নীলমনি পর্ব ৪

0
54

নীলমনি ~৪
_________________________________♥

ব্যালকোনিতে সোফার মধ্যে শুয়ে সিগারেট টানছে নুহাশ। বাবুলাল শিকদারের বড় ছেলে নুহাশ। বাবুলাল একজন ব্যাবসায়ী। এর বাইরে ও রয়েছে হাজারটা অবৈধ কাজে । বাবা ছেলে এক সাথে মিলে কাজ করে। গায়ের রঙ শ্যামলা
নুহাশের ফোনে একটা কল আসে। সিগারেট টান দিয়ে টেবিলের ওপর থেকে ফোনটি নিয়ে ধরে।
“হুম বল”।
ওপাশ থেকে আওয়াজ আছে
” স্যার কাজ হয়ে গেছে”।
নুহাশের ঠোঁট ফুটে বিশ্ব জয়ের হাসি। হাসি বজায় রেখে উত্তর দেয়
“মেয়েটা ঠিক জায়গায় পৌঁছে গেছে তো”?
“জী স্যার। এখন আপনি আদেশ দিলেই খালাস হয়ে যাবে”।
” না তোদের কে খালাস করতে হবে না। যে খালাস করবে তার কাছে পৌছে গেছে। তোরা কাল গোডাওনে এসে টাকা নিয়ে যাস”
“অকে স্যার। কি..কিন্তু স্যার”।
লোকটা আমতা আমতা করতে লাগলো। নুহাশ মুখ দিয়ে ‘চ’ সূচক শব্দ করে বলল
” আবার কিন্তু কিসের”?
“স্যার। একটু ভয় হচ্ছে। কম্পন স্যার”।
কম্পন নামটি শুনেই বিরক্ত বোধ নুহাশ। তবে তা প্রকাশ করলো না।
” ভয় পাইস না। ও আর কিছুই করতে পারবো না। আর নিলয় তো আছেই। চিন্তা করিস না”।
“তবুও স্যার ভয় লাগতাছে”।
নুহাশ আর কথা শুনলো না। ফোন রেখে দেয়। নুহাশ ফোন রেখে শয়তানি এক হাসি দেয়।
“নুহাশ শিকদারের প্রস্তাব অমান্য করা, তাকে অপমান করা এই বার বুজবে ইন্সপেক্টর কত ধানে কয় মুন চাল”।
হাতের সিগারেটি ফেলে দিয়ে সোফা থেকে উঠে গুন গুন করে গান গায়।
“বাচপান কা পিয়ার, মেরা ভুল নেহি জানা রে”।
গান গাইতে গাইতে ছোট ভাইয়ের ঘরের দিকে চলে যায়।

