নীলমনি পর্ব ১৯+২০+২১

0
71

#নীলমনি
#তোয়ামনি
[কপি করা নিষেধ ]
নীলমনি ~১৯+২০ +২১
অন্ধকার গোডাউনে বসে রয়েছে নিলয়। সিগারেট ঠোঁটের মাঝে গুজে সামনে থাকা আধমোরা লোকটা কে দেখছে। লোকটার মাথা ফেটে রক্ত বার হচ্ছে।হাত পা থেকে রক্ত পরে যাচ্চগে। সাইডে বসে রয়েছে আসিফ। আরো চারজন লোক হাতে হকি স্ট্রিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিমন আসতেই একটা চেয়ার টেনে দেয় একজন লোক। রিমন লোকটাকে দেখে অবাক হয়। বসেত বসেত বলে
‘তুই ওরে এখনো বাচায় রাখছছ’!
নিলয় সিগারেটে টান দিয়ে বলে
‘ধীরে ধীরে মৃত্যু হক। একটু কষ্ট নিয়ে মরুক’। কার কলিজায় হাত দিছে সেটা বুঝুক।
‘মুখ খুলেছে’?
নিলয় কিছু বলে না। উঠে দাঁড়িয়ে হকি স্ট্রিক নিয়ে লোকোটার ডান হাত বরাবর জোরে আঘত করে। সঙ্গে সঙ্গে রক্ত বের হয় হাত কেটে। নিলয় হকি স্ট্রিক ডান কাধে নিয়ে বাম হাত দিয়ে সিগারেট ঠোঁট থেকে বের করে। লোকটার শরীরে আজ শক্তি নেই চিৎকার করার। নিকয় কিছুই জিজ্ঞাসা করে নি লোকোটাকে। শুধু মারছে।
‘তোকে শুধু মারার জন্য এনেছি। আমার কলিজায় হাত দেস। কত বড় কলিজা তর’।
সিগারেট ঠোঁটে গুজে আবারো মারা শুরু করে।
বিষন্ন মুখে বেল্কনিতে বসে রয়েছে মৌনোতা। হাটুতে থুতনি ঠেকিয়ে এক মনে আকাশে উঠা অর্ধ চন্দ্র দেকছে। মৃদু বাতাস বয়েছে। সেই বাতাসে ওর কপালের সামনে চুল গুলা উরছে। নিলয় সাথে কাল রাতের পর আর কথা হয়নি। রাতে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছিলো সকালে উঠে আর দেখিনি নিলয় কে। শুট করে দিলেই তো পারে। এত মায়া দেখানোর কি আছে। রাত প্রায় সারে এগারোটার কাছাকাছি।
নিলয় হাতে গিটার নিয়ে বেল্কনিতে আসে। দেখে মৌনোতা বসে রয়েছে। চুল গুলা এলোমেলো। মেয়েটাকে কাল একটু বেশি বকে ফেলেছে। নিলয় বসতে বসতে বলে
‘কি করো মনিমাল’।
নিলয়ের কন্ঠ শুনে কেপে উঠে মৌনোতা। ভয় ভয় চোখে তাকায় নিলয়ের দিকে। নিলয় বসে মুচকি হাসি দেয়। গিটার পাসে রেখে মৌনোতার উদ্দেশ্যে বলে
‘হাত টা কি একটু ধরতে পারি ম্যাডাম’?
ম্যাডাম কথাটি শুনে মৌনোতার বুক কেপে উঠে। এ কেমন মধুময় ডাক। ও ঢোক গিলে। নিলয় এক হাত গালে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর অস্থিরতা দেখছে। মৌনোতা আর চোখে নিলয় কে দেখে। নিলয় আবারো বলে
‘ধরা কি যাবে’?
