি ভয়ে ভয়ে ওর দিকে তাকায়। লোকটা বলে কি। ঝুটি করা লোকটা অবাক হলেও বলে
“আমরা তোদের কনো ক্ষতি করবো না। শুধু মেয়েটাকে আমাদের হাতে তুলে দে”।
” ন…না…না প্লিজ আপনার পায়ে পরি আমাকে ওদের হাতে তুলে দিবেন না। আমাকে ওরা মেয়ে ফেলবে”।
মেয়েটি নিলয়ের হাত শক্ত করে ধরে কাদো কাদো কন্ঠে বলে।
“ওই মেয়েডারে ছাইড়া দে”।
নিলয় ঘার বাকা করে মেয়েটির দিকে তাকায়। তার পর লোক গুলার দিকে তাকায়। লোক গুলা ওর চাওনি দেখে ঢোক গিলে। নিলয় এক বার বামে আর এক বার ডানে ঘার কাত করে। তার পর ঝুটি অলা লোকটির উদ্দেশ্যে বলে
“কি হয় মেয়েটি তোমার মামা”?
ঝুটি অলা লোকটি উত্তর দেয়
“তোরে বলুম কেন। তুই মেয়েটাকে ছাইড়া দে”।
নিলয় হায় তুলতে তুলতে বলে
“তুমি কেমন জামাই মামা। নিজের বউডারে সামলিয়া রাখতে পারো না। কেমনা দৌড় দিলেও দেখলা না”।
মেয়েটা অবাক চোখে নিলয়ের দিকে তাকায়। ভয় পেলেও চোখ গরম করে নিলয়ের দিকে। তা আর চোখে খেয়াল করে নিলয়।
লোকটি ঢোক গিলে বলে
“না এইটা আমার বউ না। আমাগো বসের বউ। ও বিয়ে থিকা পাইলিয়া আইছে ওরে না নিয়া ফিরলে বস আমাগো মাইরা ফেলবো”।
মেয়েটি ভয়ে ভয়ে বলে
“ওরা মিথ্যে কথা বলছে। আমি ওদের কাউ কে চিনি না”।
নিলয় আর মেয়েটির দিকে তাকায়। ধমকের স্বরে বলে
“এই মেয়ে কেমন তুমি। জামাইরে রেখে পাইলাইছো কেন। তুমি জানো তোমার জামাইটার কত কষ্ট হচ্ছে তোমাকে ছাড়া। আজ তোমাদের বাসর রাত। একটা ছেলের বাসর রাত নিয়ে কত সপ্ন থাকে। তুমি সেই সব সপ্ন ভেঙে দিলা কি ভাবে”।
মেয়েটি এইবার চেতে যায়। নিলয়ের কথায় ওর সারা শরীর রে রে করে উঠে। নিলয়ের হাত ছেড়ে দেয়। চোখ গরম করে বলে
“এই অসভ্য লোক আজে বাযে কথা বন্ধ করুন। আমি এদের কাউ কে চিনি না। আর আমার কারো সাথে বিয়ে হচ্ছিলো না”।
“তাহলে বউ সেজে পরিক্ষার হলে যাচ্ছিলে। নাকি রাস্তায় টিকটক করতে বের হইছ”?
মেয়েটি চোখ ছোট ছোট করে বলে
” আপনাকে কেনো বলবো”।
“ওই মামা ওরে নিয়ে যান”। নিলয় লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলে। তার পর এক পা এগোয়। মেয়েটি ভয়ে ওর ডান হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে
” প্লিজ এমন করবেন না। আমি..আমি সব বলবো”।
নিলয় আবারো ডানে বামে ঘার বাকিয়ে বলে
“গুড”। তার পর এক পা পিছায়
নিলয় লোকগুলোর উদ্দেশ্যে বলে
“মামা মেয়েটি যাবে না। ও নাকি টিকটক করবো”।
” এই অসভ্য লোক আমি আপনাকে বলেছি আমি টিকটক করবো? আর আপনার কেনো মনে হচ্ছে আমি টিকটক করার জন্য শাড়ি পরেছি”?
