নীলমনি পর্ব ১

0
88

#নীলমনি
#তোয়ামনি

[কপি করা নিষেধ]

নীলমনি ~১

রাস্তার পাশে ছোট চায়ের দোকানের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছে তিন বন্ধু। তিন জনের এই দোকানের চা খুব প্রিয়। রাস্তাটা ফাকা। ল্যাম্পপোস্টর আলোয় বোঝা যাচ্ছে না রাতের গভীরতা। চারিদিক আলো আর আলো। রাস্তায় তেমন ভির দেখা গেলো না। দোকানদার ওদের চা এনে দিলো। সাথে সিগারেট। নিলয় ওর বাইকের উপর বসে আছে। ওর সামনে রিমন আর আসিফ ব্রেঞ্চে বসে আছে।দোকানদারের কাছ থেকে চা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে নিলয় বলে
“আমাদের বাসায় এতো বড় বড় সেফ তবু ও এই রকম চা বানাতে পারে না। বল্টু চাচা, তুমি চায়ে কি দেও বলতো। এর স্বাদ আমি আর কোথাও পায় না”।
বল্টু মিয়া আসিফ রিমন কে চা দিতে দিতে বলে
” সবই তুমাগো ভালোবাসায় বাবা”।
পাশ থেকে রিমন বলে
“হো কাকা মারাত্মক চা বানাও তুমি”।
আসিফ নিলয় কে আগা গোরা পরখ করে বলে
“বাসায় কি আজ কে ও ঝামেলা করেছিছ”?
কালাম চৌধুরীর এক মাত্র ছেলে আরমান নিলয় চৌধুরী। বিশাল বড় লোক সে। কালাম চৌধুরী সিঙ্গাপুর থাকেন। তার ছোট ভাই কামাল চৌধুরী কাতার থাকেন। কালাম চৌধুরী ছেলেকে ওই দেশে নেওয়ার খুব চেষ্টা করেছে কিন্তু তার ছেলের ঘারের রগ বাকা। সে কিছুতেই যাবে না। সে এই দেশেই কিছু করতে চায়। এই দেশের নাগরিক হয়ে পরের দেশের জন্য কিছু করে লাভ কি। কালাম চৌধুরী তার সব শর্ত মেনে নিয়েছে। কিন্তু একটা শর্ত দিয়েছে৷ তার বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। এই শর্ত না মানলে সে নিলয়ের কনো শর্ত মানবে না। কিন্তু নিলয় কিছুতেই ওই মেয়েকে বিয়ে করবে না। তাই নিয়ে বাবার সাথে ফোনে ঝগড়া করে বেরিয়েছে। বিরক্ত কন্ঠে নিলয় বলে
“আব্বু পাগল হয়েছে। ওই বিয়াদপ মেয়েকে আমার ঘারে চাপাবেই। আমি চায় না ওই মেয়েকে বিয়ে করতে। যে মেয়ের কথায় এত ধাঝ না জানি দেখতে কেমন”।
আসিফ চায়ে চুমুক দিয়ে বলে
” তুই মেয়েটাকে দেখেছিছ”?
“না”।
“তাহলে এতো শিওর হলি কি ভাবে যে মেয়েটা খারাপ”?
“আরে ভাই আমি এক দিন কথা বলছিলাম ফোনে। মানুষের কথা শুনে বুঝা যায় সে কেমন হতে পারে”।
” আচ্ছা চেতিছ না”।
“মেয়েটার নাম কি”?
“ডাইনি”।
রিমন সিগারেট টান দিয়ে বলে
” ডাইনি কারো নাম হয়”।
“আরে হয় ও একটা ডাইনি”।
রিমনের মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। আসিফের বাবা একজন ব্যাবসায়ী। সে ও বাবার এক মাত্র ছেলে।
“নুহাশ কল করেছিলো”?
” হুম”।
“কি বললো”?
” নতুন গেম শুরু করবে তাই একটু পরামর্শ নিলো”।
“বল্টু কাকা একটা সেন্টারফ্রুট দেও”।
বলে রিমন। সেন্টারফ্রুট নিয়ে রিমন চিবোতে থাকে। রাস্তাটা সুরু। অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। মাঝে মাঝে দুই একটা গাড়ি যাচ্ছে।
আসিফের ফোন বেজে উঠে। ও কথা বলার জন্য অন্য দিকে যায়। নিলয় রিমন কে জিজ্ঞাসা করে কয়টা বাজে। রিমন উত্তর দেয় বারোটা বাজতে আর পনেরো মিনিট বাকি।
“বাসায় কি যাবি না”?
” বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। বাসায় গেলে মা আবার শুরু করবে। এগো জন্য বনোবাসে চইলা জামু আমি”।
“বাসার সবাইকে বলে সারা কে নিয়া আয়”।
চোখ ছোট ছোট করে তাকায় নিলয়।
“তর কি মনে হয় আব্বু আমারে বাসায় রাকবো”।কথা শেষ করে আসিফ দ্রুত নিলয়ের কাছে আসে।
“কে ফোন দিয়েছিলো”?
” জয় দা। তোকে নাকি অনেকবার কল দিছে। তুই ধরছ না দেখে আমাকে কল দিছে। তর ফোন কই”?
“বললাম না আব্বুর সাথে ঝগড়া করে বাসায় রাইখা আসছি। এখন বল কি বললো”?
“নুহাশ এই বার নতুন খেলা শুরু করেছে”।
নিলয় এক শয়তানি হাসি দেয়।
” ও তাই নাকি। সকালেই তো পরামর্শ নিলো। এখনি স্টার্ড করে দিয়েছে। গ্রেট জব’।
রিমন বলে “ওরে এক দিন ভালমতো টাইট দিতে হবে”।
“তাহলেতো এইবার ওর সাথে গেমটা আরো জমে যাবে”।
“যা করবি সাবধানে করবি। ও তোর আসল পরিচয় জানে না। জানলে কিন্তু তোকে ছাড়বে না”।
নিলয় স্ব শব্দে হেসে উঠে।
“চিন্তা করিছ না। ওর সাথে আমার ডাল ভাত”।
“কি গেম শুরু করেছে”? বলে আসিফ।
“দোস্ত দোস্ত দেখ একটা লাল শাড়ি পরা পেত্নি দৌড়ে আসছে”।
রিমন সুরু রাস্তার দিকে তাকিয়ে অস্ত্রির হয়ে কথাটি বলে। আসিফ ধমক দিয়ে বলে
“চুপ কর। সব সময় মজা করিছ না। লাল শাড়ি পরা কোনোদিন পেত্নি হয়”।
” আরে ভাই তোরে তাকা পেছন দিকে”।
ওরা দুই জন এক সাথে পেছনে তাকায়। লাল শাড়ি পরিহিত এক কিশোরী দৌড়ে এদিকে আসছে। মাথার চুল গুলা এলোমেলো ভাবে উড়ছে। নিলয় বাইক থেকে নেমে রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। ওর পাশে এসে আসিফ আর রিমন দাঁড়ায়। মেয়েটা দৌড়ে ওদের দিকে আসতে থাকে। পরনের শাড়ি দুই হাত দিয়ে ধরে পায়ের গোড়ালির একটু উপরে তুলেছে। মেয়েটা পেছন দিকে তাকিয়ে দৌড়াচ্ছিলো। নিলয়কে খেয়াল না করায় ওর সামনে আসতেই ওর বুকের উপর হুমরি খেয়ে পরে।

চলবে…
★তোয়ামনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here