মৌনোতা কি বলবে। বলবে যে নেন ধরেন। ধরলেই তো পারে। বন্দুক তো এসে কপালে ধরতে পারে হাত হাত ধরার সময় বাহানা করছে। মৌনোতা চোখে মনি এদিক ওদিক নারাতে থাকে। নিলয় ওর লজ্জা দেখে মুচকি হাসে। তার পর আরেকটু এগিয়ে বসে ওর দুই হাত ওর হাতের মঠোই নেয়। মৌনোতা চোখ বন্ধ করে ফেলে। ওর শরীর শির শির করে উঠে।
‘আই এম সরি ম্যাডাম। কাল বেশি হায়পার হয়ে গেছিলাম তাই ওই রকম রুড ব্যাবহার করে ফেলেছি’।
মৌনোতা চোখ বন্ধ করেই ওর কথা শুনছে। নিলয় ওর হাত জোরে ওর থুতনিতে নিয়ে ঠেকায়। মৌনোতার দিকে তাকিয়ে বলে
‘তোমাকে মারার জন্য কিছু লোক ঘুরছে। যানি না কেনো। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। যখন শুনেছি তুমি একা বাসা থেকে বের হয়েছে আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না। শো ফেলে রেখেই৷ চলে এসেছি। আমাকে রিমন সব বলেছে। তোমার সাথে নাকি দেখা হয়েছিলো। তোমার কাছে একটাই রিকোয়েস্ট তুমি আমাকে না জানিয়ে বাসা থেকে বের হইও না। যত দরকার থাকুক আমকে বলবে’।
মৌনোতা অপরাধীর স্বরে বলে
‘আর কখনো করবো না। সরি’।
নিলয় ওর হাতে চুমা দেয়। আবারো কেপে উঠে মৌনোতা। নিলয় বলে
‘গুড। বউ টার মন খারাপ হইতো গান শোনালে ভালো হবে। শুনবে গান’?
মৌনোতা মেঝেতে দৃষ্টি রেখেই ডান দিকে মাথা কাত করে। নিলয় ওর হাত ছেড়ে গিটার হাতে নেয়। মৌনোতা ঠোঁটে আকা হাসি নিয়ে নিলয়ের দিকে পূর্ন দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। ও এই রকম বকা রোজ খেতে যায়। যে বকা খেলে উপহার স্বরুপ এই রকম গান শোনা যায়। নিকয় সুর তুলতে তুলতে ওর দিকে তাকায়। মৌনোতা হাটুতে থুতনি ঠেকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
‘বলতে চেয়ে মনে হয়….
বলতে তবু দেয় না হৃদয়
কতটা তোমায় ভালোবাসি….!
চলতে গিয়ে মনে হয়….
দূরত্ব কিছু নয়..
তোমারি কাছেই ফিরে আসে….!
তুমি… তুমি তুমি শুধু
এই মনের আনাচে কানাচে….
সত্যি বলো না কেউ কি প্রেমহীনা
কখনো বাচে…
তুমি…তুমি তুমি শুধু
এই মনের আনাচে কানাচে…
সত্যি বলো না কেউ কি প্রেমহীনা
কখনো বাচে….।
বলতে চেয়ে মনে হয়..
বলতে তবু দেয়না হৃদয়
কতটা তোমায় ভালোবাসি….!
মৌনোতা মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অপুর্ব এই কন্ঠ। অপূর্ব এই মানুষটা। যার মাঝে কোনো খুদ নেই। নিলয় শেষ সুর তুলে শান্ত চোখে ওর দিকে তাকায়।
‘কেমন লাগলো’।
‘শেষ’?
নিলয় ভ্রু বাকিয়ে মুচকি হেসে বলে
‘হুম’।
‘এত তারাতাড়ি শেষ করলেন কেন। আরেকটা শোনান’।
‘অনেক রাত হয়েছে। খেয়েছো রাতে’?
মৌনোতা ডানে বামে মাথা নাড়ায়।
‘অন্য এক দিন আজ আর না। খাবে চলো’।
মৌনোতা মিনমিনে বলে
‘আর এক কলি প্লিজ’।
নিলয় জোরে শ্বাস নিয়। তার পর আবার সুর তোলে।
”মে দুনিয়া ভুলা দুঙ্গা….
তেরি চাহাত মে….
মে দুনিয়া ভুলা দুঙ্গা
তেরি চাহাত মে….