__________________________________★
আরিয়ে দরজা খুলে দেখে নিলয় এসেছে।
“ভাইয়া তুমি আজ এতো দেড়ি করলা কেনো। কই ছিলা। আম্মু তো…..”
আরিয়া আর কথা শেষ করতে পারলো না। নিলয়ের পাশে বেনারসি পরা এক মেয়েকে দেখে থমকে গেলো। ও যেনো আকাশ থেকে পরলো। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেয়েটির দিকে।
“কিরে কি হলো। মা কই”?
আরিয়া তখনো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না তার ভাই বিয়ে করে এসেছে। যে বিয়ে নিয়ে যে ছেলের সাথে সব সময় ভেজাল বাজে বাবার সাথে বাড়ির কেউ ওকে রাজি করাতে পারে না বিয়ের জন্য সেই ছেলে বিয়ে করে এসেছে৷ তাও আবার একা। এত রাতে। নিলয় আরিয়ার মুখের উপর আঙুল ফুটিয়ে বলে
” কি হলো। ভিতরে যেতে দিবি না”?
“ভা….ই…য়া এটা কে। তুমি বিয়ে করেছো”!
নিলয় কথা বলার আগেই আরিয়া চিৎকার করে উঠে
“আম্মুমুমুমুমুমুমুমুমুমুমুমুমুমু কই তুমি ভাইয়া বিয়ে করেছে তারাতাড়ি আসো”।
আরিয়া দৌড়ে কাকুলির কাছে যায়। কথাটি কানে পৌঁছানো মাত্র কাকুলি চৌধুরী চিৎকার করে উঠে।
“কিইইইইইইইই আমার নীল বিয়ে করছে সত্যি”! ওই কে কোথায় আছছ তারাতাড়ি বার হো। বরণডালা সাজা। আমার নীল বউ আনছে”।
কাকুলি চৌধুরী অনেক খুশি। তার ছেলে বউ নিয়ে এসেছে। পরক্ষণি আরিয়াকে বলে
” সত্যি বলি নাকি মিথ্যা”?
“আরে তুমি দরজার কাছে গিয়ে দেখো ভাইয়া সত্যি বিয়ে করে আনছে”।
কাকুলি চৌধুরী দৌড়ে যায়। দেখে সত্যি নিলয়ের পাশে বেনারসি পরা এক মেয়ে। হাতে চুরি। মাথায় ঘোমটা। মাথা নিচু করে রেখেছে। তার খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।
“বাবা তুই সত্যি বিয়ে করে আনছ। আল্লাহ তুমারে লাখো কোটি শুকরিয়া। আমার ছেলে বিয়ে করে আনছে”।
কাকুলি চৌধুরী ছেলের উপর ঝাপিয়ে পরে। দুই গাল চুমুতে ভরিয়ে ফেলে।
মৌনোতা বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পরে। এটা কি সপ্ন নাকি সত্যি। কোনো ছেলে এতো রাতে বউ নিয়ে এসেছে তা দেখে কনো মা এতো খুশি হতে পারে কি ভাবে সম্ভব।
কাকুলি ছেলেকে ছেড়ে মৌনোতার কাছে গেলো। ওর মাথায় ঘোমটা ছিলো। বাড়িতে ঢোকার সময় নিলয় পরিয়ে দিয়েছে। যখন মৌনোতা বাইক থেকে নামলো তখন ও বাড়িটাকে দেখছিলো। বিশাল বড় বাড়ি। নিলয় ওকে নিয়ে বাড়ির দরজার কাছে আসে। তখন মৌনোতার দিকে তাকিয়ে দেখে ওর চুল খোলা। নিলয় ফহমকের স্বরে বলে চুল বাধো। আর মাথায় ঘোমটা দেও। মৌনোতা বলে ছিলো।
“কেনো ঘোমটা দিবো কেনো। আমি কি আপনার বউ নাকি”।
নিলয় ডান ঘার বাকিয়ে বলেছিলো
“বউ না হলে নিয়ে আসি। চুপ চাপ মাথায় ঘোমটা দেও তা না হলে কল যেতে যতক্ষন সময়। ওদের আসিতে কিন্তু ততক্ষন লাগবে না”।
মৌনোতা দুই ভ্রু বাকিয়ে তাকায়। মনে মনে আওরায়
“ভিলেন”।
মৌনোতা কে রাগী চোখে তাকাতে দেখে নিলয় ওর শাড়ির আচল নিয়ে মাথায় দিয়ে বলে ছিলো
“চোখ গরম করে লাভ নেই মনিমালা। আমার কথা না শুনলে সোজা সুসুসুসুসু করে তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে দিয়ে আসবো”।
মৌনোতা দাতে দাত চেপে বলে
” ভিলেন। ভিলেন আপনি”।
নিলয় ডানে বামে মাথা কাত করে বলে
“তুমি যা বলবে ওই টাই আমি মনি….মালা…..”।

