নীলমনি পর্ব ৩২

0
127

#নীলমনি
#তোয়ামনি
#পর্বঃ৩২
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ]
নীলমনি ~৩২
কাল রাতে বৃষ্টিতে ভেজার ফল হিসেবে জ্বরে ভুগছে মৌনোতা। ঘড়ির কাটা এগারোটা পার হয়ে গেছে। ও এখনো উঠিনি। নিলয় খুব ভোরে বেরিয়ে গেছে। মৌনোতা সকালে নিচে যাইনি দেখে কাকুলি চৌধুরী এসেছে ছিলো । মৌনোতার শরীর তাপমাত্রা অনুভব হওয়ায় বেশ চিন্তায় পরে যায়। কিভাবে মেয়েটা আবার জ্বর বাধালো। খাবার এনে মৌনোতাকে খাইয়ে দেয়। যদি ও অল্প পরিমান খেয়েছে।
এখন মৌনোতার মাথা টিপে দিচ্ছে। মৌনোতা বারণ করেলে সে তা কানে তুলে না। কাকুলি চৌধুরী মৌনোতাকে বলে ফ্রিজে চালতার আচার আছে নিয়ে আসি। আচার খেলে ভালো লাগবে। মৌনোতা সায় জানায়। কাকুলি চৌধুরী উঠে চলে যায় আচার আনতে।
মাথায় একটু যন্ত্রণা হচ্ছিলো। কাকুলি চৌধুরীর হাতের ছোঁয়ায় তা দূর হয়ে গেছে। মৌনোতা বেল্কনির দিকে চোখ মেলে তাকায়। ভিলনেটা কোথায়। কাল প্রায় একটা পর্যন্ত ওরা ছাদে ছিলো। বৃষ্টি ওদের ভালোবাসার সাক্ষী হিসেবে থেকেছে। নি সুন্দর মূহুর্ত। মৌনোতা মুচকি হাসে।
কাকুলি চৌধুরী আচার নিয়ে আসে। মৌনোতা দুই হাতের ভরসায় উঠে বসে। কাকুলি চৌধুরী পিঠে বালিশ দেয়। আচার খেতে খেতে কাকুলি চৌধুরী বলে নিলয়ের কোন ফ্রেন্ডের নাকি বিয়ে। বাড়ির সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে। মৌনোতা বলে আমাকে কিছু জানাইনি। আচার খাওয়া শেষ হলে কাকুলি চৌধুরী মৌনোতাকে গোসল করতে বলে। গোসল করলে মাথাটা ভালো লাগবে। থ্রিপিস নিয়ে বাথরুমে রেখে আসে। তার পির মৌনোতাকে ধরে বাথরুমে নিয়ে যায়। কাকুলি চৌধুরী বলে আমি দরজার সামনেই বসে আছি দরজা লাগাতে হবে না যদি আবার মাথা ঘুরে। এমনি ভিরানো থাক।
গোসল শেষ হলে কাকুলি চৌধুরী মৌনোতার চুল মুছে দেয়। খাবার নিয়ে এসে খাইয়ে দেয়। তারপর ঔষধ খাইয়ে দিয়ে বলে এখন ঘুম আসতে।
বিকেলের দিকে কাকুলি চৌধুরী মৌনোতার জন্য চিতই পিঠা আর কয়েক ধরনের ভর্তা নিয়ে এসেছে। মেয়েটা জ্বরের দরুণ কিছু খেতে পারছে না ঠিক মত। ঝাল কিছু খেলে ভালো লাগবে। জ্বর একটু কমেছে। কাকুলি চৌধুরী পিঠা নিয়ে আসলে মৌনোতা বলে আরিয়া কে ও নিয়ে আসিতে।
মৌনোতা নিলয়ের কথা ভাবে। ভিলেনটাকি সারা দিনে বাসায় আসি নি। ও ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পাঁচটা ছয় বাযে।
আরিয়া মৌনোতা কাকুলি চৌধুরী মিলে আড্ডা দিচ্ছে। মৌনোতা বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে।
কাকুলি চৌধুরী জিজ্ঞাসা করে ‘এখন কেমন লাগছে শরীর’?