ও দুশমান জামানা
মুঝে না ভুলানা
মে খুদকো মিটা দুঙ্গা….
তেরি চাহাত মে…..
মে দুনিয়া ভুলা দুঙ্গা
তেরি চাহাত মে……’!
(Main Duniya Bhula Doonga)
মৌনোতা লম্বা করে হাসে। অপূর্ব সেই হাসি। নিলয় মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করে
‘ মন ভালো হয়েছে। আমার উপর রাগ কমেছে’?
মৌনোতা চোখ নামিয়ে ফেলে। উপরর নিচে মাথা নাড়ায়।
‘আপনার কন্ঠ অপূর্ব’।
‘অনেক রাত হয়েছে এখন চলো। খেয়ে নিবে’।
চৌধুরী বাড়িতে আজ সকাল থেকেই তরজর চলছে। মৌনোতা ও টুকটাক কাজ করছে। অনেক রান্নাবান্না হচ্ছে। সেইদিন নিলয় বলেছে আরিয়াকে দেখার জন্য লোক আসবে। কাকুলি চৌধুরী ও ব্যাস্ত। সবাইকে দেখিয়ে দিচ্ছে কি ভাবে কি করতে হবে। বেলা এগারোটা বাজে। আরিয়া মাত্র বাসায় আসলো। সকালে একটা ক্রোসিং ছিল সেটা করতে গেছিল। এই সম্পর্কে ও কিছুই জানে না। বাসার সবাইকে এত ব্যাস্ত দেখে অবাক হয়। ও ব্যাগ সোফায় রেখে টেবিল থেকে পানি খেতে থাকে। কাকুলি চৌধুরী কে বলে
‘আম্মু আজ কি বারিতে কোনো অনুষ্ঠান আছে? এত আয়োজন ‘?
কাকুলি চৌধুরী মলিন হাসে। মেয়েটা চলে যাবে। উনি বুলবুলিকে মাছ কাটা দেখাছিলো। মৌনোতা হেসে ওর কাছে এসে বলে
‘আজ তোমাকে দেখতে আসবে? ভুলে গেছো
পানি আটকে যায় আরিয়ার গলায়। ও কাশতে থাকে। মৌনোতা ওর মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে
‘আসতে খাবে তো’।
আরিয়া মৌনোতার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে
‘কি? আমাকে দেখতে আসবে মানে’?
‘আম্মু ভাবি কি বলছে’?
আরিয়া কাকুলির কাছে গিয়ে বলে।
‘আবির দের বাড়ির লোক আজ দেখতে আসবে’।
‘আবির কে’?
‘তোর জুই খালার ছেলে। আমার ফুপাতো বোন। ওদের তোকে খুব পছন্দ হয়েছে’।
আরিয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরে। পরক্ষনেই মনের ভেতর এক ঝড় বয়ে চলে একটা মানুষের জন্য। ও ছুটে রুমে চলে যায়। মৌনোতা কাকুলির কাছে এসে বলে
‘ও এভাবে চলে গেলো কেনো’?
কাকুলি চৌধুরী সেই দিকে খেয়াল না করে অন্য কাজে চলে যায়।
আরিয়া বিছানার উপর হাটুতে মাথা কাত করে বসে আছে। ওর কিছু ভাল লাগছে না। সত্যি কি অর বিয়ে যাবে। তাহলে ও যাকে ভালোবাসে! কথাটি মনে পরতেই ওর বুক কেপে উঠে। ওর সাহস নেই ভালোবাসা প্রকাশ করার। না ওর সাহস আছে নিলয় কে কিছু বলার। ও ফোপাঁতে থাকে। কাধে কারো হাত পরতেই কেপে উঠে আরিয়া। চোখের পানি মুছে ঘার ঘুরিয়ে তাকায়।
‘আম্মু বলল তোমাকে রেডি হতে বলতে। ওই বাড়ি থেকে লোক নাকি এসে পরবে’।
আরিয়া মৌনোতার দিকে তাকিয়ে কান্না করে জরিয়ে ধরলো। মৌনোতা অবাক হয়ে গেলো। ওকে ঝাপটে ধরে বলল
‘আরিয়া কি হয়েছে তোমার? কান্না করছো কেনো’?