” দেখি দেখি আমার ছেলের বউডারে দেখি”।
কাকুলি মৌনোতার কাছে গিয়ে মাথার ঘোমটা ঘার পর্যন্ত নামিয়ে দুই হাত গালে দেয়। দুই চোখ ভরে দেখে ছেলের বউ কে। গায়ের রঙটা একটু শ্যামলা তবে মায়াবী।
“মাশাল্লাহ। আল্লাহ তুমি রহম করেছো। আসো আসো ঘরে আসো”।
কাকুলি মৌনোতার হাত ধরে। পরক্ষনেই মনে পরে বরনের কথা। ছুটে ড্রইংরুমে গিয়ে সবাইকে ডাকা ডাকি শুরু করে।
” কিরে তোরা কি কেউ নাম্বিনা। নতুন বউ এসেছে তারাতাড়ি আই”।
নিলয় ডানে বামে মাথা কাত করে মৌনোতার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে
“তু ইওতনি খুব সুরাত হে, ফিদাদি দারপে তেরে”।
মৌনোতা চোখ রাঙিয়ে তাকায়।
“আমি কোনো ভিলিনের বউ হতে পারবো না। আমি ভেতরে ঢুকেই বলে দিবো আমাদের বিয়ে হয় নি”।
নিলয় বাম হাত পকেটে ঢুকে বলে
“তোমার মাথা ঝাঝরা করে দেওয়ার মত গুলি যথেষ্ট আছে। মাত্র দুইটা শেষ করছি। চিন্তা করো না মনিমালা এইকয়টায় কাজ না হলে আমার ঘর থেকে আরো নিয়ে আসবো। তুমি শুধু কথা বলে দেখো”।
তার পর শয়তানি এক হাসি দেয়। বুক কেপে উঠে মৌনোতার। সত্যি সত্যি ওকে মেরে ফেলবে নাকি।৷ আল্লাহ এ কার হাতে এসে পরলাম আমি। এর থেকে তো ওই লোকগুলো বেশি ভালো ছিলো। চোখ সরিয়ে বিরবির করে
“ভিলেন”।
কাকুলির ডাকা ডাকিতে মূহুর্তে বাড়ির লোক সবাই ড্রইংরুমে হাজির হয়। কামাল চৌধুরীর ছেলে মেয়ে স্ত্রী শিউলি। কালাম চৌধুরীর মা বাবা। শিউলি এসে কাকুলি কে বলে
“কি হয়েছে। এতো রাতে ডাকতাছো কেনো”?
“শিউলিরে আমার নীল বউ আনছে। আমার অনেক খুশি লাগতাছে৷ আমার ছেলে বিয়ে করছে”।
শিউলির চোখ আলুর মত হয়ে যায়
“সত্যি! নিলয় বিয়ে করছে”?
“কি ভাইয়া বিয়ে করছে”!
” সত্যি”!
কামালের ছেলে মেয়ে রোহান আর হিয়া বলে। রোয়ানের বয়স দশ বছর। আর হিয়ার নয়। তারা ভায়ের খুব ভক্ত। দৌড়ে দরজার কাছে যায়। দেখে সত্যি তার ভাই বিয়ে করেছে। বাচ্চু চৌধুরী তার সহধর্মিণী সাহেরা খাতুন কে নিয়ে কাকুলির সামিনে আসে।
“সত্যি আমার নাতি বউ নিয়া আইছে”?
” জী আব্বা”।
“ওই কে কোথায় আছছ বাজনা বাজা। আমার নাতি বউ নিয়া আইছে। তারাতাড়ি বার হো”।
“কি আমার নাতি বাজনা আলা বউ আনছে। হেডা আবার কেমুন”?
আরিয়া দাদির কাছে তার দুই কাধে হাত দিয়ে বলে
“কি আমার নাতি বাজনা নিয়া আইছে। ও বড় বউ বাজনা দিয়া কি করবো”।
আরিয়া দাদির কাছে আসে দুই হাত কাধ চেপে জোড়ে বলে
“বাজনা না দাদি। বউ। তোমার নাতি বউ নয়া আইছেছেছেছে”।
“চপ। আসতে কো। আমি কি বোয়রা নাকি। যে এতো জুরে কথা কছ”।
সাহেরা খাতুন কানে কম শুনে। একবার বাত জ্বর হয়েছিলো। তার পর থেকেই কানে কম শুনে। যে কথাটা জোরে বলা হয় শুধু সেটায় শোনে।
“কই আমার নাতবউ কো। ও বুলবুলি বরন ডালা নয়া আয়”।
এই বলে সে দরজার কাছে চলে গেলো।

চলবে…
★তোয়ামনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here