“ওই মামা ওরে নিয়ে জান”। নিলয় মেয়েটির হাত ধরে এক পা এগোয়। মেয়েটি ভয়ে থেমে যায়।
“আ..চ্ছা আচ্ছা আর বলবো না”। নিলয় আবার এক পা পিছিয়ে যায়।
মেয়েটি চোখ প্রথমে গরম করলেও এখন চোখ নামিয়ে ফেলে।
লোকটি ভ্রু বাকিয়ে বলে
“এই চুপ। কি শুরু করছছ তোরা। আর তর মামা কে। চুপ চাপ মেয়েটারে ছাইরা দে। না হইলে একটাও বাজবি না। অনেক্ষন ধুইরা তগো কথা শুন্তাছি। আর একটা কথা কইলে তগো সব টিরে গুলি করুম”।
লোকটি পেকেট থেকে একটা বন্দুক বের করে ওদের দিকে ধরে।
মেয়েটি আরো ভয় পেয়ে ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে। আসিফ রিমন লোকগুলোর দিকে তাকিয়েই রয়েছে। আর চোখে একবার নিলয়ের দিকে তাকায়। নিলয় ভয় পেয়ে বলে
“ওরে বাবারে বন্দুক। আমার ওনেক ভয় লাগে। মামা আমারে মাইরেন না। ধরেন নিয়ে জান ওরে”।
মেয়েটি ভয় পেয়ে যায়।
“প্লিজ এমনটা করেবন না”।
“এই তোমার জন্য আমরা মরুম নাকি। মামা ওরে নিয়া জান”।
আসিফ রিমন অবাক হিয়ে যায়।
“নীল তুই পাগল হয়ে গেছছ। তুই মেয়েটাকে এই জানুয়ারদের হাতে তুলে দিবি”।
” তো? যাদের বউ তারা নিবে না। আর মেয়েটার হবু বরতো অপেক্ষা করছে। বাসর সাজিয়ে বসে আছে। তোরা একজন ছেলে হয়ে আর একটা ছেলের ইমোশোন বুঝিঝ না। তোরা তো ছেলে নামে কলঙ্ক। আর মামা আমাগো মেরে ফেলবে দেখছ না”।
অবাক হয়ে যায় উপস্থিত সবাই।
” প্লিজ এই রকমটা করবেন না। আপনার দোহায় লাগি আমাকে ওদের হাতে তুলে দিবেন না”।
“আরে আপনার বিয়ে। আর বর ছেড়ে কেউ পালায় নাকি। চুপ চাপ ওদের সাথে চলে যান”।
মেয়েটা জোরে জোরে কেদে উঠে।
“প্লিজ এই রকমটা করবেন না। আল্লাহ আমাকে বাচাও”।
ঝুটুঅলা লোকটা ভাবে নি এতো সহজে এই অদ্ভুত লোকটা ওদের কথা রাখবে। লোকটা এক জন কে ওয়াডার করে
“কালু মেয়েটাকে নিয়ে আয়”।
আদেশ পেয়ে কালু নামে লোকটা এগোতে থাকে। লোকটা যত এগোতে থাকে মেয়েটির হ্রদ স্পন্দন যেনো তত বারিতে থাকে। শ্বাস বারতে থাকে। নিলয়ের বাহু শক্ত করে ধরে।
“প্লিজ ওদের থামতে বলুন। আমাকে ওরা মেরে ফেলবে”।
নিলয় মেয়েটির হাত ওর বাহু থেকে ছাড়িয়ে মেয়েটির বাম হাতের পাচটি আঙুলের ফাকে ওর ডান হাতের পাচটি আঙুল গুজে দেয়। আর বাম হাত পকেটে ঢুকায়। মেয়েটি ছলছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
“আমি বলছিতো সব বলবো। এমন টা করবেন না”।
“তোমার জন্য আমি মরবো নাকি”।
” নীল প্লিজ তুই এটা করতে পারিস না। মেয়েটাকে কেনো তুকে দিচ্ছিছ”।
ও কারো কথায় পাত্তা দেয় না।
কালু ওর সামনে আসতেই ও আবারো মাথা এক বার ডানে এক বার বামে কাত করে। এইটা দেখে লোকটা ভয় পেয়ে যায়। লোকটি কাছে আসে তার হাত বাড়িয়ে দেয়। নিলয় মেয়েটির যে হাত ধরে ছিলো সেই হাত লোকটির হাতের উপর নিয়ে যায় লোকটির হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। মেয়েটি জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। নিলয়ের কাছে আকুতি করতে থাকে। চোখ বুঝে কান্না করতে থাকে।
“প্লিজ”।
নিলয় যে মূহুর্তে মেয়েটির হাত তুলে দিবে সেই মূহুর্তে ওর বাম হাতটি পকেট থেকে বের করে লোকটির হাতে সুট করে দেয়। মেয়েটি চোখ বোজা অবস্থায় আ…বলে চিৎকার করে উঠে। ও ভেবেছে ঝুটিওলা লোকটি সুট করেছে। সেই মূহুর্তে কালু নামে লোকটি আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পরে। লোকটির আর্তনাদে মেয়েটি চোখ খুলে। পরক্ষনেই বাকি লোকগুলো হাতের অস্র নিয়ে ওদের দিকে এগোলে নিলয়ে হাতের বন্দুক ওদের দিকে তাক করে বলে
“আর এক পা এগোলে সব গুলারে সুট করে দিবো। একটাও বাচে ফিরতে পারবি না। হাতের অস্র নামা। হাতের অস্র নামা বলছি”।
গর্জন করে কথাটি বলে নিলয়।
আসিফ রিমন ওদের পকেট থেকে বন্দুক বের করে লোকগুলার দিকে তাক করে। লোক গুলো ভয়ে আর এগোয় না। হাতের অস্র গুলা নিচে ফালায়।

চলবে…
★তোয়ামনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here