আরিয়ার কান্না কিছুই থামে না। ও কেদেই যাচ্ছে। মৌনোতা ওকে বুক থেকে উঠিয়ে দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিলো। তার পর আবারো জিজ্ঞাসা করলো
‘কি হয়েছে আরিয়া? আমাকে বলো। শরীর খারাপ লাগছে’?
আরিয়া ফোপাঁতে ফোপাঁতে বলল
‘ভাবি..ভাবি আমি বিয়ে করতে চাই না’।
‘দেখতে আসছে। বিয়ে তো আর হচ্ছে না। তুমি এতো টেনশন করছো কেনো’?
‘না ভাবি ভাইয়া বলেই হবে’।
আরয়া আবারো মৌনোতাকে জরিয়ে ধরে কাদতে থাকে। মৌনোতা ওর পিঠে হাত বুলাতে বুলতে বলে
‘তোমার কি কাউ কে পছন্দ আছে’?
সাথে সাথে আরিয়ার কান্না থেমে যায়। ও এটা বলতে পারবে না। ও কাউকে পছন্দ করে এ কথা জানলে নিলয় ওকে মেরে ফেলবে। ও মৌনোতার বুক থেকে উঠে চোখ মুছে। মলিন হেসে বলে
‘না না পছন্দ কেনো থাকবে। আমার কাউ কে পছন্দ নেই’।
মৌনোতা আরিয়ার দুই বাহু ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে
‘তাহলে কাদছো কেনো’?
‘এমনি তোমাদের ছেড়ে চলে যাবো তাই। আচ্ছা আম্মু রেডি হতে বলছে। আমি যাই গোসল করে আসি’।
মৌনোতা বুঝতে পারে আরিয়া কিছু লুকাচ্ছে। কিন্তু ও ওকে বাধা দেয় না। বিয়ে তো আর হচ্ছে না। তাহলে এত কান্না করার কি আছে।
হালকা পিংক কালার থ্রি পিছে খুব সুন্দর লাগছে আরিয়া কে। মৌনোতা আরিয়া কে নিয়ে আসে। তবে ওর মুখে কোনে হাসির রেখা নেই। মৌনোতা ওকে সোফায় বসিয়ে দেয়।
জুই আবির ওর বাবা আর আবিরের ছোট ভাই এসেছে। আরিয়া কে দেখে খুব পছন্দ হয়। সবুর আলি কাকুলি কে বলে মেয়ে তাদের খুব পছন্দ। যদি তারাতাড়ি রাজি থাকে তাহলে আংটি আজ পরিয়ে যাবে।
এংগ্রেজমেন্ট এর কথা শুনে শ্বাস বেরে যায় আরিয়ার। বুকের ভেতর যে মানুষ টা লুকানো আছে সে বের হতে চায়। কিন্তু সে নেজেই তো বন্দি। তাকে কি ভাবে বের করবে? নিলয়ের উপর দিয়ে কথা বলার সাহস তার নেই। নিলয় তাদের বলে আর ও দু এক দিন সময় নিতে। আবির কে তাদের সবাইকে পছন্দ তবু ও আর একটু দেখবে। মৌনোতা আরিয়া কে নিয়ে উপরে চলে যায়।
কিছুক্ষন আগেই আত্মিয়রা সবাই চলে গেছে। নিলয়ের ভালো লেগেছে ছেলে। কিন্তু কালাম চৌধুরীর সাথে কথা বলে দেখতে হবে। তার দেশে ফিরতে আরো বছর খানিক সময় লাগবে।
মৌনোতা খাবার নিয়ে আরিয়ার রুমে যায়৷ মেয়েটা কিছুই খাইনি। আরিয়া শুয়ে ছিলো। পরনে সেই থ্রি পিছ। মৌনোতা মৃদু স্বরে ডাকে আরিয়া। কিন্তু ও শোনে না। মৌনোতা আবারো ডাকে। মুখের উপর থেকে কুনুই সরিয়ে আরিয়া তাকায়।
‘হুম’।
‘খাবে না তুমি? দুপুরে তো ভালো ভাবে খেলে না। উঠো খেয়ে নেও’।
‘তুমি রেখে যাও আমি খেয়ে নেবো’।
আরিয়া পাশ ফেরে শুয়ে পরে। মৌনোতা আর কিছু বলে না। খাবার টেবিলের উপর রেখে মৌনোতা নিশব্দে চলে যায়।
মৌনোতা আয়নার সামনে বসে চুলে বেনি করছিলো। তখন নিলয় রুমে আসে। ও ফোনে কিছু একটা করছিলো। মৌনোতা তারাতাড়ি করে বেনি শেষ করে নিলয় এর সামনে এসে দাঁড়ায়। নিলয় বিছানার উপর এক কাত হয়ে শুয়ে ছিলো। মৌনোতাকে দারাতে দেখে নিলয় ভ্রু বাকায়। তার পর উঠে বসে।
‘কিছু বলবে’?