‘হুম আম্মু একটু ভালো। তোমার ছেলে তো সারা দিন আসলো না’?
‘বোধয় কোনো কাজে আটকে গেছে। তোরা খা আমি দেখি তোর দাদুর কিছু লাগবে নাকি’।
‘ভাবি তোমার জ্বরটা আসলো কি ভাবে’?
মৌনোতা কিঞ্চিৎ ইতস্তত বোধ করতে করতে বলে
‘এমনি। জ্বর আসার কোনো কারণ লাগে নাকি’।
‘তবু ও হুট করে আসলো তো তাই বললাম’।
সারা বিকেল মৌনোতা আর আরিয়া গল্প করে কাটায়। কিছুক্ষন আগে মাগরিবের আজান পড়েছে। মৌনোতা বিছানায় শুয়ে রয়েছে। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে মৌনোতা অস্থির নয়নযুগল নিক্ষেপ করে। কাকুলি চৌধুরী এসেছে চা আর হালকা কিছু নাস্তা নিয়ে। ও ভেবেছিলো নিলয় এসেছে। ওর কাছে ফোন ও নেই যে ভিলেনটা কোথায় আছে তার খোজ নিবে। কাকুলি চৌধুরী ওকে উঠিয়ে বসায়। ওর মন্টা ভালো লাগছে না। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও হালকা কিছু খেয়ে আএ খাবে না বলে শুয়ে পড়ে।
দশটা নাগাত বাড়ি ফিরে নিলয়। নিজেকে রিফ্রেশ করার জন্য সে সোজা ফ্রেস হওয়ার জন্য ওয়ারুমে চলে যায়। মাথা মুছতে মুছতে খেয়াল কড়ে মৌনোতা শুয়ে রয়েছে। ও টাওয়েল বারান্দায় মেলে দিয়ে এসে মৌনোতার পাশে বসে। ঠান্ডা হাত মৌনোতার কপালে রহাখতেই চোখ মেলে তাকায় নিলয়। নিলয়কে দেখে যেনো ওর অশান্ত বুকে শান্তির পরশ নেমে আসে। নিলয় শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে
‘কখন এসেছে জ্বর এসেছে’।
মৌনোতা অবাক হয়। নিলয় জানে না ওর জ্বর কখন এসেছে। অবশ্য জানবেই বা কি কররে। নিলয় তো অনেক সকালে বের হয়ে গেছে।
‘রাতে বোধয়। আপনি কখন এসেছেন’?
‘এত একটু আগে৷ খেয়েছো কিছু’?
‘হুম আম্মু খাইয়ে দিছে। আপনি কখন খাবেন ‘?
‘এইতো এখন’।
নিলয় মৌনোতার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বলে
‘ঠিক হয়ে যাবে। এখন ঘুম আসো’।
মৌনোতা কর্নগোচর হয়নি নিলয়ের কথা মূহুর্তের মধ্যে হওয়া ঘটনার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। নিলয় আর কোনো কথা না বারিয়ে চলে যায়। মৌনোতার বুকে টিপ টিপ শব্দ হচ্ছে। ও তা স্পষ্ট শুন্তে পাচ্ছে।
নিলয় খেয়ে রুমে আসে। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেকখে মৌনোতা ঘুমাচ্ছে। ও সেই দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। টেবিলের পাশ থেকে গিটার নিয়ে বেল্কনিতে যায়। ওর মন ভালো করার এই একটা ঔষধ। কি কারনে মন বিষন্ন তা ও ভালো করেই যানে। মানুষ চাইলেও সারা জীবন এক সাথে থাকতে পারে না। মৃত্যুর এই দুনিয়ায় মানুষকে আলাদা হতেই হয়। শত চেষ্টা করেও পর ও একে অপরকে ছেড়ে যেতে হয়। সেটা সন্তান আর মায়ের সম্পর্ক হক কিংবা স্বামী স্ত্রী।
নিলয় গিটার নিয়ে বেল্কনিতে গিয়ে বসে। মৃত্যু ব্যাতিত আর কোনো শক্তি নেই কাউকে কারো থেকে আলাদা করতে। তাহলে জীবনে এমন কিছু পরিস্থিতি কেনো আসে যেটা মৃত্যুর চেয়ে বেশি পীরা দেয়। নিলয় আর কিছু না ভেবে গিটারে সুর তোলে। ভাগ্যের উপরে কেউ যেতে পারে না। যা আছে ভাগ্যে তা তো হবেই।
“যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে
মনে হয় এ দেহে প্রান আছে….”