মৌনোতা ঢোক গিলে বলে
‘হুম’
‘বলো’।
‘আরিয়ার বিয়ে কি ঠিক করে ফেলেছেন’?
‘না আব্বুর সাথে কথা বলবো তার পর। কেন কি হয়েছে’।
মৌনোতা আমতা আমতা করতে করতে বলে
‘আরিয়া অনেক কান্না কাটি করছিলো। ও… ও বিয়েটা করতে চাই না’।
নিলয় এক ভ্রু উচু করে বলে
‘তোমাকে বলেছে’?
মৌনোতা উপরে নিচে মাথা নাড়ায়।
নিলয় কিচ্ছুক্ষণ ভেবে। তার পর উঠে চলে যেতে চাইলে মৌনোতা পিছন ডাকে।
নিলয় ঘুরে তাকায়। মৌনোতা ঢোক গিলে বলে
‘না কিছু না জান আপনি’।
নিলয় ডানে বামে মাথা কাত করে বলে
‘বলো কি বলবে’?
মৌনোতা ডানে বামে মাথা দোলায়। ওর কিছু বলার নেই। নিলয় ও আর না খেটে চলে যায়।
নিলয় বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায় ফোন স্কান করছিলো আর গুন গুন করছিলো। আজ ও বাইরে বের হয় নাই। আল্লাহ জানে এই লোকটা কি করে।মৌনোতা বেল্কনিতে বসে এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কি মধুর কন্ঠ ভিলেনটার। নিলয় ফোন থেকে চোখ সরিয়ে একবার বেল্কনিতে তাকায়। আবার ফোনে তাকায়। ফোনে তাকাতেই খেয়াল হয় মৌনোতা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও শান্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকায়। মৌনোতার বুক কেপে উঠে। ও চোখ সরিয়ে নেয়। ও যে তাকিয়ে ছিলো নিলয় কে এটা দেখে ফেলেছে। অ কিঞ্চিৎ অসস্থি বোধ করে। নিলয় ওর অসস্থি টের পেয়ে মুচকি হাসে। ফোন বিছানার উপর রেখে ধীর পায়ে উঠে দাঁড়ায়। ডানে বামে মাথা কাত করে। তার পর বেল্কনির দিকে আসতে থাকে।
মৌনোতা আর চোখে দেখে নিলয় এই দিকে আসছে। নিজেকে গালি দিতে থাকে। আজ ওকে নির্ঘাত শুট করে দিবে। ভিলেন টার দিকে তাকিয়ে ছিলো বলে। ওর কি দোষ ভিলেন টাই তো গুন গুন করছে। তাই তাকিয়ে ছিলো।
‘জামাই কে লুকিয়ে দেখার কি আছে? তোমার জামাই টা অনেক রোমান্টিক চাইলে তার সামনে বসে দেখতে পারো’।
নিলয় মৌনোতার পাশে বসতে বসেতে বলে। মৌনোতা বিব্রত বোধ করে। ইসসস লোকোটা ঠিকই দেখে ফেলেছে।
‘আপনি ওতো সুন্দর ও না যে আপনাকে লুকিয়ে দেখতে হবে’।
নিলয় ভ্রু বাকিয়ে বলে
‘সত্যি! তাকিয়ে ছিলে না’?
মৌনোতা মুখ বাকিয়ে বলে ‘না’।
নিলয় মৌনোতার মুখোমুখি বসে গালে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকায়। মৌনোতা ঘাব্রে যায়। আমতা আমতা করে বলে
‘কি.. কি.. শুট করেবন? করতে পারেন’।
বলে চোখে সরিয়ে ফেলে। নিলয় শয়তানি হাসি দিয়ে বলে
‘তোমাকে শুট করার জন্য রিভালবার লাগবে না মনিমালা…..আমার ভয়েসঈ যথেষ্ট’।
মৌনোতা মুখ বাকায়। কথাটা সত্য। নিলয়ের কন্ঠ সত্যি ওর বুকে বন্দুকের গুলির কত বিধে।
নিলয় লম্বা করে হেসে বলে
‘চলো বাইরে থেকে ঘুরে আসি’?
মৌনোতা চোখ তুলে তাকায়।
‘কোথায় যাবেন’?
‘আজ আরিয়ার বার্থডে। সেলিব্রেটি করি আসি চলো’।
মৌনোতা চমকায়।
‘সত্যি’!
‘হুম। ওকে সারপ্রাইজ দিবো বলে আজ বাইরে জাই নি। তুমি ওকে রেডি করে নিয়ে আসো। আর লাল একটা শাড়ি পরিয়ে নিয়ে এসো। আমি রেডি হচ্ছি’।
‘কিন্তু আমরা তো বাসায়ই সেলিব্রিট করতে পারি’?
নিলয় বাকা হেসে বলে
‘ওর জন্য একটা বেস্ট গিফট আছে’?
‘কেমন গিফট’?
‘এখনি জানতে হবে কেনো? আগে চলো’।
‘ওকে’।
মৌনোতা ছুটে আরিয়ার ঘরের দিকে।
আরিয়া বিছানার উপর বিষাদ মুখে বসে ছিলো। হয়তো কিছু চিন্তা করছে।
মৌনোতা দরজার কাছে গিয়ে বলে
‘আরিয়া আসবো’?
মৌনোতা কিঞ্চিৎ কেপে উঠে মৌনোতার কন্ঠ পেয়ে। হালকা করে হেসে বলে
‘হুম। জিজ্ঞাসা করার কি আছে’।
মৌনোতা এসে ওর সামনে বসে বলে
‘কি হয়ছে তোমার এই ভাবে বসে আছো কেনো’?
‘এমনি ভালো লাগছে না’।
‘চলো বাইরে ঘুরতে যাবো’।
আরিয়া অবিশ্বাস্য চাওনি নিয়ে তাকায়।
‘কই যাবে’?
‘তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। চলো চলো। তারাতাড়ি উঠো’।
মৌনোতা উঠে আরিয়ার হাত টানে।
‘কে কে যাবে’?
‘আমি তুমি আর তোমার ভাইয়া। চলো তারাতাড়ি। আর লাল রঙের একটা শাড়ি পরবে। তোমার ভাইয়া পরতে বলেছে’।
আরিয়া ভ্রু বাকায়।
‘কেনো’?
‘আমি জানিনা। তুমি তারাতাড়ি করো। ঠিক আছে’.
মৌনোতা আরিয়া কে উঠেয়ে রেডি হতে বলে। তার পর ও ওর রুমে চলে যায়।
নিলয় বিছানার উপর বসে ছিলো। পাঞ্জাবি পরে। মৌনোতা ঠোঁট উলটিয়ে বলে বাবা ভিলেনটা আজ পাঞ্জাবি পরে ঘুরতে যাবে।
মৌনোতা কাবাড থেকে শাড়ি ব্লাউজ বের করে। তার পর নিলয়ের দিকে আর চোখে তাকায়। লোকটা কি এই খানেই বসে থাকবে। এখানে থাকলে ও শাড়ি পরবে কি ভাবে। ওয়াসরুমে গিয়ে শাড়ি তো পরা যাবে না। ও ইতস্তত করতে করতে বললো
‘আপনি কি একটু বাইরে যাবেন’?