মৌনোতা যেগেই ছিলো। নিলয়ের কন্ঠ পেয়ে উঠে বসে। ভিলেনটা আজ যেনো কেমন শান্ত ব্যাবহার করছে। ও বিছানা থেকে নেমে বেল্কনিতে যায়। নিলয় চোখ বুজে গান গাইছে। ও সন্তপর্ণে নিলয়ের পাশে বসে। দুই হাটু বুকের সাথে মিশিয়ে হাটুতে থুতনি ঠেকায়।
“যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে
মনে হয় এ দেহে প্রান আছে
বাকিটা সময় যেনো মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথই আঁধার…..”
নিলয় সাউন্ড হোল্ড দিয়ে সুর উৎপন্ন করতে থাকে। চোখ বোজা অবস্থায় আবারো পরের কলি গায়
“ব্যাথার সমাধিতে বসে এ মন
ফোটায় আষাঢ় ফুল
রাশি রাশি
যখন দেখি ওই মুখে হাসি”
(একটু সুর দেয়)।
সপ্ন থেকে আসো নয়নেতে
নয়ন থেকে তুমি সপ্ন হাড়াও
জাগরণে এসে কাছে দাড়াও
যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে
মনে হয় এ দেহে প্রান আছে
বাকিটা সময় যেনো মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথই আঁধার”।
নিলয় গান শেষ করে চোখ মেলে থাকায়। সামনে বসে থাকা রমনীর মন কারা হাসি দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। মৌনোতা লম্বা করে গেসে বলে
‘খুব সুন্দর। উফফ আল্লাহ আপনাকে যে কি ভাবে ই কন্ঠ দিয়েছে। আল্লাহ লাখো কোটি শুকরিয়া’।
নিলয় ওর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
‘উঠতে গেলে কেনো? শরীর তো খারাপ’।
‘আপনার গান শুনে আমার সব রোগ পালিয়েছে’।
নিলয় মলিন হেসে বলে
‘গান শুনে কারো শরীর ভালো হয়?
‘হুম আমার হয়। আপনার গান শুনলে আমার মন শরীর দু’টো ভালো হয়ে যায়’।
‘ও তাই। আচ্ছা চলো এখন রুমে চলো৷ আগে ভালো ভাবে সুস্থ হয়’।
‘আরেকটা প্লিজ’।
‘জি না ম্যাডাম। আগে ভালো ভাবে সেরে উঠো। আর দুই দিন পর আমার এক ফ্রেন্ডের বিয়ে আছে। অনেক কাছের ফ্রেন্ড। যেতে হবে সবাইকে। এই ভাবে অসুস্থ থাকলে তো আর যেতে পারবে না। তো তারাতাড়ি সেরে উঠো’।
‘হ্যা সকালে আম্মু ও বলেছিলো। কিন্তু বিয়েটা কার’?
‘তুমি চিনবে না। নাম নুহাশ। তুনি এখন উঠো’।
চলবে….
®তোয়ামনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here