নিলয় দুই ভ্রু মাঝে ভাজ ফেলে তাকায়
‘কেনো’?
ওর হাতে শাড়ি দেখে ও কি বুঝতেছে না ও শাড়ি পরবে। বেয়াহাদের মত আবার জিজ্ঞাসা করছে কেনো?
মৌনোতা মিনমিনিয়ে বলে
‘আমি চেঞ্জ করতাম ওয়াসরুমে গিয়ে শাড়ি টা চেঞ্জ করা যাবে না। তাই’।
নিলয় আর কথা না বাড়িয়ে বেল্কনিতে চলে যায়। মৌনোতা সব দরজা আটকে দিয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে নেয়। অনেক কষ্ট করে শাড়ির কুচিটা ঠিক করে। একা একা কি ঠিক করা যায়। শাড়ি পেটে গুজে বারান্দার দরজা খুলে দেয়। নিলয় আর চোখে মৌনোতাকে দেখতে দেখতে রুমে ঢুকে। অপরুপ লাগছে মেয়েটা কে। নিলয় ওর দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেই বিছানার উপরে গিয়ে বসে। মৌনোতা আঁচল ঠিক করতে থাকে। কাধে পিন লাগাতে গিয়ে ওর হাতে লেগে যায়। ও মৃদু স্বরে আ আ বলে আর্তনাদ করে।
নিলয় দ্রুত বিছানার উপর থেকে উঠে ওর হাত চেপে ধরে। নিলয়ের ছোয়ায় চোখ বন্ধ করে ফেলে মৌনোতা।
‘আমাকে বলতে পারতে’।
মৌনোতা আমতা আমতা করে বলে
‘তেমন কিছু হয় নি’।
নিলয় ওর হাত ছেড়ে বলে
‘দেও আমি লাগিয়ে দিচ্ছি’।
নিলয় ওর কাধের পাশে দাঁড়িয়ে পিন লাগিয়ে দেয়। মৌনোতা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ নয়নে তা দেখে মৃদু হাসি দেয়।
ওদের গাড়ি একটা পার্কের সামনে এসে দাঁড়ায়। আরিয়া বলে
‘এখানে কেনো ভাইয়া’?
‘নাম। তার পর বলছি’।
ওরা নামে। জায়গাটা খুব সুন্দর। নিলয় গাড়ি পার্ক করে তার বলে ভেতরে চল। ওরা এক সাথে ভেতরে যায়। জায়াগাটার ভেতরে ও সুন্দর। মৌনোতা আরিয়ার চোখ পেছন থেকে বেধে দেয়।
‘তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে’।
‘কি সারপ্রাইজ ‘?
‘সেটা বলে আর সারপ্রাইজ থাকবে’? চলো চুপ চাপ’।
মৌনোতা আরিয়ার হাত ধরে ধীরে ধীরে এগোতে থাকে। মৌনোতা অবাক হয় এতো মানুষ দেখে। ও নিলয়ের দিকে তাকায়। ও কিছু বলতে গেলে নিলয় আঙুল ঠোঁটে নিয়ে চুপ করার ইশারা করে। মৌনোতা আর কথা বলে না।
গোলেপের পাপড়ি দিতে লাভ আকানো হয়েছে। দুই পাশে বুলবুলি আর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার বয়স পনেরো কি ষোল। বুলবুলির হাতে গোলাপের পাপড়ি আর ওই মেয়েটার হাতে গাধা ফুলের পাপড়ি। পেছনে টেবিল ও সাজানো হয়েছে। তাতে কেক। সব কিছু দেখে মৌনোতা খুব অবাক হয়। ও নিলয়ের দিকে তাকায়। নিলয় চোখ টিপে সব দেখে যেতে বলে। ওকে ইশারা করে আরিয়া কে গোলাপের পাপড়ির উপরে দার করাতে। মৌনোতা আর কিছু না ভেবে আরিয়া কে তার অপর দাড় করিয়ে দেয়।
চলবে…
®তোয়ামনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here